পর্ব-১৩

166 4 0
                                    

#প্রতিচ্ছবি  ২

পর্ব -১৩

লেখা : নীলা মনি গোস্বামী

তিনমাথাওয়ালা মানুষ।বিশাল লালচে চুল।ভাটার মত জ্বলজ্বলে চোখ।মুখের ওপর টনসিলের মত অসংখ্য ছোট ছোট গোটা।প্রত্যেকের তিনটে করে চোখ।চেহারায় অদ্ভূত একটা নিষ্ঠুরতা খেলা করছে।বুঝলাম এটাই নারিচিনিচ। তিন বোন।

হা হয়ে গেলো একটার মুখ।মুখ থেকে বের হয়ে এলো লম্বা বিশাল সূচালো জিহ্বাটা।বাচ্চাদুটোকে জিহ্বা দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে তুলে নিতে লাগলো উপরের দিকে। বোধহয় গিলে ফেলবে বাচ্চাদুটোকে।তাড়স্বরে কেঁদে চলেছে অসহায় বাচ্চাদুটো।নিজের অক্ষমতার উপর রাগ হতে লাগলো ভীষন।কিছুই করতে পারছি না  আমি।চোখ ফেটে পানি বের হয়ে এলো।কপালের কাটা দাগটাও চিনচিন করে উঠলো হঠাৎ।সমস্ত শরীর হঠাৎ করেই হালকা হয়ে গেছে।টের পেলাম হাতের নখগুলো ম্যাজিকের মত বড় হয়ে গেছে হঠাৎ। বিশাল সূচালো নখ।

হাত পা গুলোও নাড়াচাড়া করতে পারছি এখন।বুঝলাম বডি ফ্রিজিং স্পেলটা অকেজো হয়ে গেছে।লাফ দিয়ে চলে এলাম নারিচিনিচের  কাছে।শয়তানটা বাঁধা দিতে চাইলো আমাকে।তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম ময়লা পানির ওপর।ধারালো নখগুলো দিয়ে খামচে ধরলাম নারিচিনিচের জিহ্বা।নখের আঁচরে জিহ্বা কেটে দুভাগ হয়ে গেলো।বাচ্চাদুটো ছিটকে আমার হাতে চলে এলো।

রাগে ফুঁসছে নারিচিনিচ। রক্তচক্ষু মেলে শয়তানটার কাছে উরে চলে এলো নারিচিনিচ।আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠলো লোকটা।নারিচিনিচকে  ডেকে এনেছিলো সে।।ভালোমন্দ সব ফল এখন তাকেই ভোগ করতে হবে।কেমন অসহায় দেখাচ্ছে লোকটাকে। মুখটা একেবারে চিমসে গেছে।অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।রাশিদের কথা মনে পড়ে গেলো।বহুদিন আগে ক্ষমতার লোভে রাশিদেরও এমন মর্মান্তিক পরিনতি হয়েছিলো।

টেনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলা হলো লোকটাকে। অদৃশ্য হয়ে গেলো নারীচিনিচ।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাবলাম বিপদ বুঝি এযাত্রায় কেটে গেছে। কিন্তু না।পরক্ষনেই ভুল ভেঙ্গে গেলো।কেঁপে উঠলো পুরো বিল্ডিঙটা হঠাৎ।প্রবল বেগে নড়ছে।টের পেলাম নিচের দিকে ডেবে যাচ্ছে বিল্ডিংটা।বারান্দার ময়লা পানির মধ্যে আচমকা স্রোতের সৃষ্টি হলো।পানির ভেতরের কুৎসিত প্রানিগুলো প্রবল বেগে দাপাদাপি করছে।পানির স্রোত ক্রমশ বেড়েই চলেছে।ভেসে যাচ্ছে পুরো বিল্ডিং।দেয়াল থেকে সিমেন্ট ইটের স্তর খসে পড়লো কয়েক পরত।ছাদ থেকে ধস নামলো চোখা পাথরের।গরম হাওয়া বের হচ্ছে।চোখ অন্ধকার হয়ে এলো আমার।বসে পড়লাম ভেজা মেঝের ওপর। টের পেলাম জীবন্ত কী যেনো একটা দৌড়ে চলে গেলো আমার পাশ দিয়ে। রাফি আমার হাত ধরে টান দিলো।ইশারা করলো উঠতে।বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম।ইরা বাচ্চাদুটোকে আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো। ছুটে চলেছি আমরা সামনের দিকে হঠাৎ করেই পথটা কেমন যেনো উঁচু হয়ে গেছে।
লাফ দিয়ে দিয়ে সামনে এগুচ্ছি আমরা। আচমকা টের পেলাম পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। মাটি ফেটে দুভাগ হয়ে যাচ্ছে। বহু কষ্টে কিনারা ধরে ঝুলে রইলাম।
টের পেলাম মাটির নিচ থেকে তীব্রবেগে পানির স্রোত উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।সেই স্রোতের ভেতর কিলবিল করছে অসংখ্য বিকটা জলজ।হা হয়ে আছে এদের মুখ।আতঙ্কে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি।রাফি আর ইরা আমার দুহাত ধরে হ্যাঁচকা একটা টান দিলো।উঠে গেলাম উপরে।

মাটি থেকে ক'হাত উপরে শূন্যে ভাসছি আমরা। তিনজনেরই পিঠে বিশাল ডানা।ধীরে ধীরে উপরে উঠে যাচ্ছি আমরা।স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম।

নিচের দিকে তাকিয়ে শিহরিত হয়ে উঠলাম।গোটা বিল্ডিংটা ডুবে গেছে পানির নিচে।পানি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।চারদিকে অথৈ সমুদ্র।পানির রাজ্য।দেখে একদমই বোঝা যাচ্ছে না যে ,মিনিট দশেক আগেও এখানে বিশাল একটি দূর্গ ছিলো।। পাপের সম্রাজ্যের কি সুন্দর পতন নিজের চোখে দেখলাম।  শিহরিত হয়ে উঠলাম আমি।।।

চলবে..........।।

প্রতিচ্ছবি  ২ Where stories live. Discover now