পর্ব-১২

171 6 0
                                    

#প্রতিচ্ছবি ২

পর্ব :১২

লেখা : নীলা মনি গোস্বামী

সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিচে নেমে এলাম।তারপর বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।পৃথিবীজুড়ে তখন ঝকঝকে রোদ। সূর্যের আলোয় আলোকিত চারপাশ।
বারান্দার ময়লা পানিটার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম।কুৎসিত জীবগুলো নাড়াচাড়া করছে পানির ভেতর।আর জীবগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে লোকটা।তার চোখে মুখে অদ্ভূত এক পরিতৃপ্তি। তার কোলের ওপর ছটফট করছে বাবু।
অবাক হলাম বেশ।এই লোকটা এখানে এলো কি করে? তার তো দরজার ওপাশে থাকার কথা।।।। ইরা আর রাফিও এসে দাঁড়িয়েছে আমার পেছনে। ওদেরকে দেখে একটুও আবাক হলো না লোকটা।লিসার কথাও জিগ্গেস করলো না। ভাবটা এমন যেনো আগে থেকেই জানে সব কিছু।

" তাহলে তোমরা পেরেছে?? বাহ!!! লুসিফারের বাচ্চাটাকেও দেখি নিয়ে এসেছো।। তোমরা তো দেখি বেশ কাজের।দাও... আয়নাটা আর বাচ্চাটাকে আমার হাতে দাও।" খুশি খুশি গলায় বলে উঠলো লোকটা।

" বাচ্চাটাকে দিয়ে কি করবেন? " ক্ষ্যাপা গলায় বললো রাফি।

- নারিচিনিচের কাছে বলি দেবো বাচ্চা দুটোকে।তারপর আয়নার ভেতর দিয়ে চলে যাবো অন্য দুনিয়াতে।প্রভু লুসিফারের কাছে।

- বাচ্চাদুটো মানি? কি বলছেন এসব?? আর নারিচিনিচ কে??

- নারিচিনিচ হলো তিন পরীর নাম।ওরা তিনজন বোন।স্যালভিয়ান মিথোলোজিতে ওদের কথা উল্লেখ আছে।নবজাতক শিশুর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় ওরা।নবজাতকের ভাগ্য নির্ধারন করে এই তিন দেবী।নারিচিনিচকে খুশি করার জন্য নবজাতক শিশুর বালিশের নিচে সোনার জিনিস - টাকা পয়সা ইত্যাদি দেয়া হতো। ধন সম্পদের আলোকচ্ছটায় খুশি হয়ে উঠতো নারিচিনিচ।মন ভরে আশির্বাদ করতো শিশুদের।এই নারিচিনিচের উদ্দেশ্যে বাচ্চাদুটোকে বলি দেবো আমি।কচি শিশুর রক্ত পেয়ে সন্তুষ্ট হবে ওরা। খুশিি হয়ে বর দিবে আমাকে।আমি অমর হয়ে যাবো।

আঁতকে উঠলাম আমি।।।কি নিষ্ঠুর এই লোক।।নিজের শিশুটার প্রতিও তার এক ফোঁটা দয়া মায়া নেই।

" আর পৃথিবীবাসীর কি হবে? " কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম আমি।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো লোকটা।হাসির দমকে কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো একটু পর পর।অনেক কষ্টে সামলে নিলো নিজেকে।
তারপর ষড়যন্ত্রকারীর মতো বলে উঠলো, "পৃথিবীবাসীকে বাঁচাতে চায় কে? আমি তো মিথ্যে বলেছিলাম তোমাদের।আয়নাটা হাসিল করার জন্য।ওটা আমার পক্ষে আনা সম্ভব ছিলো না।তাই তোমাদের ব্যাবহার করেছি।"

রাগে কেঁপে উঠলো শরীরের ভেতরটা।দাঁত কিড়মিড় করে মারতে গেলাম পিশাচটাকে। কিন্তু পারলাম না।হাত- পা ফ্রিজ হয়ে গেছে।নাড়াতে পারছি না একদমই।

ইরা আর রাফির দিকে তাকালাম।ওদের অবস্থাও একদম আমার মতই। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি আমরা তিনজন।

পিশাচটা চোখ টিপে বললো, " তোমাদের মতো আমিও হালকা পাতলা স্পেল জানি।বডি ফ্রিজিং স্পেলটা কিছুদিন হলো শিখেছি। ভালোই কাজ করে দেখি জিনিসটা।এখন আমি কাজ করবো,আর তোমরা বসে বসে দেখবে। মজা না?? "

কথাটা শেষ করেই লাফিয়ে চলে এলো আমাদের কাছে।ছোঁ মেরে দিয়ে নিলো লুসিফারের বাচ্চাটাকে।যেনো কোন শিকারি পাখি তার শিকারকে নিয়ে নিয়েছে। বাচ্চাদুটোকে ছুঁড়ে ফেললো নোংড়া মেঝের ওপর। ঠান্ডা মেঝের স্পর্শ পেয়ে কেঁদে উঠলো বাচ্চাদুটো।

বাচ্চাদুটোকে ঘিড়ে বিশাল একটা ত্রিভুজ আঁকা হলো।চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া হলো অসংখ্য হাঁড়ের গুঁড়ো।ময়লা পানিতে হাত বাড়িয়ে দিলো লোকটা।বেছে বেছে সবথেকে হৃষ্টপুষ্ট কুৎসিত জীবটাকে তুলে নিলো।জীবটা তার কুৎসিত শুঁড়গুলো দুলিয়ে কিলবিল করছে লোকটা হাতের মুঠোয়।ভেঙ্গে মুচড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো প্রানিটাকে।সেই টুকরোগুলো ছড়িয়ে দিলো শিশুদুটির ওপর।একপাশে গনগনে কয়লা পুড়ছিলো দুমুঠো গরম কয়লা হাতে তুলে নিলো লোকটা।কয়লাগুলো ছড়িয়ে দেয়া হলো শিশু দুটির পেটের ওপর।চিৎকার করে কেঁদে উঠলো বাচ্চাদুটো।কি বেদনা ভরা সেই চিৎকার।।কেঁপে উঠলো আমার বুকের ভেতরটা।গোলাপি চামড়া পুড়ে বাদামি বর্ন ধারন করেছে।কেঁদে কেঁটে অস্থির বাচ্চাদুটো।অসহায়ের মতো দেখছি এসব।কিন্তু কিছুই করতে পারছি না।

চামড়া পুড়ে ধীরে ধীরে ধোঁয়া বের হচ্ছে।ধোয়ার পরিমান ক্রমশ বেড়েই চলেছে।আবাক হয়ে দেখলাম বাচ্চাদুটোকে ঘিরে ছোট্ট একটা ধোয়ার কুন্ডলীর জন্ম হয়েছে। ধোয়ার কুন্ডলীটা ধীরে ধীরে একটা মানুষের রূপ নিলো।কি বিকট সেই চেহারা।।।

চলবে।।।।।

প্রতিচ্ছবি  ২ Where stories live. Discover now