সেলস গার্ল প্যাপি

578 24 3
                                    

-এই যে প্যাপি ? এই !
আমার ডাক শুনে মেয়েটি দাড়িয়ে পড়ল । আসলে আমাদের চোখাচোখি আগেই হয়েছিল । মেয়েটি রিক্সা করে আসতে ছিল আর আমি যাচ্ছিলাম ! মেয়েটির একটা ভাব ছিল আমাকে এড়িয়ে চলে যাবে কিন্তু আমি সেই সুযোগ দিলাম না মেয়েটাকে । ভদ্রতা জন্যই মেয়েটি রিক্সা থামালো ।
আমি বিস্তৃত হাসি নিয়ে মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম
-মিস প্যাপি ?
মেয়েটির মুখ কেমন বিষন্ন হয়ে গেল । আমার খানিকটা অবাকই হলাম । কোন মেয়ের নাম ধরে ডাকলে মেয়েটির মুখ বিষন্ন হয়ে যায় এটা কেমন জানি বেমানান । আমি যতদুর জানি মেয়েরা বিশেষ করে সুন্দর মেয়েরা অন্যের মুখে নিজের নাম শুনতে পছন্দ করে । কিন্তু এই প্যাপি নিজের নাম শুনলেই কেমন মন মরা হয়ে যায় !
সেদিনও ঠিক এই ব্যাপারটাই লক্ষ্য করেছিলাম ।
আমার মায়ের বড় ইচ্ছা হল তার ছেলেকে নিয়ে বাজার করা । মানে আমাকে নিয়ে তার কাঁচা বাজার করা, সপিং করা খুবই পছন্দ ! নিজে ঘুরে ঘরে বাজার করবে আমাকে তার পিছন পিছন ঘুরতে হবে । কেউ যখন তার কাছে আমার কথা জানতে চাইবে তখন আমার কথা বলবে । বলবে আমি তার ছেলে । সম্প্রতি চাকরী পেয়েছি । এখন আমার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি !
আমার বড় লজ্জা লজ্জা লাগে । কিন্তু কিছু করার নাই । মায়ের ইচ্ছা ।
আর আমার কথা বলতে যদি তার ভাল লাগে তাহলে বলুক না । আমার নিজেরও তো মায়ের আনন্দময় মুখটা দেখতে ভাল লাগে ।
যাই হোক গত সপ্তাহে বাড়ির কাছের মীনা বাজারে মাকে নিয়ে কেনাকাটা করছিলাম । কেনাকাটা শেষে যখন কাউন্টারে টাকা দিতে এলাম তখনই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম । একটু যেন আনাড়ি । সাধারনত কাউন্টারে যারা থাকে তারা একটু চটপটে হয়ে থাকে । কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখলাম বেশ আনাড়ি । মনে হয় নতুন এসেছে । আর মেয়েটাকে একটু বিব্রতও মনে হল ।
যখন সব হিসাব পত্র শেষে মেয়েটি একটা পেমেন্ট রিসিট দিল তখনই দেখলাম রিসিটের একদম শেষে মেয়েটির নাম লেখা রয়েছে ।
প্যাপি ?
মেয়েটার চেহারার সাথে নামটা কেন জানি ঠিক যাচ্ছে না । টাকা দেওয়ার সময় মুখ ফসকে আমি বলেই ফেললাম
-আপনার নাম প্যাপি ?
মেয়েটির মুখ কেমন যেন বিষন্ন হয়ে গেল । আর কিছু জানতে চাইলাম না । যদিও জানতে ইচ্ছা করছিল ! কেবল টাকা দিয়ে বের হয়ে এলাম মা কে নিয়ে ।
এর পরে আরো দুই দিন গেছি মীনা বাজারে ! সত্যি বলতে কি মেয়েটাকে দেখতেই গেছি ! টুকটাক কেনা কাটা করেছি আর মেয়েটার বিব্রত মুখ দেখেছি ! মেয়েটির সব কিছুই আমার পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই নামটা কেন জানি পছন্দ হয় নি !
আর আমার কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটার নিজেও এই নামটা বিশেষ পছন্দ না !
আজকেও প্যাপি নামটা নেওয়াতে মেয়েটার মুখটা কেমন বিষন্নই হল । সমস্যা কি ? তাহলে আমার ধারনাই মনে হয় ঠিক ! মেয়েটির নিজের নাম পছন্দ না !
আমি রিক্সার সামনে দাড়িয়ে মেয়েটির দিকে আবারও হাসি দিলাম ।
-ভাল আছেন ?
মেয়েটি আস্তে করে বলল
-জি ।
-আজকে ডিউটি নেই ।
-জি । ওখানেই যাচ্ছি ।
-তাই নাকি ? চলুন আমিও ঐ দিকে যাচ্ছি । একসাথেই যাওয়া যাক ।
এই কথা বলেই আমি রিক্সায় উঠে বসলাম । তারপর রিক্সায়ালাকে বললাম
-চলেন মামা ।
রিক্সা চলতে শুরু করল । যদিও জানি এই ভাবে যে কোন মেয়ের রিক্সায় চট করে উঠে পড়া যায় না কিন্তু মেয়েটার অপ্রস্তুত ভাবটা আমার কাছে খুব ভাল লাগছিল । আর কেন জানি মেয়েটির সাথে একটু কথাও বলতে মন চাইছিল ।

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Where stories live. Discover now