বাসর রাতে আমি আর..........

2K 37 1
                                    

-বাবু দরজাটা একটু খোল বাবু ।
নিশি দরজার ওপাশ থেকেই বলল
-তোমাকে না বলেছি আমাকে বাবু বলে ডাকবা না ।
-আচ্ছা পাখি , টিয়াপাখি আমার । দরজাটা একটু খোল । আজকে আমাদের বাসর রাত দরজা বন্ধ করে রাখলে কেমন করে হবে !
আমি জানি নিশি এখন রাগে ফুসছে । রাগ হলে ওর মাথা ঠিক থাকে না ।
-শোন তানভীর ঢং করবা না । তোমার উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে । মন বলছে থাপ্পড় দিয়ে তোমার দাত ফেলে দেই ।
-আচ্ছা যা ইচ্ছা তাই কর । কিন্তু দরজাটাতো খুলবে । দরজা না খুলে থাপ্পর দিবা কিভাবে ?
আমার মনে ক্ষীন আশা যে ও আমার কথাতে আরো রেগে যাবে আর দরজা খুলে সত্যি সত্যিই আমাকে থাপ্ড়াতে আসবে । কিন্তু ওরকম কিছু হল না ।
আমি আর দাড়িয়ে থাকলাম না । নিশি এখন যেহেতু রেগে আছে, এখন কিছু না বলাই ভাল । রাগ কমে গেলে ও নিজেই দরজা খুলে দিবে ।
আমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম । সোফাটা বেশ নরম মনে হচ্ছে । মামুন সাহেব বেশ ভালই খরচ করেছে ফ্লাট টার উপরে ।
এই ফ্লাটটাতে আজ মামুন সাহেবের সাথে নিশির বাসর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে আমার সাথে ।
মামুন মিয়া এতো বোকা হবে বুঝতে পারি নি । আমি কি চম‍ৎকার সুযোগ করে দিলাম কিন্তু বেটা বেকুব সুযোগটা কাজে লাগাল না ।
ভালবাসায় ভালবাসার মানুষটাকে পাওয়াই হল মূখ্য বিষয় ।
কিন্তু সত্যিই তাই ?
মামুন সাহেব নিশিকে সত্যিই ভালবেসেছিল তাই নিশির সুখটাই বেশি জরুরী ছিল ।
আমার কাছেও তো নিশির সুখটাই বেশি জরুরী ছিল । আমি মনে করেছিলাম মামুনের সাথেই নিশি বেশি সুখে থাকবে । তাই মামুন কে সুযোগ করে দিয়েছিলাম ।

মামুন নিশির খালাত ভাই । নিশির জন্য পাগল । নিশির বাসা থেকে যখন নিশির জন্য পাত্র দেখা শুরু করল স্বাভাবিক ভাবেই আমার থেকে মামুনকেই বেশি যোগ্য বলে মনে হল ।
আর হবেই বা না কেন ? আমার থেকে সব দিক থেকেই মামুন সাহেব বেশি যোগ্য ।
কেবল একটা দিক থেকেই আমি এগিয়ে । সেটা হল নিশি আমাকে ভালবাসে । মেয়েটা সত্যি আমাকে ভালবাসে । তাই তো এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে আনতে মন চাইছিল না ।
আমিও তো ওকে ভালবাসি । সত্যিই তাই । কি করে ওকে আমার মত একটা ভবঘুরের সাথে বিয়ে হতে দেই !
সেই তুলনায় মামুন সাহেব অনেক বেশি যোগ্য ।
তাই মামুন সাহেবের সাথে একটা ডিল করলাম । আমার সব কথা শুনে মামুন সাহেব বেশ অবাক হলেন ! বললেন
-আপনি এমনটা কেন করতে চাইছেন ?
আমি ঠিক মত জানি না আমি কেন এমনটা করতে চাইছি । বললাম
-আপনি ওকে অনেক ভালবাসেন ! আপনি ওকে অনেক সুখি রাখতে পারবেন ।
মামুন আমার দিকে খানিক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনিও তো ওকে অনেক ভালবাসেন । তাহলে ? আপনি কি ওকে সুখি রাখতে পারবেন না ?
আমি প্রশ্নটা এড়িয়ে বললাম
-মামুন সাহেব জীবনে টাকা পয়সা অনেক প্রয়োজন । অনেক বেশি প্রয়োজন । টাকা ছাড়া জীবনে সব কিছু কেমন অর্থহীন হয়ে পরে !!

আমি মোটামুটি সিওর ছিলাম যে মামুন আমার অফার লুফে নিবে ! নিশি কে বিয়ে করার এমন সুযোগ করে দিচ্ছি ! ডিলটা এমন কিছু না । আমি কিছু দিনের জন্য নিশি জীবন থেকে গায়েব হয়ে যাবো ! মামুন সাহেব নিশিকে গিয়ে বলবে যে আমি ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিশির পথ ছেড়ে দিয়েচি মামুনের জন্য ! প্রমানের জন্য আমার সই করা একটা কাগজ দেখাবে !
আমি জানি মেয়েরা এই দুইটা জিনিস কখনও সহ্য করতে পারে না । এক হল তার ভালবাসার মানুষ কে অন্য কোন মেয়ের সাথে শেয়ার করা আর যখন তারই প্রিয় মানুষটা টাকার জন্য তার সাথে প্রতারণা করে !
আমি নিশির কাছ থেকে দুরে দুরে থাকতে লাগলাম ।পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম ! কিন্তু একদিন ও আমাকে খুজে বের করেই ফেলল !
আমি সারা জীবনই জানি নিশি খুব রাগি । একবার রাগ উঠলে আর কিছু হুশ থাকে না । আমার ভয় হচ্ছিল কি না কি করে ফেলে ! যদি চড়টড় মেরে বসে !! কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে !
তবে দেখলাম নিশি বেশ শান্তই ছিল । তবে ওর চোখ দুটো কেন জানি আগুনে রমত লাল ছিল । ধক ধক করে জ্বলছিল যেন !
আমি ওর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না । নিশি বলল
-আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন ? লজ্জায় ?
আমি কোন কথা বললাম না । নিশি আবার বলল
-তোমার তাহলে লজ্জা আছে ?? আসলে বাবা ঠিকই বলেছিল ! গরীব মানুষ গুলো টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে ! আমারই ভুল হয়েছে ! বাবার কঠা শোনা উচিৎ ছিল । সমস্যা নাই খুব বেশি দেরি হয় নি । নিশি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো ।
তারপর নিশি ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে বলল
-এটা আামর বিয়ের কার্ড ! তোমাকে কেবল এই জন্য খুজছিলাম । আমার বিয়ের কার্ডটা দেবার জন্য । তবে বিয়ে আবার নির্লজ্জের মত এসে পর না যেন !!
নিশি যখন চলে যাচ্ছিল কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল । একবার মনে হচ্ছিল চিৎকার করে বলি যে.......... থাক ! কি হবে ??
ও তো সুখে থাকুক !!
দেখালম নিশি নিজেই ঘুরে দাড়ালো । বলল
-আমি তোমাকে দেখাতে চাই তমার মত মানুষের কোন স্থান নাই আমার জীবনে ! এটা তুমি দেখ..।
ঐদিন রাতে আমার একফোটাও ঘুম আসে নি । বুকের ভিতর কেন যেন একটা কষ্ট হচ্ছিল । সবাই বলে স্যাকরিফাইস করলে নাকি ভাল লাগে , তাহলে আমার কষ্ট হচ্ছিল কেন!!

আজকে নিশির বিয়ে হবার কথা ছিল মামুন সাহেবের সাথে !! কাল শেষ রাতের দিকে কয়েকটা ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম । মরার জন্য না । ভেবেছিলাম পুরোটা দিন আমি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবো । কিন্তু দুপুরের দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গতেই হল ! চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিল ।কোন মতে চোখ খুলে দেখলাম বিয়ের সাজে নিশি আমার সামনে দাড়ি !
একবার মনে হল স্বপ্ন দেখছি ।
স্বপ্নের কথা ভাবছি ঠিক এমন সময় একটা চড় এসে আমার গালে লাগলো !
নাহ ! স্বপ্ন তো দেখছি না । তাহলে তো ব্যাথা লাগার কথা না !
চড় খেয়ে আামর ঘুম মোটামুটি কেটে গেছে ! ভাল করে তাকিয়ে দেকি সত্যি নিশি আমার সামনে বসে আমার খাটের উপর । আর দরজার কাছে মামুন সাহেব দাড়িয়ে !
আমি ভাবলাম বিয়ে হয়ে গেছে ! আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছে !
কি রে ভাই বিয়ে করেছ ভাল কথা !
আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছো তাও ভাল কথা !
কিন্তু চড় মারার কি দরকার ?
বললাম
-মারলে কেন?
নিশি কোন কথা বলল না কেবল রাগে ফুঁসতে থাকলো ! ওর চোখ দেখেই আমি খানিকটা শঙ্কিত বোধ করলাম !
মামুন সাহেব বলল
-বেশি কথা বারিয়েন না !
আমার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল
-এই পাঞ্জাবীটা পরে তৈরি হয়ে নিন !
-কেন?
-আরে আশ্চর্য গেঞ্জি পরে বিয়ে করবেন নাকি ?
-মানে?
মামুন সাহেব হাসলো । আমি নিশি দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা আরো লাল হয়ে গেছে !
-তানভীর সাহেব আমি নিশি কে সব কিছু বলে দিয়েছি !
-সেকি!!! কেন??
এবার আমার সত্যি খানিকটা ভয় লাগলো ! নিশির রাগের কারনটা আমি বুঝতে পারলাম ।
আমি চুপচাপ তৈরি হয়ে নিলাম । সব কিছু রেডিই ছিল আমাদের বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের পর, মামুন সাহেব এই ফ্লাটে আমাদের রেখে চলে গেলেন ! আমি মামুন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কি কারনে সে সব কিছু নিশিকে বলে দিল !
মামুন বলল
-আপনি যে কাজটা করতে চেয়েছেন আমিও ঠিক একই কাজটা করেছি ! ও কখনই আমার সাথে পরিপুর্ন সুখি হত না ! আপনাকে ও কখনই ভুলে যেত না ! ভুলতে পারতোও না ! আমি ওকে যতই ভালবাসি না কেন, সারা জীবন ও কেবল আপনার কথা মনে করে কষ্ট পেত !
আমি কি বলবো বুজতে পারছিলাম না । মামুন আবার বলল
-আর সত্যটা এক না এক দিন ও জেনে যেতই !! তখন কি হত বলুন !!

আমি আমার বসেই আছি সোফার উপরে ! আর ভাবছি কিভাবে আজকের সারাদিন গেল ! সারা দিন তো গেল বুঝলাম । কিন্তু সারা রাত কিভাবে যাবে তাই ভাবছি !
যদি নিশি সারা রাত দরজা না খুলে !! এই মেয়েটা এমন করতেও পারে ! মানুষ কত বাসর রাতের গল্প করে ! আমি কি বলবো মানুষের কাছে ?
বলবো যে বাসে রাতে আমার বউ আমাকে ঘরে ঢুকতেই দেই নি ! সারা রাত ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছে !!
এমন কথা ভাবছি এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হল !!
কিন্তু নিশি বের হয়ে এল না ।
যাক দরজা তো খুলেছে !
কিন্তু খানিকটা সঙ্কা তো হচ্ছেই !! না জানি নিশি কি বলে!!
তবুও বুকে ভরে নিশ্বাস নিয়ে ঐ ঘরের দিকে হাটা দিলাম । আর যাই হোক আজ এমন দিনে নিশি খুব বেশিক্ষন রাগ করে থাকতে পারবে না !   

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora