পর্ব-১

501 7 0
                                    

মৌ চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে। অস্বস্তি লাগছে তার। এক ফোটাও সাজেনি সে, সাজবে কেন? বিয়ের পর তো আসল রূপটাকেই দেখবে, সেজে আর কি লাভ?

পাশে ওর কাজিন লুনা বসতেই জিজ্ঞেস করলো,
-'দোস্ত? ছেলের বয়স কত? লম্বা?'

লুনা বরাবরই ওর বয়সী, তবে কয়েকদিনের ছোট। কাজিন হলেও বান্ধবীর মত আচরণ সবসময়।
-'বড় আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করেছি, বলল চল্লিশ। কিসে কিসে যেন চাকরী করে এবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। কিসের যেন ট্রেইনিং শুরু হবে বলল। আমি এত কিছু বুঝিনা ভাই, মাথার উপ্রে দিয়ে যায় সব। আর লম্বা কিনা? তোর থেকে এক দুই ইঞ্চি, মাথায় হালকা টাক পড়েছে।'

মৌয়ের মনে হলো মাথায় কে যেন চারশো চল্লিশ ভোলটের একটা তার লাগিয়ে দিয়েছে।

-'ছেলে পছন্দ হয়না জানে, তাও মা কেন এত বয়স্ক বুড়া ছেচ্চর আনে আমার জন্য। বাবা থাকলে হয়তো আজ এত কষ্ট করতে হত না।'

-'যা বুঝলাম বড় আম্মুও এক প্রকার জেদ নিয়েই ছেলে খোঁজেন। তুই তো রিজেক্ট করতে করতে শহীদ হয়ে যাস।'

-'আমার পছন্দ না হলে কি করবো?'

কিছুক্ষণ পর একটা মহিলা ঢুকলো রুমে, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে কিন্তু দেখতে সহজ সরল। হিজাব পড়েনি, তবে থ্রি-পিস পড়ে মাথায় সুন্দর করে কাপড় দিয়েছে। মৌয়ের সামনে বসতেই লুনা সালাম দিয়ে উঠে। মৌ চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
-'তুমি রান্না করতে পারো, মা?'

মৌ চুপচাপ মাথা নাড়ায়। হঠাৎ লুনা জিজ্ঞেস করে বসে,
-'আচ্ছা আন্টি, ভাইয়ার বয়স কত?'
-'চল্লিশ, সরকারি চাকরীর ট্রেইনিংয়ে ঢুকবে কিছুদিন পর।'

বলতেই মৌয়ের গা জ্বালা করে ওঠে। কিছুক্ষণ বাদে উনি উঠে চলে যায়। কিন্তু দরজাটা হাট করে খোলা। দেখতে পায় তার রুমের সামনে কয়েকজন লোক বসে আছে। সে আগেই আড়াল হয়ে যায়।

লুনা চলে গেলে রুমে একজন ঢোকে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে একটা মাঝবয়েসী লোক। দেখতে বোকাসোকা, মাথায় টাক, খুব বেশি মোটা না, তবে হেলদি। পরনে একটা খাকি রঙের প্যান্ট, আর একটা নীল আর বেগুনির মিশ্রণ একটা শার্ট। শার্টের বুক পকেটে একটা কলম। লোকটা তাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। বুঝতে বাকি রইলো এই সেই তাদের ভাষ্যমতে বিসিএস ক্যাডার পাত্র।
মৌ খাটের অপর পাশে বসে ছিল। সেই লোকটাও বসলো উলটো দিকে।

হঠাৎ মৌয়ের অজান্তেই কোত্থেকে একটা ফুল বের করে ওর সামনে দেয়,

-'মৌ না নাম? তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে, আই লভে ইউ।'

মৌ ওর দিকে চোখ বড় করে তাকায়। এত শিক্ষিত বলে বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল সবাই, শেষমেশ দেখা যাচ্ছে লাভ উচ্চারণটাই করতে পারে না।
যে ফুলটা দিয়েছে সেটা আর কোনো জায়গার ফুল না, মৌয়ের রুমে রাখা একটা ফেক ডেইজি ফুল।

মৌ চোখ সরিয়ে বলল,
-'দেখেন, আপনি অনেক ভালো একজন মানুষ। দেখতেও ভালো, কিন্তু একটা সমস্যা, আপনার বয়স বেশি। সতেরো বছর ডিফারেন্সে মেন্টালিটি সেম থাকে না। আমার সবসময় ইচ্ছে ছিল আমার সমান বা কয়েকবছর বড় বিয়ে করা। আর যাই হোক শুনে রাখেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।'

কেমন একটা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। লোকটা কি ভাবছে বোঝা গেলো না।

লোকটা ঢোক গিলে কিছু একটা বলতে চাইল কিন্তু বলতে পারেনি। মাথা হালকা নেড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। মায়ের মত সেও দরজা খুলে রেখে চলে যায়।

এভাবে রিজেক্ট করতে মৌয়ের একদম খারাপ লাগে না। করবেই বা কি? ওর ভালো না লাগলে জোড় করে তো আর কিছু করতে পারবে না।

সে দেখতে পায় লোকটা কি কি যেন বলে চলে যাচ্ছে। ওর সাথে যারা এসেছিল তাদের মধ্যেই বের হওয়ার সময় একজন মৌয়ের অলক্ষেই তার দিকে তাকায়। মৌ এদিকে তাকাতেই সে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

***********
খাটের উপর পা ভাঁজ করে বসে আপেল খাচ্ছে মৌ কোনো টেনশন ছাড়া। মা এসে ঘরে ঢুকে বলল,

-'তোর মত নির্লজ্জ আছে কোথাও? ছেলে ভাগিয়ে দিয়ে এখানে বসে আরামে খাচ্ছিস!'

-'মা, ওকে তোমার কোনোভাবে ছেলে মনে হয়? মধ্যবয়স্ক একটা আংকেল! তোমার মাথা কি গেছে নাকি? তুমি জানো এত বড় একটা মানুষের আমার সাথে মানাবে না। তাও কেন তুমি উনাকে বাসায় আসতে বললে? এখন তোমার নাকটাই তো কাটা গেল তাইনা?'

লুনা পাশ দিয়ে এসে মৌয়ের পড়ার টেবিলে বসলো, ওকে উদ্দেশ্য করে বলল মা,

-'দেখ অবস্থা, ভারী বেহায়া তো। একে তো ভুল করেছে তার উপর তর্ক করতে আসছে।'

-'বড় আম্মু, তুমি বেশি চিন্তা করছো। দেখবে ওর মত হাড় বাকা মেয়ের লাইফেও পার্ফেক্ট একজন আসবে।'

এক্স ফিয়ন্সের বিয়েতেWhere stories live. Discover now