মেয়েটি বলল "আমার বন্ধু হবে?

623 21 2
                                    

নিহিন মোটামুতি নিশ্চিত যে আজ ছেলেটা আসবে । হুম আসবেই । এক সময় মনে হত হয়তো এসব ওর মনে কল্পনা যে কিন্তু ও পরীক্ষা করে দেখেছে !
ঠিক যেদিন ওর মন খারাপ থাকে ঠিক সেদিন বিকালে ছেলেটা এসে হাজির হয় । প্রথম যেদিন ছেলেটাকে দেখে সেদিন নিহিনের মন অসম্ভব রকমের খারাপ ছিল । নিহিনের মায়ের সেদিন প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী ছিল ।
সকাল থেকে আকাশটা কেমন মেঘলা ছিল । দুপুরের পরপরই ঝুম বৃষ্টি নামে । নিহিনের মনে হচ্ছিল যেন ওর মন খারাপের জন্য পুরো আকাশ ওর সাথে সাথে কাঁদছে । জানালার ধারে বসে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিল একভাবে । তখনই ছেলেটাকে প্রথম দেখে ।
কালো রংয়ের একটা ছাতি মাথায় দিয়ে হেটে যাচ্ছে । বৃষ্টির কারনে প্যান্ট হাটু পর্যন্ত গোটানো । খুব সাধারন ভাবেই হেটে যাচ্ছিল । নিহিনের হয়তো মনেও থাকতো না ছেলেটার কথা । আর ছাতির কারনে ছেলেটাকে খুব ভাল করে দেখাও যাচ্ছিল না ।
ঠিক তখন কোথা থেকে একটা ফুটবল এসে লাগল ছেলেটার পায়ে । বৃষ্টি হলেই ঢাকার রাস্তায় এরকম বল নিয়ে প্রায় টোকাই গোছের ছেলেরা ফুটবল খেলে । নিহিন ভেবেছিল যে ছেলেটা হয়তো বলটা পাস করে দিবে ।
কিন্তু ছেলেটা তা করল না । প্রথমে ছাতি মাথায় দিয়েই ছেলে গুলোর সাথে ফুটবল খেলতে লাগল । তারপর নিহিন কে আরো একটু অবাক করে দিয়ে ছেলেটা ছাতিটা ফেলে দিয়ে টোকাই গুলোর সাথে ফুটবল খেলতে লাগল !
নিহিনের ধারনায় ছিল না এমন একটা কাজ কেউ করতে পারে !
ছেলেটাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কম করে হলেও বিশ-বাইশ বছর বয়স হবে আর পোষাক আষাকও তো মনে হচ্ছে ভাল ঘরের । এমন একজন ছেলে বৃষ্টির ভিতর এতোগুলা পিচ্চির পোলাপাইনের সাথে এভাবে লাফা লাফি করতে পারে এটা নিহিনের মাথায় আসে নি ।
নিহিন অনেকক্ষন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল । বিশেষ করে ছেলেটার মুখের দিকে ।
কি হাস্যজ্জল একটা মুখ !
ছেলেটা নিশ্চই অনেক হাসিখুশি আর সুখী মানুষ ।
মুখটা তা না হলে উজ্জল হত না । নিহিন ছেলেটার লাফালাফি দেখতে লাগল । এবং একসময় আবিষ্কার করলো নিহিনের মন ভাল ভাল হয়ে গেছে ।
ঐ রাতে নিহিন ছেলেটার কথা অনেক ভাবল । চোখের সামনে বারবারই কেবল ছেলেটার হাসি মাখা মুখ ভেসে আসছিল ।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ও নিজেই জানে না ।
অনেকদিন পর খুব শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিল সেদিন ।
ছেলেটাকে ২য় বার দেখে তারও মাস খানেক পর । ঐ দিন নিহিনের মন খারাপ ছিল ওর একুরিয়ামের সব মাছ গুলো কি কারনে সব মরে সাফ !!! কত যত্ন করে পালন করা মাছ গুলো । ঐ দিনও নিহিন মন খারাপ করে জানালার পাশে বসে ছিল । এমন সময় ছেলেটাকে আবার দেখা গেল । কাধে একটা ব্যাগ । আপন মনেই হাটছিল হাটছিল ।
নিহিন লক্ষ্য করলো ছেলেটাকে দেখে ওর বুকের ভিতর কেমন একটা আলাদা অনুভূতি হচ্ছে ।
ছেলেটা হঠাত্‍ থেমে পড়ল । কিছু একটা দেখেছে যেন । তারপর গাছের আড়াল থেকে কিছু একটা বের করে আনল ।
একটু ভাল করে লক্ষ্য করতেই নিহিন দেখল একটা বিড়ালের বাচ্চা । নিশ্চই কিছু হয়েছে বাচ্চাটার । ছেলেটা বাচ্চাটাকে নিয়ে ফুটপাতের উপর বসে পড়ল ।
তারপর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে খুব যত্ন সহকারে বাচ্চাটাকে পানি খাওয়াল । আরো কি কি যেন খাওয়ার । নিহিন একভাবে তাকিয়েই রইল ছেলেটার দিকে । ছেলেটার আচরনে একটু হলেও অবাক হয়েছে । রাস্তার ধারের বসে এমন কাজ করে নাকি কেউ ! ছেলেটা মনটা নিশ্চই অনেক নরম । তা না হলে রাস্তার একটা বিড়ালকে এমন আদর করে !
বিড়ালটা একটু নড়াচড়া করলে ছেলেটা ওটাকে আবার আগের জায়গায় রেখে চলে গেল ।
ছেলেটা চলে যাবার পরপর ই নিহিন রাস্তা থেকে বিড়ালের বাচ্চাটা তুলে নিয়ে এল । কি কারনে কাজটা করলো নিহিন নিজেই জানে না ।

প্রথমে নিহিনের নিজের কাজেই ব্যপারটা অবাক লাগত ! কিন্তু পরপর ছয়বার ছেলেটার সাথে দেখা হল তখন ওর মনে খানিকটা কৌতুহল জেগেই উঠল । নিহিন কেবলই ওর মন খারাপের দিন গুলোতেই হাজির হয় ! মন খারাপের দিন গুলোতে হাজির হয়ে এমন কিছু কাজ করে যেটা দেখে নিহিনের মন ভাল হয়ে যায় ।
আচ্ছা ছেলেটা কি জেনে শুনেই এমন করে ?
নাহ !
ধারনাটা বাতিল করে দিল ও । ছেলেটা হয়তো জানেও না যে নিহিন নামের কোন মেয়ে এই বাড়িতে আছে ।
আর জানলেই বা কি ?
নিহিনের কবে মন খারাপ থাকে এটা নিশ্চই জানার কথা না । যে দিন নিহিনের মন ভাল থাকে ছেলেটা সেদিন আসে না । নিহিন সারা দিন অপেক্ষা করে দেখেছে কিন্তু ছেলেটার কোন দেখা মেলে নি । তাহলে এটা কি শুধুই কাকতালীও ব্যপার ?
হয়তো হবে !
কিন্তু নিহিনের মনে হয় ছেলেটার সাথে ওর একটা কিছু কানেকশন অবশ্যই আছে !
তাই আজ ঠিক করেই রেখেছে ছেলেটা এলে ছেলেটার সাথে কথা বলবে । কিন্তু ছেলেটা আজ আসবে তো ?
ছেলেটা সাধারনত বিকেল বেলাতেই আসে । বিকেল তো হয়ে এল কিন্তু ছেলেটার তো দেখা নেই ।
কালকের মত আজও কি আসবে না ছেলেটা । কালকে ঐ অবশ্য নিহিনের মন খারাপ ছিল তবে কালকে মন খারাপ হয়েছিল বিকেলের পরে । আর ছেলেটা আসে সাধারনত বিকেলের দিকেই ।
তাই নিহিনের মনে হয়েছে যে ছেলেটা আসবে না ।
আসেও নি ।
কিন্তু আজকেও কি আসবে না ছেলেটা ?
আরো কিছুক্ষন সময় যাওয়ার পর নিহিনের সত্যি সত্যি মনে হল যে ছেলেটা আজকে আসবে না । ও এতো দিন যা ভেবেছে তার কিছুই সত্য না ।
স্রেপ ওর মনের কল্পনা ।
সত্যিই তো এমনটা কি কখনও হয় নি ।
কেবল ভাগ্য ক্রমে মিলে গেছে !
আর কিছু না । নিহিনের মনটা আর বেশি খারাপ হয় । জানলার ধার থেকে উঠে যাবে কিনা ভাবছে ঠিক এমন সময় ছেলেটাকে দেখতে পেল ।
ইস !
ছেলেটাকে দেখেই নিহিনের বুকের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হল । তাহলে কি সত্যি ?
আজ ছেলেটার সাথে কথা বলতেই হবে । গেটের দাড়োয়ান কে বলাই ছিল , নিহিন কেবল ইশারা করে দিল ।


টিউশনীতে যেতে হলে অপুকে পরীবাগের সোজা রাস্তাটা দিয়েই যেতে হয় । মিন্টু রোড দিয়ে গেলে একটু বেশি ঘুরে যেতে হয় । কিন্তু আজ অপু কেন জানি এই মিন্টু রোডের রাস্তার দিকেই পা বাড়াল ।
খুব একটা এই রাস্তা দিয়ে আসা হয় না ।
কিন্তু হঠাত্‍ হঠাত্‍ এই রাস্তা দিয়ে যেতে ইচ্ছা করে ওর । কেন করে কে জানে ?
অবশ্য মিন্টু রোডের এই রাস্তাটা খুবই চমত্‍কার । এখান দিয়ে হাটলে মজাই লাগে । কেমন একটা নিরিবিলি ভাব আছে । ঢাকার অন্য রাস্তা গুলো মত না ।
আর হবেই না কেন ?
এখানে ঢাকার সব বড় বড় সরকারী লোকেরা থাকে । এই রাস্তা দিয়ে আসার অবশ্য আরো একটা কারন আছে ।
মিন্টু রোডের ৩৭ নম্বর বাড়িতে একটা মেয়ে থাকে । ও যখনই আসে তখনই মেয়েটাকে জানালার পাশে বসে থাকতে দেখে ।
চেহারায় কেমন একটা বিষন্ন ভাব সব সময় থাকে । অপুর মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে মন খারাপের কারনটা জানতে ।
কিন্তু সেটা কিছুতেই সম্ভব না ।
মেয়েটা এই এলাকাতে থাকে তার মানে নিশ্চই কোন ভিআইপি লোকের মেয়ে । বাড়ির সামনে সব সময় পুলিশ পাহারা থাকে । কথা বলার তো উপায় নাই ।
আজও যখন ৩৭ নাম্বার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একবার ফিরে তাকাল আড় চোখে ! ভাল করে তাকানোর উপায় নাই ।
পুলিশের এলাকা । ধরে মাইর দিতে পারে !

অপু আরো কয়েকবার খুজলো । কিন্তু মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পেল না । আজ কি তাহলে মেয়েটা বসে নেই । একটু যেন মন খারাপ হল অপুর ।
৩৭ নং বাড়িটা পার হয়ে একটু সামনে এসেছে এমন সময় পেছন থেকে ওকে কেউ ডাক দিল ।
একটু অবাক হবার কথা । অপু একটু অবাক হল । ঢাকা শহরে ওকে পেছন থেকে ডাকার মত কেউ কেই । তাও আবার মিন্টু রোডের মত এলাকায় ।
পিছনে তাকিয়ে দেখে একজন পুলিশ !
পুলিশ !!
একটু ভয় পেল যেন !
-আমাকে ডাকছেন?
-এদিকে আসেন । 

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Hikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin