#এক_টুকরো_মেঘ
#মেহেরুন_নেছা_হিতৈষীপর্ব ২১
♣
" আচ্ছা শারার একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?"
" হ্যাঁ করো না। একটা কেনো, হাজারটা কথা জিজ্ঞাসা করো। "
" আবির ভাইয়া হঠাৎই বাইরে চলে গেলো কেনো? এভাবে বছরের মাঝখানে স্কলারশিপ পেলো। বুঝলাম না ঠিক। তুমি কেনো পেলে না?"
" কি যে আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। আর আমি তো কোথাও এপ্লাই ও করিনি। আবির যে কখন কবে করলো.... আমাকে তো কিছু জানায়ও নি। "
" ভালোই হয়েছে তুমি এপ্লাই করোনি। "
" কি ভালো?"
" এপ্লাই করলে যদি তুমি স্কলারশিপ পেয়ে যেতে তখন! তখন তো আমাকে আবার সেই আগের মতনই একা হয়ে যেতে হতো। নানু চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে এত দূর এনেছি। আবার তুমিও যদি চলে যেতে....."
" আরে ধুর! এই পাগলি এখানে কান্নার কি হলো। এই চোখ মুছো। তুমি জানো না তোমার চোখে কান্না মানায় না। আমার সামনে খবরদার কান্না করবে না। শুধু হাসবে। আমি তো তোমার হাসিটাকে ভালোবাসি এমজে। তোমার চোখে পানি মানে আমার জীবন অন্ধকার। বোঝো না? ইশ এই মেয়ে... এভাবে কান্না করলে কিন্তু আজ ক্লাস শেষে বইমেলায় নিয়ে যাবো না।"
" এই না না.... এইযে চোখ মুছেছি। আর কাঁদবো না। সরি। প্লিজ নিয়ে যাবে তো? এই... আচ্ছা শোনো না একটা কথা..."
" হুম বলো....."
" আবির ভাইয়া না যাওয়ার আগে আমাকে একটা ডায়েরি দিয়ে গেছে। বলেছে আমি যেন ওতে লিখি। ডায়েরিটা ভীষণ সুন্দর। "
" হুম কেনার সময় আমি সাথেই ছিলাম।"
" ধ্যাত। তোমাকে কিচ্ছু বলে শান্তি নেই। সব আগে থেকেই জেনে বসে থাকো। ইশ।"
" আচ্ছা বাবা সরি। আবির ডায়েরিটা কেনার সময় আমি সাথেই ছিলাম এটা আমি ভুলে গেছি। আবার বলো তো...."
" ধুর!"
"বলো না এমজে... এবার কিন্তু আমি রাগ করবো। আচ্ছা বলতে হবে না৷ ওতে যা লেখার লিখো৷ তবে গল্প লিখতে হবে কিন্তু৷ আমি আমার এমজের গল্প চাই। আমাকে লেখা শেষ হলে পড়তে দিও। তাহলেই হবে।"
" দেবো না৷ একটুও দেবো না। হাহ..."
" কেনো?"
" ওতে আমি তোমার আর আমার গল্প লিখবো শারার৷ যদি কোনোদিন আমি আমাদের গল্প নিয়ে কোনো বই বের করি, সেটা তোমাকে উৎসর্গ করবো। তখন বই থেকেই পড়ে নিও।"
......
....
" আমরা মনে হয় এসে গেছি।"
রুকাইয়ার ডাকে ভাবনায় ছেদ ঘটলো শিহাবের। বাসে বসে পুরোনো দিনের কথাগুলো ভেবে যাচ্ছিলো। শেষবার বইমেলায় এসেছিলো তাও পাঁচ ছয় বছর হবে। শেষ এসেছিলো আড়ালের হাত ধরে৷
আর আজ আড়ালের জায়গায় রুকাইয়া। সময় সবকিছু কি অদ্ভুত ভাবেই না উলোটপালোট করে দিয়েছে৷ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললো শিহাব।
" শুনছো?"
শিহাবকে চুপ থাকতে দেখে রুকাইয়া শিহাবের কাঁধে আস্তে করে ধ্বাক্কা দিলো।
" হ্যাঁ হ্যাঁ। চলো নামি। এখানেই।"
দুজনে মিলে বাস শাহবাগে নেমে কিছুটা হেঁটে বাংলা একাডেমির ভেতরে বইমেলার সামনে এসে দাঁড়ালো।
রুকাইয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মেলার সাজসজ্জা দেখে। শিহাব রুকাইয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ওএ হাত ধরে আস্তে করে মেলার ভেতরের দিকে হাঁটতে লাগলো। রুকাইয়া আপন মনে হাঁটছে আর একেকটা স্টল মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
শিহাব রুকাইয়ার অবস্থা দেখে মনে মনে হাসলো।
আর ভাবলো, ' এমজে কে নিয়ে যেবার প্রথম মেলায় এসেছিলাম, ঠিক এভাবেই সবকিছু ঘুরেফিরে দেখছিলো মেয়েটা।'
রুকাইয়া এবং শিহাব মেলার বেশ ভেতরে ঢুকে গেছে। মাঝেমধ্যে দুই একটা স্টলে গিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে দুজনে। রুকাইয়ার বেশ ভালো লাগছিলো।
" কেমন লাগছে? "
" বেশ ভালো। আমি আগে কখনো আসিনি তো। আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে। "
" বই পছন্দ হলে বলো কিন্তু।"
" আচ্ছা। চলো ওদিকটায় যাই। এদিকে বেশ ভীড়। ওদিকে একটু ফাঁকা লাগছে।"
রুকাইয়া এবং শিহাব ভীড় ঠেলে একটু ফাঁকা স্টলের দিকে হাঁটা দিলো।
VOUS LISEZ
এক টুকরো মেঘ (Completed✔)
Roman d'amourকয়েকটি জীবনের চড়াই-উতরাই, হাসি কান্না, সুখ দুঃখের কাহিনী নিয়েই লেখা #এক_টুকরো_মেঘ