আমি কি ধরাটাই না খেলাম !!

1K 27 0
                                    

-ক্যান ইউ ডু মি এ ফেভার প্লিজ ?
নিজের মনেই ছিলাম চোখ বুজে । খানিকটা বিরক্তও ছিল । মিষ্টি একটা কণ্ঠ শুনে চোখ খুলতে হল ।
তাকিয়ে দেখি মিষ্টি কন্ঠের মালিক ভাল করে বলতে গেলে কণ্ঠের মালিকের চেহারা তার কন্ঠ থেকে অনেক বেশি মিষ্টি । আমার মনে পড়ল না এমন মিষ্টি চেহারার মেয়ে আমি খুব একটা দেখেছি কিনা !
-জি বলুন ।
-আমার আসলে জানলার পাশে না বসলে ঠিক শান্তি লাগে না । ইফ ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি প্রোবলেম ক্যান উই এক্সচেইঞ্জ আওয়ার সিটস ?
আহা কি মধুর বানী ! এমন মিষ্টির মেয়ের অনুরোধ কি ফেলে দেওয়া যায় ? আমি বললাম
-না ঠিক কোন সমস্যা নাই । আপনি বসতে পারেন ।
আমি আমার জানালার পাশের সিটটা মেয়েটার জন্য ছেড়ে দিলাম । বাস জার্নির পুরোটা সময় এই মেয়েটা আমার পাশে বসে যাবে এটা ভাবতেই মনটা ভাল গেল ।
দিপুর উপর খুব বিরক্ত ছিলাম । এখন দিপুকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে । দিপুই আমার জন্য এই গাড়িতে সিট বুক করেছে ।
কদিন থেকে পরিবারের সবার উপরেই আমি খুব বেশি বিরক্ত হয়ে আছি । মা ফোন করলেই বলে বিয়ে কর ।
বিয়ে করবি কবে ? তাড়াতাড়ি বউ আন । তারপর ছোট ভাই দিপু মার কথার সাথে সায় লাগালো । সেও বলছে বিয়ে করতে ।
আরে তুই তো আমার ছোট ভাই , তোর তো বোঝা উচিত্‍ যে আমি কেন বিয়ে করতে চাই না । কে বল সেধে সেধে নিজের গলায় বেড়ি পড়াতে চায় । এখন আছি কত চমৎ‍কার কত স্বাধীন বিয়ে করলেই সব খতম !
বউ বলবে
-এটা কর
-ওটা কর
-এটা করলে কেন
-ওটা করলা না কেন ?
এই কেনোর উত্তর দিতে দিতে আমার জান খতম হয়ে যাবে ! কি দরকার বাপু এসব ঝামেলার !
আমার এক ভার্সিটির বন্ধু , জাকির নাম । আমাদের ইউনিভার্সিটির হিরো ছিল । কি সুন্দর নায়কের মত চেহারা ছিল ।
কয়েক মাস আগে দেখা হয়েছিল । আমিতো প্রথমে চিনতেই পারি নি । মনে হচ্চে পঞ্চাশ বছরের বুড়ো । এতো গুলো প্রশ্ল নিয়ে ওর দিকে তাকালাম । ও কেবল বলল দোস্ত বিয়ে করেছি রে !
ওই একটা লাইন ই ও এমন ভাবে বলল যে আমার আর কিছু বোঝার বাকি রইলো না । আর আমি সেই গলায় ফাঁসি পড়তেই এবার বাড়ি যাচ্ছি ।
না গিয়ে কোন উপায়ও ছিল না । বাবা ফোন করে কড়া করে বলেছে এবার যদি বিয়ে না করি তাহলে ভুলে যাওয়া হবে যে আমি ঐ বাড়ির ছেশে ।
কি করবো আর ? যত বড়ই হই না কেন বাপের উপর কথা বলার সাহস এখনও হয় নি !!

-কি বলেন ভাইয়া গাড়ি থেকে নামবো কিভাবে? গাড়ি তো ফেরি তে উঠে গেছে !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম ! মেয়েটা ফোনে কথা বলছে ! তরতাজা মিথ্যা কথা বলছে !
আমাদের গাড়ি এখনও ছাড়েই নি আর এই মেয়ে বলছে কিনা ফেরীতে উঠে গেছে !
সমস্যা কি এই মেয়ের ?
তারপর আরো কিছু বলল তার সব গুলাই ডাহা মিথ্যা কথা ! এই মেয়েটা এতো মিথ্যা কথা কেমনে বলটাছে?
মেয়েটি ফোন রেখে আমার দিকে তাকালো ! আমার মুখে তখনও মনে হয় অবাক হওয়ার বিষয়টা লেগেছিল । আসলে আমার ঠিক মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে এতো সুন্দর একটা মেয়ে এভাবে অকপটে মিথ্যা কথা বলতে পারে !
আমার মুখের প্রকাশ ভঙ্গিতে মনে হয় কিছু ছিল, মেয়েটা খানিকটা কৈফতের সুরে বলল
-আসলে আমার বস ? আজ অফিস যাইনি তো তাই !
-ঠিক আছে ! কিন্তু তাই বলে এভাবে মিথ্যা বলা তো ঠিক না ! তাকে কারনটা বুঝিয়ে বললেই হত !
মেয়েটি আমার কথায় মনে হল খানিকটা লজ্জা পেল । তবে মেয়েটা আমার পাশে বসাতে প্রথমে যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম এখন আর তেমনটা লাগছে না ! এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা না বসলেই হয়তো ভাল হত !!
-বাসায় যাচ্ছেন বুঝি !!
-হুম !
ভেবেছিলাম মেয়েটার সাথে বেশি কথা বলবো না । যে মেয়ে এছো সুন্দর করে অকপটে মিথ্যা বলতে পারে সে মেয়ের কাছ থেকে দুরে থাকাই ভাল !!
-আমিও বাসায় যাচ্ছি ! অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয় না । জানেন আমার মা না অনেক সুন্দর করে পায়েস রান্না করতে পারে । কাল রাতে আমাকে ফোন করে বলল যে আজ পায়েস রান্না করবে । আমি খুব পছন্দ করি তো ! তাই আমার কাছে দুঃখ করছিল । অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয় না তো তাই !!
-ও আচ্ছা !!
-এই জন্য বাসায় যাচ্ছি । মাকে সারপ্রাইজ দিবো । হঠাৎ বাসায় হাজির হয়ে বলব মা পায়েস দাও ! কেমন হবে বলুন তো ? আমি জানেন আরো কি ঠি রে রেখেছি.........
আমি মেয়েটার কথা বলার ক্ষমতা দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না !! আামর সাথে পরিচয় হয়ে কয়েক মিনিটও হয় নি আর এমন ভাবে কথা বলছে যেন কত দিনের পরিচিত আমরা !!
সুন্দরী মেয়েদের মাথায় যে বুদ্ধি একটু কম থাকে টা তো আগেই জানতাম, তাই বলে হবে ??
চেনা নাই জানা নাই একজনের সাথে এমন খেজুরে আলাপ করতে হবে !!
আরে তোর মা ভাল পায়েস রান্না করতে পারে ভাল কথা একথা আমাকে বলার কি হল !!
বুঝলাম এই মেয়ে সারা রাস্তা আমার মাথা খারাপ করে দিবে !!
তবে একটা কথা মানতেই হবে যে মেয়েটা সুন্দরী হলে অহংকারী না ! মেয়েটার হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে !
এটা একটা ভাল দিক !
আমাদের অফিসে একটা মেয়ে আছে । বসের ভাতিজি । দেখতে ভাল । মেয়েটার তাতেই কি ভাব !! অহংকারে যেন মাটিতেই পড়ে না । আর এমন বাকা বাকা কথা বলে !! মাঝে মাঝে এমন মেজাজ খারাপ হয় !
আমার মতে যে মেয়ে গুলো নিজেদের রুপ নিয়ে অহংকার করে তাদের মত বেকুব আর দুনিয়াতে নাই !! তারা এমন একটা জিনিস নিয়ে গর্ব করে যেটাতে তাদের কোন হাত নেই !
একটা মেয়ে সুন্দরী হবে নাকি অসুন্দরী হবে এটা কেবল উপরওয়ালা ঠিক করে । যারা উপরয়ালা বিশ্বাস করে করে তারাও বলবে তাই । মেয়েটা সুন্দরী হবে কি না তা নির্ভর করবে তার বাবা মার ডিএনএ এর উপর ।
তাহলে যে জিনিসটার উপর টোর কোন হাতই নাই তুই সেটা নিয়ে কেমন করে অহংকার করিস !! এরকম মেয়েদের সকাল বিকাল নিয়ম করে থাপড়ানো দরকার !
বেয়ুকুফ লারকি !!
যাক অন্য কথা চিন্তা করে লাভ নাই । মেয়েটার ভিতর কোন অহংকার নাই কি না অথবা মেয়েটার এমন সহজ ভাবে কথা বলে দেখে কি না তাও জানি না মেয়েটাকে ভাল লেগে গেল !
মেয়েটা তখনও কথা বলেই যাচ্ছে !!
-আপনার নাম কি ?
-জি!!!??
কথার মাঝখানে বাধা পেয়ে মেয়েটা ঠিক বুঝলো না আমি কি বললাম !
মেয়েটি আাবর বলল
-কি বললেন?
-বললাম আপনার নাম কি ?
-ও !
মেয়েটা হাসলো !
-আামর নাম রীদি ! আপনার ?
-আমি অপু । সর্ট ফর্ম ! 

বুক পকেটের গল্পরা (ভলিউম ০২)Where stories live. Discover now