#16

79 8 0
                                    

#এক_টুকরো_মেঘ
#মেহেরুন_নেছা_হিতৈষী

পর্ব ১৬

" দোস্ত.. গুড নিউজ আছে।"
" কিরে ভাই! সকাল সকাল কল দিয়া ঘুম ভাঙালি। কিসের নিউজ? কি হইছে?"
" আরে রাখ তোর ঘুম। দ্রুত ক্যাম্পাসে চলে আয়। তোর ভাবীর সাথে দেখা করাবো আজকে।"
" বাজে বকিস না তো শিহাব। আমার ভাই থাকলে তো ভাবী আসবে। আর আনাবিয়া তো এখনো বহুত ছোট। কি বলিস এসব? চুপচাপ ঘুমা। তুই সিওর ঘুমের ঘোরে কথা বলতেছিস।"
" আরে ব্যাটা ধুত! তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে আয়। আর বউটা তোর ভাইয়ের না বউটা হলো আমার যে তোর ভাবিই হবে।"
" কিরে ভাই কি যাতা বলতেছিস! তুই বিয়ে করছিস মানে? মামু এসব কি? আমি পাঁচ মিনিটে আসতেছি।"
.....
" কিরে কি কাহিনী বল তো! তুই সত্যি সত্যি বিয়ে করছিস? তাও আমাকে রাইক্ষা? এও সম্ভব?"
" আরেএএএএহ আবিইইইইইর! তুই থামবি ভাই একটু? আমারে বলতে তো দিবি নাকি।"
" আচ্ছা বল শুনি কি ঘটাইছিস। "
" কথা হচ্ছে আমি কয়দিন ধরেই ভাবছিলাম এমজেমে প্রপোজ করবো করবো... গতকাল সাহস করে করেই ফেলছি। আর এমজেও রাজী হইয়া গেছে মামুউউউউউউ!"
" কিহ! সত্যিই? তোর মাথার ঠিক আছে? আড়াল?"
" কেন তর বিশ্বাস হয় না? একটু পরেই এমজে আসবে তোর আর আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করে। জানতামই তুই আজ খেয়ে আসতে পারবি না। ওওইতো এমজে চলে আসছে। দেখ তোর ভাবী! কিউট না?"
" আমি আড়ালকে তোর আগে থেকেই চিনি ভাই। নতুন করে চেনাচ্ছিস?"
" নতুন করেই তো চেনাবো বল। এতদিন জানতিস ও তোর বাপের কলিগের মেয়ে। আজ থেকে তো ও আমার জান বল। তোর ভাবী!"
...
...
" এই ভাইয়া ভাইয়া? ওঠ! এভাবে কাঁপছিস কেনো? কি হয়েছে!  ভাইয়া!"
আনাবিয়ার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে বিছানায় শোয়া থেকে ধরমর করে উঠে বসে পরলো আবির। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
" ভাইয়া কি হয়েছে তোর? ঘুমের ভেতরে ওমন করছিলি কেনো? আর তোর গায়ে তো জ্বরও আছে দেখছি।"
" আনা আমার জন্য এক কাপ চা আনবি? কড়া লিকারের! মাথাটা খুব ব্যাথা করছে। "
" আচ্ছা আনছি এক্ষুনি। তুই বোস।"
আনাবিয়া ছুটে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। আবির বিছানা থেকে একটা বালিশ পিঠের নিয়ে দিয়ে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো। ঘুমের ঘোরে পুরোনো দিনে কথাগুলো কিভাবে মনে পরে গেলো। আবির বুঝতে পারলো তার জ্বর ধীরে ধীরে বাড়ছে। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করলেই এমনটা হয় আবিরের।
আনাবিয়া দ্রুত এক কাপ চা এনে ভাইয়ের হাতে দিলো। সাথে পাশের টেবিলে একটা বাটিতে কয়েক পিছ কেক রাখলো আর এক গ্লাস পানি। আবিরের কপালে গালে হাত দিয়ে মনে মনে ভাইয়ের জ্বরটা মেপে নিলো যেন আনাবিয়া।।
" চা শেষ করে এই কেক খাবি, পানি খাবি। তারপর আমি ঔষধ দেবো। খেয়ে একটু রেস্ট নিবি। দেখবি জ্বর চলে যাবে।।"
আবির আস্তে করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। আনাবিয়া ঘরের মাঝামাঝিতে রাখা আবিরের স্টাডি টেবিলটায় উঠে ঝুলে বসলো। হাত বাড়িতে বাটি থেকে এক পিছ কেক নিলো। পা দোলাতে দোলাতে কেকে কামড় দিয়ে আবিরের দিকে তাকালো আনাবিয়া,
" ভাইয়া তুই কি আড়াল আপুকে নিয়ে টেনশন করছিস?"
আনাবিয়ার কথা শুনে আবির একটু হকচকিয়ে গেলো। চায়ের কাপটা পাশের টেবিলে রেখে গ্লাসে রাখা পানিটুকু এক চুমুকে খেয়ে ফেললো। আবির খুব ঠান্ডা মাথার হলেও মাঝেমধ্যে প্রচন্ড রকমের নার্ভাস হয়ে পরে। যেটা আবিরের বাড়ির সবাই খুব ভালো করেই জানে। আবিরের অবস্থা দেখে আনাবিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে পা দোলাতে দোলাতে কেকে কামড় দিচ্ছে।
" একটা মেয়েকে সেই কলেজ লাইফ থেকে এতটা পছন্দ করিস, পাগলের মত ভালোবাসিস অথচ যেইনা শিহাব ভাইয়া বললো যে সে আড়াল আপুকে ভালোবাসে, অমনি তুই সব ভুলে গেলি? এ কেমন ভালোবাসা ভাইয়া? "
আবির আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি করে হাসলো।
" শুধু শিহাব আড়ালকে ভালোবাসতো বলে আমি ওদের মাঝে থেকে সড়ে আসিনি আনা। আড়ালও যে ওর শারারকে বড্ড বেশিই ভালোবাসে।"
" তুই একটাবার নিজের মনের কথাটা জানাতে পারতিস ভাইয়া। অন্তত এখন তো জানাতে পারিস। বিয়ের জন্য ভাবীকে ফোর্স তো করতে পারিস। এখন তো সবটাই তোর হাতে। এখন তাহলে কিসের জন্য আটকে আছিস?"
" ভালোবাসায় জোর খাটানো চলে না আনা। হ্যাঁ, আড়ালকে আমি সেদিনও পাগলের মত ভালোবাসতাম আর আজও ভালোবাসি। বরং সেদিনের চেয়েও হাজার গুণ বেশিই ভালোবাসি। আমি জানি এখন শারারও নেই আর সবটাই আমার হাতে। কিন্তু তবুও!  ওইযে ওকে আমি ভালোবাসি। আর ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা যে কি! তুই বুঝবি না আনা। আমি বুঝি। আড়ালও বোঝে। ও আজও ওর শারারের জন্য ব্যাকুল।"
আনাবিয়া এবারে একটু নড়েচড়ে বসলো।
" কিন্তু তাই বলে তোমার ফিলিংসের কোনো মূল্যই নেই কারো কাছে? তোমাকে আড়াল আপুর জন্য কষ্ট পেতে আমরা দেখেছি ভাইয়া। অথচ আড়াল আপু একটুও বুঝলো না তুমি ওকে কতটা ভালোবাসো?"
" আমি কি ওকে কখনো বুঝতে দিয়েছি আনা? তুই শুধুশুধু রাগ করছিস। আর দেখ, ভালো না বাসুক! আমি চাই সারাজীবন বন্ধু হয়ে ওর পাশে থাকতে। আর তাছাড়া শিহাব আড়াল দুজন দুজনকে সত্যিই খুব ভালোবাসতো। একদিকে নিজের জানের জান বন্ধু! আর অন্যদিকে নিজের ভালোবাসা। এই দুটোর মাঝে আমি ভেঙেচুরে যাচ্ছিলাম। সে জন্যই তো দূরে চলে গেছিলাম ওদের থেকে। কিন্তু সেসব তো ওরা কেউ জানে না বল। তাই শুধু শুধু ওদের দোষ দিয়ে কী লাভ? "
" তুই যাই বলিস ভাইয়া। ওদের জন্য এতগুলো বছর তুই আমাদের থেকেও দূরে থেকেছিস। কি করে ভুলি ভাইয়া? একদিন ওই মেয়েটার ভালো থাকার জন্যই দূরে চলে গেছিলি না? আর আজ দেখ! ওর ভালো থাকার চাবিকাঠি এখন তোর হাতের মুঠোয়। আল্লাহ আড়াল আপুকে তোর জন্যই বানিয়েছে ভাইয়া। তোর পাজরের হাড় দিয়েই আড়াল আপুর সৃষ্টি। আড়াল আপু শুধুই তোর। শিহাব ভাইয়া মাঝখানে সেমন উটকো ঢুকে পরেছিলো, সেভাবেই চলেও গেছে। "
" এভাবে কেনো বলছিস আনা?"
আনাবিয়া মাথা নিচু করে ফেললো।
আবির বোনের রাগের কারণ বুঝতে পারলো। টেবিলের পাশে বাটি থেকে কেক নিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
" আমার জ্বরের কথা মাকে বলিস না যেন। টেনশন করবে শুধুশুধু। ড্রয়ার থেকে একটা নাপা এক্সট্রা দে।"
আনাবিয়া টেবিল থেকে নেমে ভাইয়ের হাতে ঔষধ দিয়ে গ্লাসে পানি দিলো। আবির চুপচাপ খেয়ে নিলো।
" আমি এখন একটু রেস্ট নেই। অনেক বকবক করেছি তোর সাথে। এবার তুই যা। "
" আচ্ছা ভাইয়া তুই থাক। আমি যাই!"
আনাবিয়া রুম থেকে যাওয়ার সময় আবিরের ঘরের দরজাটা চাপা দিয়ে চলে গেলো। আবির পিঠে রাখা বালিশটা মাথার নিচে দিয়ে পায়ের নিচে থাকা কাথাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো।
পাশ থেকে নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজ অপশনে চলে গেলো আবির।
" Ana kintu ebar vishon rege gese vai... kivabe or rag vangabi vabte thak. R good news kobe pabo?
R ha..  edike shob Thikthak. Shob pln motoi hosse.. Dont worry. "
মেসেজটা টাইপ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলো আবির৷ তারপর চটপট মেসেজটা একটা আননোন নাম্বারে সেন্ড করে ফোনটা সাইলেন্ট মুডে করে দিলো। ফোনটা হাত থেকে রেখে আস্তে করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
আস্তে করে চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকলো আবির।

( চলবে...)

এক টুকরো মেঘ (Completed✔)Where stories live. Discover now