আমার আর একটি সম্ভাব্য প্রেমের গল্প

736 13 0
                                    

-হ্যালো ! প্লিজ অভি একটু কথা বল ! প্লিজ !
আমি কেবল চুপ করে কানে ফোন টা ধরে রইলাম । কিছু বললাম না । আসলে আমার কিছুই বলার নেই ।
মেয়েটা মনে হয় অভির গার্লফ্রেন্ড । আমাকে অভি মনে করে কথা গুলো বলছে । এই সময়ে কথা বলাটা সমীচিন হবে না । আমার অবশ্য এই কথা গুলো শোনাও উচিৎ না ! এখনই আমার ফোন রেখে দেওয়া উচিত্‍ অথবা মেয়েটার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া উচিত্‍ কিন্তু এর কিছুই করলাম না । কেবল চুপ করে শুনতে লাগলাম মেয়েটা কি বলে ।
মেয়েটা আবার আকুল কন্ঠে বলল
-তুমি এমন কেন করছো বল আমার সাথে ? একটু কথা কেন বল না ! আমার ফোনও ধরো না ! আে আজকে যদিও বা ধরেছ তবুও কথা বলছো না !!
আসলে মেয়েটার কন্ঠে কিছু একটা ছিল । এমন মায়াময় আর মহোনীয় কন্ঠ আমি খুব একটা শুনেছি কিনা আমি জানিও না । কেবল চুপ করে কানে ফোন লাগিয়ে বসে রইলাম ।
একটু যেন অস্বস্তিও লাগছে । মেয়েটার কন্ঠ বুকের ভিতর কেমন একটা আন্দোলন সৃষ্টি করছে । একটু ইচ্ছা করছে মেয়েটার সাথে কথা বলি ! কিন্তু আমি জানি আমার কন্ঠ শুনলেই মেয়েটা আর হয়তো কথা বলবে না ।

এই রকম পরিস্থিতির ভিতর আমাকে পড়তে হত না কিন্তু পড়ে গেছি । আজ ইউনিভার্সিটি থেকে বের হতে হতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল । অবশ্য প্রতিদিনই একটু দেরি যাচ্ছে । আজকে অভির বাসায় গেছিলাম । অভি অবশ্য আমার সাথে কি নাকি কথা আছে । আর কি নাকি পড়াশুনার বিষয় আছে । অভির বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় টিউশনীর কাছে পৌছে গেছি ঠিক তখনই পকেটের মোবাইল বেজে উঠল ।
খানিকটা অপরিচিত রিংটোন তবুও মনে হল মোবাইলটা আমার পকেটেই বাজতেছে । পকেটে হাত দিয়ে দেকি আমার মোবাইলই বাজতেছে ।
নোকিয়া ২৭০০ ক্লাসিকটা ।
মনে মনে ভাবলাম আরে এই রিংটোন আমি আবার লাগালাম কখন ? ফোনটা রিসিভ করতে যাবো ঠিক তখনই আর একটা খটকা লাগল । মোবাইলে কলারের নামটা উঠে আছে নাহিন নামে । আমার খটকা লাগার প্রথম কারন হল নাহিন নামে পরিচিত আমার কেউ নাই । দ্বিতীয় কারনটা হল আমি মোবাইলে সব নাম গুলো বাংলায় সেভ করে রেখেছি । আর এখানে নামটা ইংরেজিতে এসেছে ।
আশ্চর্য !
কিন্তু পরক্ষনেই সব রহস্য বুঝতে পারলাম । আসলে অভির আর আমার দুজনেরই এই একই ২৭০০ ক্লাসিক আছে । তাই মনে হয় আমি আসার সময় ভুল করে ওর সেটাটা নিয়ে এসেছি ।
আমি প্রথম বার নাহিনের ফোনটা রিসিভ করলাম না । কিন্তু যখন পড়াতে শুরু করলাম তখন ফোন আসতেই লাগল ।
একের পর এক !
মনে হল জরুরী কিছু । ফোনটা রিভিভ করে বলতে যাবো যে আমি ভুল করে অভির ফোনটা নিয়ে এসেছি । আপনি দয়াকরে ওর অন্য ফোনে ফোন দেন । কিন্তু কিছু বলার আগেই দেখি এই কাহিনী ।
আমি আবারও ফোনটা রেখে দিলাম । কিন্তু বারবার নাহিনের কথাই ঘুরে ফিরে আসতে লাগলো । মেয়েটার ঐ আকুল কন্ঠটা কানে বাজতে লাগল ।
অভি কি মেয়েটার সাথে কোন প্রকার বিট্রে করতেছে ?
-কে জানে ?
দেখি ফোনটা ফেরত্‍ নেওয়ার সময় ওর কাছ থেকে নাহিনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হবে !
কিন্তু আমার কিছু জিজ্ঞেস করা লাগল না । ফোন দেওয়ার সময় অভি নিজেই আমাকে বলল
-মামা কেউ ফোন দিছিল নাকি ?
-হ্যা !
-কেডা ? কোন মাইয়া ?
-হ্যা । নাহিন নামে ...
-সাড়ছে । তুমি রিসিভ কর নাই তো ?
আমার মনে হল ফোনটা রিসিভ করা উচিত্‍ হয় নাই । আমি বললাম
-না মানে ... বারবার ফোন করছিল তো ! মনে হল জরুরী কিছু । কেন মামা সমস্যা কি ?
-আর কইয়ো না মামা । এই মাইয়ার জ্বালায় আমি পুরাই শেষ । এতো পেইন দেয় । এতো ইমোশনালী ব্ল্যাক মেইল করে আর কি কমু !
-এখন !
-আর ফোনটোন ধরি না । ভাল লাগে না ।
অভি কিছুক্ষন কি যেন ভাবল । তারপর বলল
-তুমি আমারে এর হাত থেকে বাঁচাও । মামা তুমি তো গল্প টল্প লিখো ! এই মাইয়ারে কিছু মিষ্টি মিষ্টি কথা কইবা দেখবা কাম হইয়া যাইবো !
-আরে আমি .....?
-তুমি কয়দিন নাহিনের সাথে কথা তথা বল দেখো মেয়ে পটে যাবে ।
-আরে আমি এসব পারি না ।
-আরে মামা কোন টেনশনই নাই । তুমি প্রথমে ফোন দিবা দেখবা তারপর থেকে এই মাইয়াই ফোন দিবো এই মাইয়াই তোমারে ফোন দিবো !!
আমি না করে দিয়ে চলে এলাম । কিন্তু যতই না করে দিয়ে চলে আসি নাহিনের ঐ মায়াময় কন্ঠস্বরের কথা কিছুতেই মন থেকে দুর হচ্ছিল না ।
কি যে করি !
অভিকে যদিও বলি নি আর কাজটা যদিও ঠিক হয়নি তবুও নাহিনের ফোন নাম্বারটা আমি টুকে রেখেছিলাম ।
যদিও এটা অনৈতিক কাজ তবুও !

রাতের বেলা নিজের মনকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে নাহিনকে ফোন দেওয়া ঠিক হবে না মোটেও । অভি যদি জানতে পারে তাহলে লজ্জার সীমা থাকবে না । অবশ্য অভি নিজেই আমাকে বলেছে যে মেয়েটার সাথে কথা বলতে । সুতরাং খুব বেশি প্রবলেম হওয়ার কথা না । তবুও কেন জানি কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল ।

-হ্যালো ! নাহিন বলছেন ?
-জি ! কে বলছেন ?
-আমি !!
এখন আমি কি বলব ? নিজের নাম বলবো ?? অভি যদি কোন দিন নিজের বন্ধু দের কথা ওর কাছে বলে থাকে ? তাহলে ?
নাহ !
আমি কথা হারিয়ে ফেল্লাম ।
নাহিন আবার বলল
-কে বলছেন ?
আমি বললাম
-আচ্ছা আই এম সরি । আমি রাখি । এতো রাতে ফোন করার জন্য দুঃখিত ।
আমি ফোনটা রেখে দিলাম । ফোন রাখার পর দেখলাম আমার বুকের ভিতরটা কেমন করছে !
না থাক দরকার নাই এই মেয়ের কথা বলার । কিন্তু কিছুক্ষনের ভিতরেই নাহিনের ফোন এসে হাজির । ফোন রিসিভ করবো না করবো না করেও ফোন রিসিভ করেই ফেললাম ।
-কি হল এভাবে ফোন রেখে দিলেন যে !
-না মানে এতো রাতে আপনাকে ফোন করা ঠিক হয় নি ।
-আচ্ছা । তাহলে আপনি অপরাধ করেছেন !
-জি ।
-আচ্ছা এখন বলেন আমাকে কেন ফোন করেছেন ? আর কে আপনি !
-আমি ? আমার নাম সুমন ।
-সুমন ?
-আচ্ছা এখন বলেন আমাকে কিভাবে চিনেন ?
-আমিতো আপনাকে চিনি না ।
-তাহলে কিভাবে আমার নাম জানেন ?
আমি কিছু বলতে পারি না । কেবল চুপ করে থাকি !
-কি হল কথা বলছেন না ?
-আসলে আমি বলতে চাই না আমি কিভাবে আপনার জানতে পেরেছি !
নাহিনও চুক করে রইলো কিছুক্ষন !! তারপর বলল
-আচ্ছা তাহলে বলেন কেন ফোন দিয়েছেন ? এইটা তো বলতে পারবেন ?
তাই তো ??
এই মেয়েকে আমি কেন ফোন দিলাম ? কি কথা বলার জন্য বলার জন্য ফোন দিলাম ?
কে জানে ??
আমি হঠাৎ বললাম
-আপনার মন কি খারাপ অনেক ?
কিছুক্ষন নিরবতা !
-কেন ? এই কথা কেন বলছেন ?
-না এমনি !!
-যে আপনাকে আমার নাম্বার টা দিয়েছে সে কি বলেছে যে আমার মন খারাপ ?
-নাহ !! আসলে আপনার নাম্বারটা কেউ আমাকে দেই নি । আমি একজনের মোবাইল থেকে নিয়েছি !
আবারও কিছুক্ষন নিরবতা !!
-এটা কি ঠিক হয়েছে ?
-জি না ! ঠিক হয় নি ! আচ্ছা আমি রাখি ! আমি আর কোনদিন ডিস্টার্ব করবো না !
আমি ফোনটা কেটে দিলাম ! আসলেই আমার ফোন করা মোটেও উচিৎ হয় নি ! নিজেকে একটা জোরে চড় মারতে ইচ্ছা হল । কেন যে এই কাজটা করতে গেলাম । কোন মানে হয় !

আমি মনে হয় সব কিছু ভুলেই যেতাম কিন্তু নাহিন আমাকে ভুলতে দিল না । পরদিন সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম ! ঘুম ভাঙ্গলো নাহিনের ফোনে !
-গুড মর্নিং !
আমার ঘুম তখনও পুরোপুরি ভাঙ্গেনি !! নারী কন্ঠ শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম ! পরে নাম্বার টা ভাল করে দেখলাম যে এটা নাহিনের নাম্বার !
আমি কোন মতে বললাম
-আপনি ?
-কেন ?
-না মানে আমি ভাবতেই পারি নি যে আপনি ফোন দিবেন !!
-আসলে আপনার সাথে কেন জানি সকাল বেলা কথা বলতে ইচ্ছা করল ! তাই ফোন দিলাম । আপন ঘুমাচ্ছিলেন ?
-হ্যা !!
-আপনার ঘুম ভাঙ্গালাম ?
-না ঠিক আছে ! আসলে আমি ভাবতেই পারছি না যে আপনি আমাকে ফোন করবেন ।
নাহিন খানিকটা নিরবতা রাখলো ! তারপর বলল
-আসলে আপনার উপর খাননিকটা রাগ হয়েছিল প্রথমে ! কিন্তু পরে কেন জানি আর রাগ থাকে নাই !! আমার সাধারনত এমন টা হয় না । আমার ইমোশন সব সময় খুব প্রখর ! রাগ করলে সহজে ভাঙ্গে না । কাল যখন শুনলাম যে আপনি আমার নাম্বারটা একজনের মোবাইল থেকে নিয়েছেন তখন খুব রাগ হয়েছিল । কিন্তু আপনি যখন সব সত্যি কথা নিজেই স্বীকার করে ফেললেন তখন ভাল লাগলো ! তাই মনে হল আপনার সাথে কিছু কথা বলি !
-ধন্যবাদ !!
-কাল রাতে আপনার কথা অনেক ভেবেছি !!
-আমার কথা ?
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না !! এই মেয়ে আমার কথা কেন ভাববে ? আশ্চর্য !!
আমি আমার বললাম
-আপনি আমার কথা ভেবেছেন ? মার দেওয়ার কথা ভাবেন নি তো ?
নাহিনের হাসির শব্দ পেলাম ।
-প্রথমে ভেবেছিলাম । কিন্তু পরে সেটা আর ভাবি নি !
-যাক ! বাঁচলাম ! মেয়েদের হাতে মার খাওয়া খুব বেশি সুখের কথা না !!
নাহিন কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-আসলে কেবল একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি । ভাবলাম নির্ঘুম রাতে আজ অন্য কিছু নিয়ে ভাবি ! আপনার কথা ভাবলাম !!
-কি ভাবলেন ?
আবারও নিরবতা কিছুক্ষন !
-না শুনলে হয় না !
-হয় ! হবে না কেন ?
-আচ্ছা আপনি মনে হয় আরো ঘুমাবেন আমি পরে আবার ফোন দিবো ! ভাল থাকবেন !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে গেল । আমি ঠিক কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । আবার ফোন দিবো কিনা বুঝতে পারছি না !
না থাক ! ফোন দিয়ে লাভ নাই ! ফোন দিলে আবার জিনিসটা কেমন হয় কে জানে !


-আমার সাথে দেখা করবে ?
নাহিনের কথা শুনে আমি মনে মনে খুশিও হলাম ! যাক এতো দিন পরে নাহিনের সাথে তাহলে দেখা হতে চলেছে ।
ঐ দিনের পরে নাহিনের সাথে আমার যোগাযোগ হতে থাকে নিয়মিত । আপনি থেকে তুমি, অপরিচিত থেকে বন্ধু, বন্ধু থেকে ভাল বন্ধু তারপর ভাল বন্ধু থেকে আরো ভাল বন্ধু হতে সময় খুব লাগে নি !
অবশ্য সব থেকে বেশি কাজে লেগেছে আমার ব্লগের লেখা গুলো ! প্রথম প্রথম মনে করতাম ও আসলে আমার গল্প গুলো কেবল এমনিতেই পড়ছে । পরিচিত বলে বলছে ভাল । কিন্তু কিছু দিন যাবার পর লক্ষ্য করলাম নাহিন আসলেই গল্প গুলো পড়ছে । ও যখন আমার গল্প নিয়ে কথা বলতো সেই কথা শুনেই বুঝা যেত !

আমি বললাম
-আমার সাথে দেখা করবে !
-হুম !
-আমাকে দেখলে তোমার আর আমার সাথে কথা বলতে মন চাইবে না ।
-তোমাকে আমি ফেসবুকে দেখেছি না !!
-ফেসবুক আর বাস্তব কি আর এক হল ?
-কেন তুমি তোমার আসল ছবি দাও নি ?
-না, তা দিয়েছি !!!
-তাহলে ?? আর চেহারাটা কি খুব বেশি জরুরী ?
আমি আর কথা বাড়াই না ! চুপ করে থাকি !

কদিন পরেই নাহিনের সাথে দেখা হবে এই কথাটা ভাবতেই ভাল লাগছে । দেখা যাক সামনে কি হয় !!  

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Where stories live. Discover now