#এক_টুকরো_মেঘ
#মেহেরুন_নেছা_হিতৈষীপর্ব ২
♣
আজকের আকাশটা বেশ পরিষ্কার। একদম রোদ ঝলমলে একটা দিন। হালকা হালকা বাতাস বইছে চারিদিকে৷ এমন দিনগুলো দেখলেই যেন মনটা ভালো হয়ে যায়। শরীর মন দুটোই বেশ সুস্থ সুস্থ লাগে৷ আজ বেশ বেলা করেই উঠেছে শিহাব। গত রাতে শরীরটা বেশ যন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে এমন একটা সুন্দর সকাল দেখেই আগের রাতের সবটা যন্ত্রণা যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেলো৷ সকালের নাস্তা খেয়ে বাগানে পাতা চেয়ারটায় বসে আকাশ দেখছিলো শিহাব।
শিহাবদের বাড়িটা ছোটখাটো ধরনের এক তলা বাড়ি৷ ছোট ছোট রুম করা। বাড়ির সামনে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখা। যেখানে শিহাবের বউ রুকাইয়া বেশ যত্ন করে গাছ গাছালি লাগিয়ে ছোট্ট বাগান মত করেছে।
শিহাব বাগানে বসে আকাশের দিকে তাকিয়েই হঠাৎ করে বলে উঠলো,
' দাঁড়িয়ে না থেকে এক কাপ চা দাও।'
রুকাইয়া বরাবরের মতই বেশ চমকে গেলো। দরজার পাশ থেকে সড়ে দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো। শিহাব জানে চা এক্ষুনি এসে পরবে। কারণ চায়ের পানি চুলায় দিয়েই রুকাইয়া লুকিয়ে তাকে দেখছিলো৷ এই কাজটা রুকাইয়া প্রায়ই করে৷ আর প্রতিবারই শিহাব এভাবে মেয়েটিকে চমকে দেয়। তবে আজব ব্যাপার, নিয়মিত ঘটা এই ঘটনায় রুকাইয়া বেশ ভালই চমকে যায়। একদম প্রথম দিন যেভাবে চমকাতো, এখনো ঠিক সেভাবে। মেয়েটা বেশ ভয় পায় শিহাবকে। আবার বড্ড ভালোওবাসে।
একটু পরেই শিহাব নুপুরের আওয়াজ পেলো,
' তোমার চা।'
চা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে দিতেই রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো শিহাব,
' তুমি রোজ রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখো সেটা আমি জানি। আর তাই তোমাকে চা কফি দিতে বলি। এটা তো পুরোনো ঘটনা হয়ে গেছে৷ কিন্তু তবুও তুমি এত চমকে যাও কেনো বলোতো?'
শিহাব প্রশ্নটা করে বুঝতে পারলো কাজটা ঠিক হয়নি। কারণ প্রশ্ন শুনে রুকাইয়া রীতিমতো কাঁপছে৷ যেন যেকোনো সময় পরে যাবে।
' কী ব্যাপার? এত কাঁপছো কেনো? এখানে বসো তো!'
' না..না না মানে... ইয়ে.. '
রুকাইয়া প্রচন্ড রকম নার্ভাস হয়ে গেছে। এটাও শিহাবের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা৷ শিহাব রুকাইয়ার সাথে বেশিরভাগ সময়ই বেশ চড়া গলায় কথা বলে৷ সাংসারিক সম্পর্ক থাকলেও মন থেকে কখনোই শিহাব রুকাইয়াকে মেনে নিতে পারেনি। বিয়ের রাতেই জানিয়ে দিয়েছিলো, ভালোবাসা ছাড়া সব কিছুই দিতে পারবে সে। কথাটা শুনে মেয়েটা শুধু মাথা নেড়ে গেছে৷ আর আজ এতগুলো বছর ধরে এই ঘর বাড়ি সংসার সবটাই মেয়েটা সামলে আসছে।
নিজের গলার স্বরটা একটু নামিয়ে রুকাইয়ার কাঁপতে থাকা হাতদুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে আসতে করে জানতে চাইলো শিহাব,
' কথা বলছো না যে?'
এবার যেন রুকাইয়া বেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলো। মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো,
' তোমার বুকের ব্যাথাটা কি আবার হয়েছিলো? রাতে খুব কষ্ট পাচ্ছিলে। একবার সদর হাসপাতালে যাবে? চলো না একবার যাই। দেখি না ডাক্তার কি বলে!'
' আমার প্রশ্নের উত্তরটা কি এটা?'
রুকাইয়া আবারও আমতা আমতা করতে থাকলো,
' না আসলে কাল রাতে আমি বেশ ভয় পেয়েছিলাম তো। তাই দেখছিলাম.....'
' সব দিকে তোমার কত নজর তাইনা? আচ্ছা যাও যাবো ডাক্তারের কাছে। তোমাকে নিয়েই যাবো। কাল অফিসে খুব কাজ থাকবে৷ দুদিনে মিটিয়ে তারপর ঠিক যাবো৷ চলবে?'
রুকাইয়া শিহাবের কথা শুনে মুচকি হেসে চায়ের খালি কাপটা হাতে নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলো।
হঠাৎই শিহাব পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আকাশের দিকে তাকিয়ে আপন মনে ভাবতে থাকলো - সবকিছু কত বদলে গেছে। একটা সময় যে কি না নিজেই বন্ধুবান্ধবদের এই সিগারেটের জন্য নানান কথা শুনিয়েছে, আজ সে নিজেই তার কাছে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। জীবনটা এক মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে গেলো। সবকিছু বদলে গেলো।
দূরে জানালা দিয়ে শিহাবের সিগারেট খাওয়া দেখছিলো রুকাইয়া। যেন এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য এই পৃথিবীতে আর কিছু হতেই পারে না। দেখতে দেখতেই রুকাইয়ার চোখে পানি চলে এলো। এই মানুষটাকে সে পাগলের মত ভালোবাসে৷ অন্ধের মত বিশ্বাস করে, ভরসা করে৷ এই মানুষটার জন্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত সে৷ অথচ এতগুলো বছরেও এই মানুষটার মনের ক্ষত এতটুকুও কমাতে পারেনি সে। শুধু জানে এমজে নামের কাউকে এই মানুষটাও পাগলের মত ভালোবাসতো, এখনো বাসে। আর সেই মানুষটাও নাকি তার স্বামীকে খুব ভালোবাসতো। মাঝখানে এক প্রলয়ঙ্কারী ঝড় এসে এদের জীবনটা উল্টে পাল্টে দিয়ে চলে গেলো। আর মাঝে নিয়ে এলো এই অভাগী রুকাইয়াকে। এত বছরের সংসার জীবনে ওই মানুষটা সম্পর্কে অনেক কিছু শুনলেও তাদের নিজেদের ক্ষতবিক্ষত জীবন নিয়ে কিছুই জানে না সে। আর না জানলে কী করেই বা সেই ক্ষতে মলম লাগিয়ে সারিয়ে তুলবে সে? এসব ভাবতে ভাবতেই নীরবে চোখের পানি ঝড়ালো রুকাইয়া।
ESTÁS LEYENDO
এক টুকরো মেঘ (Completed✔)
Romanceকয়েকটি জীবনের চড়াই-উতরাই, হাসি কান্না, সুখ দুঃখের কাহিনী নিয়েই লেখা #এক_টুকরো_মেঘ