#প্রতিচ্ছবি ২
পর্ব :১৬
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
ভালো মতো তাকাতেই বুঝতে পারলাম জিনিসটা আসলে কী। ছোটখাটো একটা চারতলা ঘড়।মাটির তৈরী।বাইরের দেয়ালে শ্যাওলা জমে আছে।চারিদিকে অসহ্য নিরবতা।দোতালার ছোট্ট বারান্দাটায় কাপড় ঝুলছে কতগুলো।পুরো বাড়িতে ছোট বড় অসংখ্য দরজা জানালা।বাড়ির একপাশে দেখলাম ছোট্ট একটা হরিন শাবক বাঁধা।ওটা কি যেনো খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।ভালো মতো তাকাতেই চমকে উঠলাম।অনেকগুলো হাঁড়গোড় পড়ে আছে হরিনটার সামনে।সেগুলোই খাচ্ছে হরিনটা।চমকে উঠলাম আমি।
মৃদু হেসে আহাদ বললো, " ভয় পাওয়ার কিছু নেই।হরিনরাও জীবের দেহাবশেষ -হাড্ডিগুড্ডি খায়। নরমার ব্যাপার।"
তারপর দৌড়ে চলে গেলো ঘরের ভেতর।আমরাও চলে এলাম ওর পিছু পিছু।
বাড়ির ভেতরটা দেখে কতক্ষন হা হয়ে রইলাম।আমরা।সত্যিকথা বলতে কি প্রথম নজরেই ভীষনভাবে ভালো লেগে যায় বাড়িটাকে।কি যেনো একটা সম্মোহন ছিলো।মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।অদ্ভূত রকমের সব নকশা আঁকিবুকি করা বাড়িটার ভেতর।কি অদ্ভূত সুন্দর। দোতলায় নিয়ে গেলো আহাদ আমাদের।সেখানে শোবার ব্যাবস্থা আছে।সাথেই এটাচ বাথ।ঘন জঙ্গলে এমন অত্যাধুনিক বাসা দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম আমি।আধঘন্টাপর রাতের খাবারের জন্য নিচে নেমে এলাম সবাই।ছোট্ট একটা রুমে আমাদের খাবারের ব্যাবস্হা করা হয়েছে।মেহগনি কাঠের নকশা করা টেবিলটার উপর খাবারগুলো সাজানো।মাথার উপর জ্বলজ্বল করছে বিশাল ঝাঁড়বাতি।খাবারের আয়োজন তেমন বেশী না।মোটা জবের রুটি, মশলা মাখানো মাংস,মাছ ভাজি,ছোট ছোট কোয়েল পাখির ডিম, বুনো সবজির সালাদ আর শরবত।
আহাদ হাসি হাসি মুখে এটা ওটা এগিয়ে দিতে লাগলো আমাদের।ক্ষিধে পেয়েছিলো প্রচুর। গপ গপ করে গিলে খেলাম সব।আহাদ ছেলেটা হাসিখুশি গল্পবাজ।সারাক্ষন এটা ওটা বলে মাতিয়ে রাখলো আমাদের।ইরার সাথে দেখলাম বেশ ভালোই খাতির জমে উঠেছে। মুখ টিপে হেসে ফেললাম আমি আর রাফি।
গল্প করতে করতে কখন যে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেলো টের পেলাম না একদমই।ব্যাস্ত ভঙ্গিতে উঠে পড়লো আহাদ।বাইরে যেতে হবে।শিকারে বেরোবে সে।আশপাশটা ঘুরে দেখতে বললো আমাদের।তবে দক্ষিন দিকে যাতে না যাই, সে ব্যাপারে সাবধান করে দিলো
" কি আছে ওদিকে?" ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ইরা।
অন্ধকার হয়ে গেলো আহাদের মুখ।মিন মিন করে বললো, " সুরঙ্গ আছে একটা।সুরঙ্গটার ভেতর ঐ জিনিসটা থাকে। ওখানে কেউ যেয়ো না প্লিজ।কিছু হলে আমা বাঁচাতে পারবো না।"
আস্বস্ত করলাম আমরা। যাবো না ওখানে।নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেলো ছেলেটা। কিন্তু আহাদকে দেয়া কথা রাখি নি আমরা।কি এক অজানা আকর্ষনে পা টিপে টিপে চলে গিয়েছিলাম সুরঙ্গটার কাছে।বাচ্চাদুটোকে শক্ত করে বেঁধে নিয়েছিলাম ইরা আর আমার পিঠে।
বিশাল একটা সুরঙ্গ মুখ।ভেতরে ঘন কালো অন্ধকার।ঢুকে পড়লাম আমরা সবাই সুরঙ্গটার ভেতর।রাফির হাতে জ্বলন্ত একটা মশাল।তার আলোয় মুখের একপাশ জ্বলজ্বল করছে ওর চাউনি শান্ত, স্থির।কেমন যেনো অন্য জগতের প্রানি মনে হচ্ছে রাফিকে।ঢোক গিললাম ইরা আর আমি।ভেতরের পরিবেশটা বড্ড অস্বস্তিকর কেমন যেনো একটা পঁচা গন্ধ ভেতরে।ভ্যাপসা গরম।হঠাত শুনলাম হিস হিস করে কি যেনো একটা এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।কেঁপে উঠলো পুরো সুরঙ্গটা।ভয়ে বাকহারা হয়ে গেলাম আমরা।
" পালাতে হবে আমাদের " চিৎকার করে উঠলো রাফি।
দৌড়ে বের হয়ে যেতে চাইলাম আমরা সুরঙ্গ থেকে।কিন্তু কপাল খারাপ!! সুরঙ্গ পথটা খুঁজে পেলাম না কোথাও। হারিয়ে গেছে যেনো চোখের পলকে টের পেলাম বিশাল সুরঙ্গটার মাঝে বন্দি হয়ে গেছি আমরা তিনজন।
দ্বিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে দৌড়াতে লাগলাম আমরা। দূরে দেখলাম অন্ধকারে দুটো চোখ জ্বলে উঠেছে হঠাৎ।মারবেলের মতো কুতকুতে দুটো চোখ।হিস হিস করে এগিয়ে আসছে ওটা দ্রুত আমাদের দিকে।
আর একটু কাছে আসতেই বুঝে গেলাম ওটা কি।....এবং শিউরে উঠলাম ভয়াবহ আতঙ্কে।বিশাল একটা সাপ।কি ভয়ানক সেই সরীসৃপ।দৌড়াচ্ছি প্রানপনে।আর আমাদের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে ঐ ভয়াল প্রানীটা।হেলেদুলে সুড়ঙ্গ কাপিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।গিলে খেয়ে ফেলবে আমাদের।
চলবে......!
KAMU SEDANG MEMBACA
প্রতিচ্ছবি ২
Paranormalএ গল্প ত্রপা, রাফি, লিসা আর ইরার।কিংবা দুটো নবজাতক বাচ্চার।এ গল্প জাদুর দুনিয়ার।সেই সঙ্গে পুরো পৃথিবীবাসীরও। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় ভরপুর গল্প। ।। 🙊