নিহিন আর আমার গল্প

1.1K 29 0
                                    

 নিহিনের মুখ টা কেমন বিষন্ন মনে হল । অন্যান্য দিনে ওর চেহারায় যে উজ্জলতা থাকে আজ তার ছিটে ফোটাও নাই । কেমন মুখ অন্ধকার করে বসে আছে ।
নিহিনকে হাসিখুশি অবস্থায়ই ভাল লাগে খুব । এমন একটা প্রানবন্ত মেয়ে যদি মুখ অন্ধকার করে বসে থাকে তাহলে কি ভাল লাগে ? কিন্তু আমি কারনটা জিজ্ঞেস করতে পারছি না । কারন আমার জানা । আমার কারনেই ও এমন ভাবে বসে আছে । বললাম
-কোন কথা বলবে নাকি এরকম চুপ করেই থাকবে ?
-কেন আমার পাশে বসে থাকতে ভাল লাগছে না ? এখন তো ভাল লাগবেই না । আমিতো পুরানো হয়ে গেছি ।
-আরে এটা কি ধরনের হল ?
নিহিন আমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে বলল
-তাহলে কাল রাতে তুমি ঐ কথা কেন বললা ? কেন বললা বল ?
আমি কি জবাব ? আমিই কেবল জানি আমি কেন বলেছি !
আমি বললাম
-চল বাইরে যাই । এখানে অনেক ভীড় ! চল মিন্টু রোডে যাই । চা খেয়ে আসি ।
নিহিনের চোখের তীব্রতা খানিকটা কমল । চুপচাপ উঠে দাড়াল ।
-চল ।
নিহিন কে ভাল করে দেখলাম এতোক্ষনে । আমার আগেই এসে বসে ছিলতো তাই ভাল করে দেখতে পারি নি !
নিহিনের পছন্দের পোষাক । কালো জিন্সের সাথে কালো টিশার্ট ! সাথে ধবধবে সাদা স্কার্ফ !

প্রথমদিন ঠিক পোষাকটাতেই দেখেছিলাম ওকে ! সেদিন টিউশনীতে গিয়েছিলাম । আমার ছাত্রের বাসা ছতলায় । আমি লিফটের মধ্যে ঢুকে ছয় বাটনে চাপ দিলাম । লিফটের দরজা বন্ধ হবে ঠিক এমন সময় কালো টিশার্ট আর কালো জিন্স পরা একটা মেয়ে লিফটের দিকে স্টপ স্টপ বলতে বলতে দৌড়ে আসছে ।
আমি লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকালাম । মেয়েটা কেমন উড়তে উড়তে লিফটের মধ্যে ঢুকে পরল । দরজা বন্ধ হতেই মেয়েটা চার নম্বর বাটন চাপল । বুঝলাম মেয়েটা বাড়িয়ালার মেয়ে ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-থ্যাঙ্কিউ ।
আমি কোন মতে একটু হাসার চেষ্টা করলাম । ভেবেছিলাম আর কোন কথা হবে না কিন্তু মেয়েটা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করল
-ছয় তলায় যাবেন ?
-জি !
আমার গলার স্বর আমার কাছেই যেন কেমন মনে হল । ঠিক বুঝলাম না এমন কেন হচ্ছে । আসলে মেয়েদের সাথে ঠিক মত কথা বলার অভ্যাস নাই তো তাই হয়তো এমন হচ্ছে ।
-ছতলায় থাকেন আপনি ?
-জি না । টিউশনী ।
-ও !
মেয়েটা হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ততক্ষনে চারতলায় পৌছে গেছে লিফট । মেয়েটা একটু হেসে লিফট থেকে বের হয়ে গেল ।

নিহিন আস্তে আস্তে হাটছিল । আমি বললাম
-রিক্সা নেবো?
-কেন আমার পাশে হাটতে ভাল লাগছে না ?
নাহ । আজকে এই মেয়েটার কি হয়েছে ? এমন ভাবে কথা কেন বলছে ! আক্রমনের মনভাব প্রতিটা কথায় !! বললাম
-মিন্টুরোড এখান থেকে বেশ খানিকটা দুরে । তোমার হাটতে কষ্ট হবে ।
-আচ্ছা আমার হাটতে কষ্ট হবে এটা তুমি দেখতে পাচ্ছো আর কাল যে তুমি আমাকে কষ্ট দিলে সেটার কিছুর হবে না ।
আমি কি বলবো ? নিহিন বার বার ঐ একই কথা বলছে । বললাম
-নিহিন প্লিজ ঐ কথাটা আর বল না । তোমার কি মনে হচ্ছে আমি কথাটা ইচ্ছে করে বলেছি ?
-তাহলে কেন বলেছো ? বল ।

আমি ভেবেছিলাম ঐ দিনের পর মেয়েটার সাথে আমার আর দেখা হবে না কিন্তু দেখা হল ঐ দিনই আবার দেখা হল । টিউশনী থেকে বের হয়ে লিফট ঢুকতে যাবো মেয়েটাকে আবার দেখতে পেলাম । ছাদ থেকে নামছে ।
বাসাটা ছয়তালায় । আর লিফটটা এই ছয়তলা পর্যন্ত আছে , ছাদ পর্যন্ত যায় নি । মেয়েটা নিশ্চই ছাদে গিয়েছিল হাওয়া খেতে !
আমি আগে মেয়েটাকে ঢুকতে দিলাম লিফটে ।
-আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল !
এই বলে মেয়েটা হাসল ।
আমিও একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা চার তলা নেমে যাবে , কিন্তু নামল না । আমার সাথে নিচ তলা পর্যন্ত নেমে এল । আমি যখন লিফট থেকে বের হতে যাবো তখন মেয়েটা বলল
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে !
আশ্চর্যের বিষয় ! ঠিক একই কথা যেন আমার মনে হচ্ছিল । মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হবে ! কিন্তু মেয়েটাকে তো আর এই কথা বলতে পারলাম না ।
লিফট থেকে বের হয়ে মেয়েটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আমি নিহিন !
হাত ধরবো ? মনে মনে বললাম ! মনের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হল ! একটা মেয়ের হাত ধরবো ?

নিহিন মিন্টু রোড়ের ফুট পাট ধরে ! আমি ওর পাশাপাশি হাটছি । নিহিনের মুখটা যেমন গম্ভীর ছিল তেমনটা আর নাই । ওখান কেমন একটা আনন্দের আভা দেখা যাচ্ছে ওর চেহারায় ! আসলে এই মিন্টু রোডটা আমার যেমন প্রিয় ওর ও তেমন প্রিয় । আমরা প্রায় দিনে এই রাস্তায় হেটে বেড়াতাম । গল্প করতাম । বিশেষ করে ডিবি অফিসের সামনে যে চায়ের দোকানটা আছে, ওখানকার চায়ের দোকানের চা ওর খুব পছন্দ ।
আমার মনে প্রথম যেদিন ওর সাথে এখানে চা খেতে এসেছিলাম । একে বারে হঠাৎ‍ করেই । আমি টিউশনী থেকে বের হচ্ছিলাম । গেট দিয়ে বের হতে যাবো ঠিক তখনই দেখলাম নিহিনের গাড়ী গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে ।
আমার দিকে চোখ পড়তেই নিহিন মিষ্টি করে হাসল । আমি হাসলাম । ঐদিন লিফটের ভিতরে দেখা হবার পর প্রায় দিনই আমাদের দেখা হয়ে যেত ! টিউশনীতে ঢোকার অথবা বের হবার সময় ।
একদিন তো আলবেইকের মধ্যে দেখা হয়ে গেছিল ।
প্রতিবারই একটু হাসি দুএকটা কথা হত । ভেবেছিলাম নিহিন হযতো গাড়ি থেকে নামবে না । কিন্তু নিহিন গাড়ি থেকে চট করে নেমে পড়ল । আমাকে বলল
-বাসায় যাচ্ছেন বুঝি ?
-জি ।
-আমি মনে মনে আপনাকেই খুজতেছিলাম ।
আমি অবাক হলাম ওর কথায় ! নিহিনের মত একটা মেয়ে আমাকে খুজছে ! এটা খানিকটা অবিশ্বাস্য ! হয়তো বলেছে কেবল কথার কথা ! নিহিন বলল
-এখনই কি বাসায় চলে যাবেন ?
না সমস্যা নাই !
-তাহলে চলুন চা খেয়ে আসি !
-চা ??
নাহ এই মেয়েটার আচরন খানিকটা অদ্ভুদই !! সাধারনত মেয়েরা এমন আচরন করে না ! কিন্তু এই মেয়েটা করছে ! আর আমার প্রতি বেশ ভালই আগ্রহ দেখাচ্ছে !
কিন্তু কেন ??
নিহিন যখন আমাকে এই মিন্টু রোডে নিয়ে এল আমি ঠি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না ঢাকার মত শহরে এমন একটা জায়গা আছে !! নিহিন বলল যে এখানে সব ভিআইপি লোকরা থাকে ! তাই এমন সুন্দর জায়গাটা !!
ঐদিনই নিহিন আমার মোবাইল নাম্বার নিলো ! দুজনের মাঝে অনেক কথা হল !!
সত্যি বলতে কি ওমন সুন্দর একটা রাস্তায় নিহিনের মট মেয়ের পাশাপাশি বসতে কি পরিমান ভাল যে লাগছিল !! মনে হচ্ছি যেন আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি !
যখন আমি বাসায় আসলাম বুঝলাম যে আমি নিহিনের প্রেমে পরেছি!
এবং খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করলাম বিষয় টা । নিহিন মেয়েটা এই কয়দিনে আমার মনের মাঝে একটা দৃঢ় আসন নিয়ে বসেছে ! আমি আমার মন থেকে কিছু তেই ওকে দুর করতে পারছি না ।   

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora