#4

108 8 0
                                    

#এক_টুকরো_মেঘ
#মেহেরুন_নেছা_হিতৈষী

পর্ব - ৪

" I choose to Love you in silence...
For in silence I find no rejection,
I choose to Love you in loneliness...
For in loneliness no one owns you but me,
I choose to adore you from a distance...
For distance will shield me from pain,
I choose to kiss you in the wind...
For the wind is gentler than my lips,
I choose to hold you in my dreams...
For in my dreams, you have no end.''
" ওয়াও! কবিতাটা তো বেশ সুন্দর।''
" হুম। আমার প্রিয় কবিতাগুলোর একটা। তুমি আগে শোনোনি এটা?''
" নাহ। কার কবিতা এটা শারার?"
" জালাল উদ্দীন রুমি। বেচারার আরো কিছুদিন বেঁচে থাকা দরকার ছিলো।"
" কেনো? বেঁচে থাকলে কি হতো?"
" কি আবার হতো! আরো সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখতো, আর সেগুলো শুনিয়ে আমি তোমাকে ইম্প্রেস করতাম। হাহাহা।"
" উফ তুমিও না শারার। সব সময় শুধু ফাজলামো।"
" আমি আবার কি করলাম? সত্যি বললেও দোষ। এই এমজে....."
.
.
" এমজে! এমজে! তুমি ঠিক আছো?"
আবির বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে আড়ালকে আস্তে করে ডাকছে। বেশ কিছুক্ষণ আগেই আড়াল আচমকা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আবির দ্রুত তার পরিচিত এক আংকেলের কোয়ার্টারে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কাছের এক ফার্মেসি থেকে একজন ডাক্তারকে এনে অবস্থা স্বাভাবিক কি না সেটাও দেখিয়ে নিয়েছে। ডাক্তার বলেছে আড়ালের প্রেশার খুব লো হয়ে গেছে। হয়ত খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করছে না। আর এর ভেতরেই কোনো কারণে খুব ভয় পেয়েছে বা কিছু নিয়ে হয়ত চিন্তিত। তাই আচমকা এভাবে জ্ঞান হারিয়েছে। আবির খুব শান্ত স্বভাবের এবং ঠান্ডা মাথার ছেলে হওয়ায় পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করেছে বিচলিত না হয়ে। কিন্তু অনেকটা সময় কেটে গেছে, আড়াল এখনো চোখ খুলছে না। হঠাৎই লক্ষ্য করলো আড়াল কেমন যেন ছটফট করছে৷ তাই আস্তে করে আবারও ডাকতে শুরু করলো,
' এমজে! আমি আবির। এখানেই আছি। তুমি চোখ খোলো।'
হঠাৎই আড়াল ধরমর করে বিছানায় শোয়া থেকে উঠে বসলো আর আবিরের দিকে তাকালো।
' উঠছো কেনো? তোমার শরীর খুব দুর্বল। শুয়ে থাকো।'
' না আমি ঠিক আছি। '
আড়াল খুব আস্তে উত্তর দিলো। আবির আড়ালের দিকে পানি ভর্তি গ্লাস এগিয়ে দিতেই আড়াল সেটা চুপচাপ খেয়ে নিলো।
" তুমি কি আজ সকালে কিছু খেয়ে বেরিয়েছো?"
আড়াল পানির খালি গ্লাসটা ফিরিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে রইলো।
" কাল রাতে?"
আড়াল আবারও নিশ্চুপ।
" তুমি কি একটু হাটতে পারবে? সামনে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। "
আড়াল কথা না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। আবিরের পেছন পেছন গিয়ে গাড়ি করে একটা রেস্টুরেন্টের এসে বসলো। আবির ওয়েটারকে ডেকে দুজনের জন্য হালকা কিছু খাবার অর্ডার দিলো।
" আচ্ছা তুমি কি প্রায়ই সেন্সলেস হয়ে যাও নাকি এমজে? "
" এক্সকিউজ মি!" আড়াল হঠাৎই রেগে গেলো।
" আমার নাম মুবাশ্বিরা জান্নাত আড়াল। আপনি এর মাঝে যেকোনো একটা বলে ডাকবেন কিন্তু এমজে না। অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছিলাম। এই নামে ফারদার আমাকে ডাকবেন না। এই নামে আমাকে ডাকার অধিকার শুধুমাত্র একজনেরই আছে।"
আবির মুচকি হেসে উত্তর দিলো, " আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আড়াল বলেই ডাকবো। আসলে ভার্সিটিতে থাকাকালীন শারার এত তোমার গল্প করতো, এতবার তোমাকে এমজে বলে ডাকতো, আমারও তাই....."
" হোয়াট এভার। আর কখনো ডাকবেন না। বাই দ্যা ওয়ে, ওই ওই কবিতাটা! ওই কবিতাটা কে বলছিলো? "
" আমি। কেনো? তুমি কি ভেবেছিলে? আমার জানে জিগার দোস্ত মি. শিহাব শারার খান? "
আবিরের মুখ থেকে শারারের নাম শুনে আড়ালের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। বুকের মাঝে জোরে জোরে হাতুড়ি পেটানোর মত আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো আড়াল। ওর হাত পা কাঁপা শুরু করেছে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, অনেকদিন পর কেউ তার সামনে সেই মানুষটার নাম বললো। কতগুলো দিন একে অপরের থেকে দূরে। তবুও সেই অনুভূতি। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো আড়াল,
" ভাবাটাই কি স্বাভাবিক নয় আবির ভাইয়া? আর কেউ জানুক বা না জানুক, আপনি তো বিদেশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবটা জানতেন। আমি আর শারার একে অপরকে কতটা ভালোবাসি সবটা। তবুও কেনো সুযোগ নিচ্ছেন? হোয়াই?"
আবির আবারও মুচকি হাসলো।
" সুযোগ তো একটু নিতেই হয়। তিন চার বছর তো প্রায় হয়েই গেলো শারারের কোনো খোঁজ নেই। যেই মেয়েটাকে সারাজীবন ভালো রাখার স্বপ্ন দেখতো আমার বন্ধু! আজ তাকে সারাজীবনের জন্য কাঁদিয়ে হারিয়ে গেলো। তাই ভাবলাম চোখের পানিটুকু মুছিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তো কাউকে দরকার তাইনা? "
" তাই বলে নিজের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে? আমি শারারকে এখনো খুব ভালোবাসি ভাইয়া। খুব বেশি। ওর জায়গা আমি কখনো কাউকে দিতে পারবো না।"
" আচ্ছা তোমাদের বিয়েটা হলোনা কেনো? শুনেছিলাম তোমাদের দুই পরিবার সবটা মেনে নিয়েছে। তখন তো আমি স্কলারশিপ পেয়ে ইউ এস চলে গেলাম। আর খোঁজ রাখতে পারিনি। আমাকে কি বলবে ঠিক কি হয়েছিলো?"
আড়াল একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলতে শুরু করলো,
" আমি আসলে জানি না। মানে... আসলে..
সব ঠিকই ছিলো। যদিও আমি ভেবেছিলাম বাবা সবটা মেনে নেবে না। কিছু না কিছু করবেই হয়ত। কিন্তু সব কিছু অদ্ভুত রকম ভাবে হয়ে যাচ্ছিলো। বাবা নিজে আমার জন্য শাড়ি কিনে এনেছিলেন, যা আমার জন্য স্বপ্নের মত। কিন্তু... "
" কিন্তু?"
" বিয়ের দিন শারার আসেনি।"
কথাটা বলেই আড়াল ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। একটু সামলে নিয়ে আবার বললো, " সারাটাদিন সারাটা রাত ওর জন্য অপেক্ষা করেছি। ও আসেনি জানেন। ওকে কত শতবার কল করেছি হিসেব নেই। কিন্তু ওর ফোন প্রতিবার বন্ধ আসছিলো। এমন ঘটনায় খুব ভেঙে পড়লাম। আমাকে তখন সান্ত্বনা দেওয়ার মতও কেউ ছিলোনা। নানু ইউএস আর নানভাই তো তার কিছুদিন আগে থেকেই অসুস্থ। দুই তিনদিন রুম বন্ধ করে পাগলের মত কাঁদলাম। এরপর হঠাৎ খেয়াল হলো আমি ওর বাড়ি চিনি। পরদিনই ওদের বাড়ি গেলাম। কিন্তু বাসা তালা ছিলো। আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম বিয়ের আগেরদিনই ওরা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। এরপর মাস দুইয়েক পর ভার্সিটির কয়েকজনের মুখে শুনেছি ওর বিয়ে হয়ে গেছে। "
কথাটা বলেই আড়াল হাত দিয়ে মুখ চেপে কাঁদতে থাকলো।

এক টুকরো মেঘ (Completed✔)Onde histórias criam vida. Descubra agora