রোদসীর বিশেষ দিন !!

695 21 0
                                    

  রোদসীর আজ খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙ্গেছে ! এতো সকালবেলা সাধারনত ওর ঘুম ভাঙ্গে না । প্রতিদিনই রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে বেশ দেরি হয় । দেরীটা হয় ফাজিল তানভীরটার জন্য !
ফাজিল তানভীর !
আপন মনেই হাসল রোদসী । এমন হয়ে গেছ যে রাতের বেলা তানভীরের সাথে কথা না বলতে পারলে রোদসীর ভাল লাগে না । আর একবার কথা শুরু করলে তো আর শেষ হবার নাই । কত কথা যে বলার আছে ছেলেটাকে ! কেবলই যেন বলতে ইচ্তছা করে !!
তবে কাল রাতে তানভীরের সাথে ওর কথা হয় নি । কথাটা ভাবতেই রোদসীর মনটা খারাপ হয়ে গেল । আজ এমন একটা বিশেষ দিন তানভীর ওকে ফোন দিল না এটা ভাবতেই রোদসীর কান্না পেতে লাগল ।
আচ্ছা কোন রিলেশনে প্রবলেম হয় না ?
একটু আধটু মান অভিমান তো হয় । আর মান অভিমান না থাকলে তো রিলেশন কেমন একরকম বিবর্ণ হয়ে যায় । কিন্তু এমন একটা দিনেও কি অভিমান করে থাকতে হবে !
একটু কি আগে ফোন দেওয়া যেত না ?
সরি না হয় বলত একটু কথা বললেই রোদসীর সব রাগ ভেঙ্গে যেত । কিন্তু না সাহেবের কোন খোজ নেই !
ঠিক আছে দেখি
রোদসী ভাবে
কে রাগ করে থাকতে পারে.....?
কিন্তু পরক্ষনে মনে হয় না থাক !! এভাবে রাগ করে থাকতে গেলে আবার জানি কি না কি হয় ?

দুইদিন আগের কথা । রোদসীর ঐ দিন কেন জানি তানভীরের সাথে খুব দেখা করতে মন চাইছিল । রোদসীর এমনটা মাঝে মাঝেই মনে হয় । তখন কেবলই তানভীরের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করে ।
ওর দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে ওর হাত ধরে থাকতে ইচ্ছা করে !
কিন্তু ভানভীর কে পাওয়া গেল না । রোদসী যখন তানভীরকে ফোন দিল তানভীর তখন খুব ব্যস্ত । কথা বলার সময় নাই । তুও ওর ফোন তো রিসিভ করতেই হবে তানভীরের ।
-কি ব্যাপার পাখি ? আমি তো ব্যস্ত পরে কথা বলি ?
রোদসী বাচ্চা মেয়ের মত চিৎকার করে বলল
-নাআআআআ । আমি এখন কথা বলবো ।
-একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা ঠিক আছে বিকেল বেলা আমার সাথে দেখা কর ।
-না পাখি । বিকেল বেলাও পারবো না । সন্ধ্যার পর একটু দেখা হতে পারে । তবুও খুব বেশি সময় না ।
-কিন্তু আমার যে তোমার সাথে খুব দেখা করতে ইচ্ছা করছে । কত দিন তোমাকে দেখি না ! কত দিন তোমার হাত ধরি না !
তানভীর একটু হাসল ।
-কি বললে ? কতদিন!!! গতকালই না দেখা হল ।
-একদিন কি কম সময় ?
-আচ্ছা ঠিক আছে । সন্ধ্যার পর । কেমন ?
রোদসী বিকেল থাকতে থাকতেই টিএসসিতে হাজির হয়ে গেল । ফ্রেন্ডেদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া যাবে তারপর না হয় তানভীরের সাথে দেখা করা যাবে । বন্ধুদের সাথে গল্পই করছিল ঠিক তখনই ও তানভীরকে দেখতে পায় । রিক্সা করে যাচ্ছে । পাশে অন্য একটা মেয়ে ।
রোদসীর মাথায় যেন আগুন ধরে গেল ।
এই তাহলে ব্যস্ত তা !
ইচ্ছা হল তখনই ফোন দিয়ে তানভীরকে এখানে ডেকে আনতে কিন্তু রোদসী চুপ করে বসে থাকলো আর রাগে ফুলতে লাগল ।
সন্ধ্যার পর যখন তানভীর এল তখন রোদসীর রাগ দেখে কে ! তানভীর বলল
-জানো আজকে এতো ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন ! একটুও দম ফেলার সময় ছিল না । একবার এখান থেকে ওখানে যাও আবার ওখান থেকে ...
-কাজ করছিলে নাকি রিক্সায় করে মেয়েদের সাথে ফুর্তি করে বেরাচ্ছিলে ?
রোদসীর কন্ঠের গাম্বীর্য দেখে তানভীর একটু যেন বিশ্মিত হল ।
-মানে ?
-মানে বোঝনা, না ? আমার সাথে দেখা করার সময় নাই তোমার । ঐ মেয়েটার সাথে রিক্সায় চড়ার খুব সময় আছে ।
-রোদসী যেটা তুমি জানবে না সেটা নিয়ে কথা বলবে না । তুমি জানো ঐ মেয়েটা কে ?
-আমার তো কোন দরকার নাই জানার ।
-আরে ও আমার ক্লাসমেট । আমার প্রোজেক্ট পার্টনার । আজকে সব কাজ তো ওর সাথেই ছিল ।
এই কথাটা শুনে রোদসী যেন আরো রেগে গেল । ওর কেবল বারবার মনে হতে লাগল তানভীর ওকে বাদ দিয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিল । তানভীর ওর থেকে ঐ মেয়েটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । এই ভাবনাটা রোদসীর সহ্যই হল না ।
-ও আচ্ছা ! ভাল । যাও তাহলে ঐ মেয়ে সাথেই সময় কাটাও গে । আমার সাথে থাকার দরকার নাই ।
এই বলে রোদসী উঠে দাড়াল । তানভীর ওর হাত ধরে থামাতে চাইল কিন্তু রোদসী এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিল । বলল
-খবরদার হাত ধরবা না । আর ফার্দার আমাকে ফোন দিবা না ।
তানভীর বলল
-তুমি কিন্তু অযথা রাগ করছো ! তুমি যদি এখন চলে যাও আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে ফোন দিব না !
-আমাকে তোমা রফোন দেওয়া লাগবে না । তোমার ঐ প্রোজেক্ট পার্টনার কেই ফোন দিও !!
তারপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ ! মাঝখানে একটা মত্রদিন গেছে কিন্তু রোদসীর মনে হচ্ছে যেন কত কাল তানভীরের সাথে কথা বলে না !
আচ্ছা ও কি সে দিন বেশি রিএক্ট করে ফেলেছিল !
আসলে তানভীরের পাশে অন্য কোন মেয়ে ও একদম শ্যই করতে পারে না ! এটা কি ওর দোষ ?
ওকে বেশি ভালবাসে বলেই তো এমনটা মনে হয় !! তানভীরের একটা বিন্দও ও কারো সাথে শেয়ার করতে রাজী নয় ।
রোদসীর কেবল মনে হয় তানভীর কেবল তার !!
কিন্তু এমনটা তো আর না । সমাজে থাকতে হলে অনেক কিছু কম্পমাইজ করে চলতে হয় । অনেক নিয়ম মেনে নিতে হয় ।
রোদসী ঘর ছেড়ে বারান্ডায় আসলো । বাইরে এখনও খুব বেশি আলো ফোটে নি ! একবার মনে আছে তানভীরের সাথে কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে গেল ! সেই দিন ঠিক এমন সময়েই ও বাইরে এসেছিল । তানভিরের সাথে কথা বলছিল আর বাইরের সকাল হওয়া দেখছিল ।
আচ্ছা এখন কি তানভীর কে একটা ফোন দেওয়া যায় ?
ও আপন মনে ভাবলো ?
ও নিশ্চই ঘুমাচ্ছে এখন ?
ফোন করে যদি বলা হয় হ্যাপি এনিভার্সারী ! ও নিশ্চই খুশি হবে !!
দেখতে দেখতে কেমন করে দুই বছর পার হয়ে গেল । ভাবতেই অবাক লাগে ওর । কেমন মনে হয় যেন এইতো সেদিন তানভীরে ওকে প্রোপজ করলো !
ঐদিন আসলেই খুব মজা হয়েছিল । রোদসী খুব ভাল করেই জানতো যে তানভীর ওকে প্রোপজ করবে কিন্তু এমন একটা ভাব যেন কিছুই জানে না ।
বেচারা কি নার্ভাসই না হয়ে গিয়েছিল । বারবার ঢোক গিলছিল ! আর কথা আটকে যাচ্ছিল !
ঐদিনে তানভীরের চেহারাটা কল্পনা করতেই এক চিলতে হাসি দেখা দিল রোদসীর মুখে ।
নাহ !
ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে । আর বসে থেকে লাভ নাই । তানভীর কে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিল ও ! বারান্দায় বসেই ফোন দিল !
তানভীর ফোন রিসিভ করার পরও কোন কথা বলল না ।
রাগ কি করে আছে এখনও ?
ওর কি মনে নাই আজকের কথা ?
-তানভীর !!
-বল !
-আজ আজকের দিনের জন্য আমরা রাগটাকে অন্য জাগায় রাখি !
-কেন ? আজ কি কোন বিশেষ দিন ?
যতটা আগ্রহ নিয়ে তানভীর কে ফোন দিয়েছিল মনটা ততটাই খারাপ হয়ে গেল । তানভীরের মনে নাই !!
রোদসী আর কোন কথা খুজে পেল না । কি বলবে ? আর কেনই বা বলবে ??
-আচ্ছা আমি রাখি !!
-আরে দাড়াও ! এখনই রেখে দিবে । এতো দিন পরে ফোন দিলা একটু কথা বলি !
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তানভীর বলল
-তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো ?
-কি ?
-বারান্দা দিয়ে সোজা তাকাও !
-মানে?
-মানে মুখটা তুলে তাকাও !
রোদসী তাকালো ।
ওর ঠিক মনে পরলো না এর থেকে আর আনন্দের মুহূর্ত ওর জীবনে এসেছে কিনা ?
তানভীর ঠি ওর বারান্দা সোজাসুজি দাড়িয়ে আছে । হাতে এক গুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ ফুল ।
তানভীর বলল
-তুমি কিভাবে ভাবলে আমি এভাবে এই দিন আমি ভুলে যাবো ?
রোদসী আর কিছি ভাবতে পারছে না । এই ছেলেটা কখন থেকে একখানে দাড়িয়ে আছে কে জানে !! দাড়িয়ে আছে কেবল ওর জন্য ! আর ও ছেলেতার সাথে কি ব্যব হারটাই না করেছে !
আর না অনেক হয়েছে । রোদসীর কেল মনে হল আর যদি একটা মুহুর্তও ও তানভীরের কাছ থেকে দুরে থাকে তাহলে ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।
বারান্দা থেকে সোজা ও দরজার দিকে দৌড় দিল । যে করেই হোক ওকে তানভীরের কাছে পৌছাতেই হবে ।  

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora