পর্ব -৭

177 9 0
                                    

#প্রতিচ্ছবি  ২

পর্ব - ৭

লেখা:  নীলা মনি গোস্বামী

ভয়ে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো আমার!!!
কি করবো এখন আমি? এবার কি তাহলে সত্যি সত্যিই মারা যাবো আমি??
পাশ থেকে লিসার চিৎকার শুনতে পেলাম- " লাফ দিতে হবে আমাদের।"

ভেতরে ভেতরে চমকে গেলাম ভীষন।মনে পড়ে গেলো সেই দুর্যোগময় রাতের কথা।রাফির কথা।সেদিন রাফিও ঠিক এমনভাবে লাফ দিতে বলেছিলো আমাকে।চোখ ফেটে পানি চলে এলো আমার।ছেলেটা কোথায় আছে,কে জানে!!! কতযুগ হলো তাকে দেখি না।ইরাও হারিয়ে গেছে। আমার প্রানের বান্ধুবী ইরা।

" তুই আগে লাফ দে" - মৃদু স্বরে বললাম লীসাকে।

- না, আগে তুমি।

- না, তুই।

কে আগে লাফ দিবে,এটা নিয়ে একপ্রকার ঝগড়া বেঁধে গেলো আমাদের মাঝে।বোকা মেয়েটার ওপর রাগ হতে লাগলো ভীষন।বিপদের সময় ভালোবাসা দেখাতে হয় না, সহজ সরল মেয়েটা সেই কথা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না।

পুরো ট্রেনটা চলে যাচ্ছে ওটার মুখের ভেতর।জলদিই কিছু করতে হবে।নাহলে খাবার বনে যেতে হবে ঐ কুৎসিত প্রানিটির।
জোরে একটা ধাক্কা দিলাম লিসাকে।ধীরে ধীরে নিচে পড়ে যাচ্চে মেয়েটা।নিচে অথৈ সমুদ্র।হা করে বসে আছে কতগুলো জলজ প্রানী।
লাফ দিতে হবে এবার আমাকে। কিন্তু একী??আমি নড়তে পারছি না কেন? কে যেনো শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার শার্টের হাতা।ভয়ে স্তম্ভিত আমি।।

পাশ ফিরে তাকালাম..... এবং দ্বিতীয় বারের মত কেঁপে উঠলাম ভয়ে। ওটার তিন নাম্বার মাথাটা কামড়ে ধরে আছে আমার শার্টের হাতা।জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখে মুখে তীব্র ক্ষুধা

ধীরে ধীরে টেনে মুখের কাছে নিয়ে আসলো ওটা আমাকে।ওটার নিশ্বসের ঘড়ঘড় শব্দ শুনতে পাচ্ছি স্পষ্টভাবে।গরম নিশ্বাস। দির্গন্ধযুক্ত।

ওটার মুখ থেকে এক ফোটা লালা গড়িয়ে পড়লো আমার মূখের ওপর।গরম আঠালো দুর্গন্ধযুক্ত। ঘেন্নায় মুচড়ে উঠলো পেটের ভেতরটা।

ধীরে ধীরে মুখের ভেতর পুরে ফেলছে ওটা আমাকে।নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি। ছেড়ে দিলাম নিজেকে মৃত্যুর হাতে। বন্ধ করে ফেললাম চোখদুটো।

জীবনের আশা যখন ছেড়ে দিয়েছিলাম,ঠিক তখনি ঘটলো ঘটনাটা।কানের মধ্যে ভেসে উঠলো আবার সেই সুরেলা সঙ্গীত।নাকে ভেসে এলো মিষ্টি মধুর সুগন্ধ।টের পেলাম ওটা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম,কেউ একজন শক্ত হাতে ধরে ফেললো আমাকে।বড় মজবুত সে হাতের বাঁধন। সুঠাম দেহ। হঠাৎ করেই নিজেকে নিরাপদ মনে হতে লাগলো।

চোখ খুললাম ধীরে ধীরে। দেখতে পেলাম সেই মজবুত হাতের মালিককে।অতি পরিচিত চেনাজানা সেই মুখ।আমার অতি আপনজন।চোখে মুখে কি অদ্ভূত পবিত্রতা।হাসিটা কি সুন্দর।চোখদুটো একদম মেয়েদের মত।টানাটানা, পটলচেড়া। হালকা নীলচে চেখের মনি। কাঁচা হলুদের মত গায়ের রঙ। চোখা নাকটার নিচে ছোট একটা তিল। পিঠের ওপর গজিয়ে আছে বিশাল দুটো পাখা।

গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলো, " হাই। "

আনন্দে নেচে উঠলাম আমি।কেমন হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে।সে হাসিতে কাঁপন ধরে গেলো আমার সমস্ত শরীরে। অদ্ভূত এক অনুভুতি ছড়িয়ে পড়লো আমার প্রতিটি শিরা উপসিরায়।টের পেলাম একঝাঁক প্রজাপতি নেচে উঠলো আমার পেটের ভেতর।আলতো করে টেনে দিলাম ওর গুলু গুলু নরম গালদুটো। তারপর কষে দুটো চুমো এঁকে দিলাম ওর গালে।জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।

অভিমান জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলাম, " এতদিন কোথায় ছিলে তুমি রাফি?? কেন হারিয়ে গিয়েছিলে আমার জীবন থেকে?  তুমি কি জানো, আমি তোমাকো কত্তগুলা মিস করতাম???  ""

হেসে উঠলো রাফি। আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো আমার চুলগুলোতে। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো....কিন্তু থেমে গেলো।

দেখলাম তেড়ে আসছে ওটা আমাদের দিকে। গিলে খেতে চাইছে আমাদের।বামদিকের মাথাটা নাই হয়ে গেছে একদম।বাকি দুটো অক্ষত।বুঝলাম রাফির কাজ এটা। রাফি তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।বিড়বিড় করে  কি যেনো আওড়ে যাচ্ছে রাফি।হাতটা গোল করে মেলে ধরলো সামনের দিকে।
অদ্ভুত এক নীলচে রশ্নি বের হয়ে সোজা ছুটে চলে গেলো সাপটার দিকে।

তারপর ধাম করে একটা বিষ্ফোরনের শব্দ হলো।আলোকিত হয়ে গেছে চারদিক।চূর্ন বিচূর্ন হয়ে গেছে ওটার সমস্ত দেহ।টুকরো টুকরো রক্তাত্ব দেহাবশেষ ছিটকে পড়তে লাগলো চারিদিকে।

মারা গেছে ওটা।স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।তারপর হঠাৎ করেই লীসার কথা মনে পড়ে গেলো।মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে।রাফিকে বলতে যাচ্ছিলাম এর কথা,ঠিক তখনি দেখতে পেলাম লীসাকে।

এবং সেই সাথে ইরাকেও।হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসছে ওরা আমাদের দিকে।ইরার পিঠেও দেখলাম  রাফির মত বিশাল বিশাল দুটো ডানা।লীসাকে ধরে রেখেছে সে।

চলবে......!

প্রতিচ্ছবি  ২ Hikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin