#প্রতিচ্ছবি ২
পর্ব - ৩
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
রেগে গেলো লিসা।উদ্ধত ভঙ্গিতে লোকটার শার্টের কলার ধরে বলে উঠলো, " শয়তান তোর কারনে আমি আমার বোন হারিয়েছি। কি করেছিস তুই জলদি বল। "
ভেঙ্গে পড়েছে লোকটা একদম।মাটিতে বসে কিছুক্ষন একা একা কাঁদলো সে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করলো সব-
" রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্টের নাম হয়তো শুনেছো তোমরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী। অনেক লেখালেখি হয়েছিলো এটা নিয়ে। মুভিও বের হয়েছিলো একটা। পাঁচজন কয়েদিকে গ্যাস ভর্তি একটি চ্যাম্বারে ১৫ দিন বন্দি করে রাখা হয়েছিলো। বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত সব কিছু ছিলো সে বন্দী ঘরে। কিন্ত তারা ঘুমাতে পারতো না।কারন ঘরভর্তি বিষাক্ত এক গ্যাস ছিলো।সে গ্যাস কেড়ে নিয়েছিলো তাদের ঘুম।গবেষকরা রুমে লাগানো গোপন ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষন করতো সব। প্রথম দুতিন দিন সব ভালোই ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে অবস্হার অবনতি হতে থাকে।ঘুমহীন জীবন পাড় করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওরা। ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক হতে শুরু করে তারা।হিংস্র হয়ে যায় এবং অবশেষে বিকৃত মানুষে পরিনত হয় তারা।
মূলত সেদিক থেকেই আমি আমার ধ্বংস যজ্ঞের আইডিয়াটা নিয়েছিলাম।শয়তানের পূজারি আমি।লুসিফার আমার ঈশ্বর। বিকৃত আর নিষ্ঠুর সব কিছু প্রিয় আমার লুসিফারের।তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সব সময়ই নানান বিকৃত এক্সপেরিমেন্ট করে যেতাম আমি।
কয়েক বছর আগে একটি মেন্টাল হসপিটালে ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটেছিলো। মারা গিয়েছিলো একটি পাগল ছেলে আর নীরা নামের এক তরুনী। হারিয়ে গিয়েছিলো তার বোন ইরা। তাদের খুনের জন্য দায়ী করা হয়েছিলো ত্রপা নামের একটি মেয়েকে।ত্রপা মেয়েটি হাবি জাবি কিসব যেনো বলছিলো।কেউ বিশ্বাস করেনি তার কথা।নিছক পাগলের অসুস্থ প্রলাপ হিসেবেই ধরে নিয়েছিলো তার কথা গুলো।কিন্তু আমি জানতাম মেয়েটা যা বলেছিলো সব সত্য ছিলো।ওগুলো মোটেও কোন পাগলের প্রলাপ ছিলো না।
সেদিন ছাদের ওপর বিশাল একটি আয়না ছিলো।সাদামাটা নরমাল একটি আয়না। চুরি করে নিয়ে আসি সেই আয়নাটি। আয়নাটি মোটেও সাদামাটা ছিলো না। যাদুকরী মন্ত্রপূত আয়না সেটা।যা দিয়ে প্রবেশ করা যায় জাদুর দুনিয়ায়, কিংবা অন্ধকারের রাজ্যে।
ছোট্ট একটি ঘরে রেখে দিই আয়নাটিকে। তারপর ধরে নিয়ে আসি তিনটি আসহায় কুমারী মেয়েকে। বন্দী করে রেখে দিই তাদের সেই ঘরটিতে। রাশিয়ান এক্সপেরিমেন্টের মত তাদের রুমের ভেতরও ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো সেই বিষাক্ত গ্যাসটি। ঘুমাতে না পেরে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েগুলো।অস্বাভাবিক কষ্টে বিকৃত হতে থাকে তাদের দেহ। প্রভু লুসিফার প্রতিরাতে বের হয়ে আসতো সেই আয়নাটি দিয়ে।তারপর মেয়েগুলোকে তৃপ্তির সাথে ভোগ করে ফিরে যেতো নিজের অন্ধকার জগতে।
তীব্র অতঙ্কে আর যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতো মেয়েগুলো। বার অনুরোধ করতো ওদের ছেড়ে দিতে। অভিষাপ দিতো প্রানভরে। মৃত্য কামনা করতো ওরা আমাদের।আরাম করে বসে বসে সব দেখতাম আমি। ওদের কষ্ট দেখে ভীষন ভালো লাগতো আমার। কেমন যেনো একটা পৈশাচিক আনন্দ পেতাম মনের ভেতর।
বেশ চলছিলো দিনগুলো।.....এবং একদিন হঠাত করেই মাথার মধ্যে চেপে বসে আর একটি শয়তানি বুদ্ধি। হিংস্র এক বাঘিনিকে ছেড়ে দিই সেই ঘরের মধ্যে। অবর্ণনীয় আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে তিন দুর্বল নারী।আমার চোখের সামনেই ছিড়েখুড়ে খেয়ে ফেললো একটি মেয়েকে। বাকি দুজন কিভাবে কীভাবে যেনো বেঁচে গেলো। উপরে টাঙানো বিশাল ঝাঁড় বাতিটাতে উঠে বসে রইলো দু'জন।আর নিচে গর্জন করে বেড়াতে লাগলো হিংস্র মানুষখেকো বাঘিনী।
আতঙ্কে ঠক ঠক করে কাঁপছিলো মেয়েদুটো। আর অনবরত অভিষাপ দিয়ে যাচ্ছিলো আমাকে।দুদিন কেটে গেলো এভাবে..... এবং ঘটলো সেই দুর্ঘটনাটা।হিংস্র পশুটা তখন ঘুমাচ্ছিলো।সবচেয়ে ছোট মেয়েটি লাফ দিয়ে নেমে গেলো নিচে। তারপর সোজা হেঁটে চলে এলো আয়নাটির কাছে।জোরে জোরে কপাল ঠুকতে লাগলো আয়নাটির সাথে। আর অনবরত অভিষাপ দিতে লাগলো। শক্ত আয়নার আঘাতে ফেটে গেলো মেয়েটির মাথা।এবং..... একসময় সে ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। সেখান থেকেই শুরু আমাদের ধ্বংসের।
কি যেনো হলো হঠাৎ।অদ্ভূত এক রোগের কবলে পড়ে মারা পড়তে লাগলো আমার স্টাফরা।তাদের গায়ের মাংসে পচন ধরতো, তারপর পঁচে গলে পড়ে যেতো।। চোখের নিমিষেই কঙ্কালে পরিনত হতো তাদের দেহ।
তোমরা হয়তো জানো না,গত কদিনে গায়েব হয়ে গেছে দেশের অর্ধেক মানুষ।মারা পরেছে তার বহু লোক। সরকার এতদিন সব চেপে রেখেছিলো।কিন্তু এখন টনক নড়েছে তাদের।"স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।একজন মানুষ কি করে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে?? আবশ্য সামনে দাঁড়ানো লোকটা মানুষ কি- না.... সেটা নিয়েই এখন সন্দেহ হচ্ছে আমার। প্রচন্ড একটা ঘৃনা কাজ করছে তার প্রতি।
- আর তৃতীয় যে মেয়েটি...... কি হয়েছিলো তার???
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো লোকটা।কিন্তু পারলো না। তার আগেই থমকে গেলো সে। অস্ফূষ্ট একটা নারী কন্ঠ চমকে দিয়েছে আমাদেরকে। অবর্ননীয় আতঙ্কে অনবরত চিৎকার করে যাচ্ছে। সে আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে বার বার।বাবুর মার চিৎকার। দৌড়ে ভেতরে গেলাম।..............এবং জমে পাথর হয়ে গেলাম আতঙ্কে।
চলবে।।
أنت تقرأ
প্রতিচ্ছবি ২
خارق للطبيعةএ গল্প ত্রপা, রাফি, লিসা আর ইরার।কিংবা দুটো নবজাতক বাচ্চার।এ গল্প জাদুর দুনিয়ার।সেই সঙ্গে পুরো পৃথিবীবাসীরও। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় ভরপুর গল্প। ।। 🙊