#12

101 9 0
                                    

#এক_টুকরো_মেঘ
#মেহেরুন_নেছা_হিতৈষী

পর্ব ১২

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নামছে। চারিদিকে পাখিরা কিচিরমিচির করে ডাকছে, যে যার নীড়ে ফিরে যাচ্ছে৷ আজানের শব্দে মুখরিত হয়ে গেছে চারিপাশ।
শিহাব মাগরিবের নামাজটা পড়ে চেয়ার টেনে বাড়ির ছোট্ট উঠানে বসলো৷ গ্রামের ভেতরে চট করে রাত নেমে যায়৷ হাতে জ্বলন্ত সিগারেটটা নিগে আকাশের একফালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকলো শিহাব। হঠাৎই কারো পায়ের শব্দে মাথা নামিয়ে ফেললো।
রুকাইয়া চা নিয়ে এসেছে। শিহাব হাতে থাকা আধপোড়া সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো। হাত বাড়িয়ে চা নিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনের অজান্তেই সরি বলে উঠলো।
রুকাইয়া একটু থতমত খেয়ে শিহাবের দিকে তাকালো।
" সরি কেনো?"
" ওইযে সিগারেট খাচ্ছিলাম..... "
কথাটা শেষ করার আগেই শিহাব বুঝতে পারলো তার একটু ভুল হয়েছে। চাঁদের আলোয় কিছুক্ষণের জন্য সে রুকাইয়াকে আড়াল ভেবেছিলো।
ভুল ভাঙতেই নিজেকে সামলে নিলো শিহাব।
" না কিছু না। বাদ দাও৷ "
রুকাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার একটু মাথাটা তুলে ভালো করে রুকাইয়ার দিকে তাকালো শিহাব৷।
বেশ লম্বা মেয়েটি। চুলগুলো একদম হাটু অব্দি লম্বা আর অনেক ঘন। প্রথম দিকে এত লম্বা চুল দেখে বিশ্বাসই করেনি এটা আসল চুল৷ গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরের অল্প শিক্ষিতা মেয়ে হলেও আচার আচরণ, আদব কায়দা খুবই ভালো মেয়েটার। সব কিছুর সাথে সাথেই উজার করে ভালোবাসাটাও মাঝেমধ্যে মনে স্পর্শ করে শিহাবের। বৌয়ের সম্পুর্ণ মর্যাদা দিলেও মনের ভেতরে কখনো জায়গা দিতে পারেনি মেয়েটাকে৷ অথচ মেয়েটা! সবকিছু জেনেও সবটা বুঝেও কষ্ট করে সবটা গুছিয়ে নিয়েছে। একা হাতে শিহাবকে সুস্থ করে তুলেছে, নতুন জীবন দিয়েছে। হাজারো অত্যাচার সহ্য করেছে।
রুকাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিহাব জিজ্ঞাসা করলো,
" কিছু বলবে?"
শিহাবের গলার স্বর শুনেই যেন রুকাইয়া কাঁপতে শুরু করলো। শিহাব জানে রুকাইয়া তাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসলেও অদ্ভুত রকমের ভয় পায়৷ যদিও এত কারণ এখনো অজানা তার কাছে।
হাতে থাকা খালি চায়ের কাপটা পাশের টেবিলে রেখে নিজে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো শিহাব। রুকাইয়ার দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে নিজে মাটিতে আধ বসা হয়ে রুকাইয়ার হাটুর উপরে হাত রেখে ওর দিকে তাকালো৷ গায়ের রঙ একটু শ্যামলা হলেও চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে বড্ড বেশিই মায়াবী লাগছে। হালকা বাতাসে লম্বা চুলগুলো উড়তে শুরু করতেই রুকাইয়া দ্রুত হাতে খোলা চুলগুলো পেচিয়ে খোপা করে আবার মাথা নিচু করে ফেললো।
" কি বলবে? বলো আমাকে!"
" একটা কথা...,আসলে...."
একটু আমতা আমতা করতে করতে বলতে শুরু করলো রুকাইয়া,
" আসলে আমি কখনো ঢাকার বইমেলায় যাই নি। তুমি তো বই পড়তে অনেক পছন্দ করো, আর আমিও৷ যদি একবার..... . '
" ওকে ডান। আমরা এবার ঢাকা বইমেলায় যাচ্ছি। "'
একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে শিহাব কথাটা বলেই হেসে ফেললো। রুকাইয়ার বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেলো। বড় বড় চোখ নিয়ে শিহাবের দিকে তাকালো যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর।
শিহাব বউয়ের এমব অবস্থা দেখে মজা করে সুর করে গান গাইতে শুরু করলো,
'' কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, 
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক। 
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে 
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ। 
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, 
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে। 
কালো? তা সে যতই কালো হোক, 
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।''
রুকাইয়া ভীষণ লজ্জা পেয়ে দ্রুত পায়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো। শিহাব জানে মেয়েটা এখন বেশকিছুক্ষণ পাশের ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে। ব্যাপারটা ভেবেই শিহাব হেসে ফেললো আর নিজের মত গাইতে থাকলো,
'' ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে 
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই, 
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে 
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই। 
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু 
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু। 
কালো? তা সে যতই কালো হোক, 
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ''

এক টুকরো মেঘ (Completed✔)Where stories live. Discover now