পর্ব-১০

165 7 0
                                    

#প্রতিচ্ছবি  ২
পর্ব :১০

লেখা : নীলা মনি গোস্বামী।

ভক করে বিকট একটা গন্ধ এসে ধাক্কা মারলো নাকের ভেতর।পেটের নাড়িভুড়ি উল্টে যাচ্ছে একদম।
ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে আছে ভেতরটা।মোমবাতির আলো যেন অন্ধকারকে আরও বেশী গাঢ়ো করে তুলেছে।দূরে ছায়ামতো কি যেনো দেখতে পেলাম।নড়েচড়ে উঠলো হঠাৎ।গোঙাচ্ছে। চাপা স্বরে কাঁদছে।পা টিপে টিপে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ছায়াটার দিকে।
পাশ থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো লিসা।চমকে উঠে পিছিয়ে গেলাম আমি।

ধস্তাধস্তির শব্দ কানে এলো।ঘষটানোর একটা শব্দও শুনতে পাচ্ছি। খুব কাছেই। মনে হলো ভয়াবহ যন্ত্রনায় কে যেনো কাতরাচ্ছে।ঠান্ডা কনকনে একটা অনুভূতি হতে লাগলো।
ধস্তাধস্তির শব্দটাও বেড়েগেছে দ্বিগুনভাবে। গলা ফাটিয়ে একনাগাড়ে চিৎকার করছে লিসা।
ক্ষুব্ধ বাঘের গর্জন কানে এলো।কেঁপে উঠলো পুরো বিল্ডিংটা।

লিসার মরন চিৎকার শুনতে পেলাম।
তারপর সব ঠান্ডা।হঠাৎ করে মৃত্যুপূরীর নিরবতা নেমে এলো চারিদিকে।নিজের হার্টবিট গুলাও স্পষ্টভাবে শুনতে পাচ্ছিলাম।
বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো ভীষনভাবে। লিসার কি কিছু হয়ে গেলো তাহলে???

মাথার ভেতরটা হালকা হয়ে গেছে একদম।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

কতক্ষন বিমূড়ের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম,জানি না।হঠাত খেয়াল করলাম সমস্ত ঘড় আলোকিত হয়ে গেছে।উজ্জ্বল আলোয় ভেসে যাচ্ছে সমস্ত ঘড়।
বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়ছে ইরা।আর তার হাত থেকে আলোমত কি যেনো একটা ঠিকরে বের হয়ে আলোকিত করে দিচ্ছে সমস্ত ঘর।
রাফি পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা একেবারে স্তব্ধ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।নিচের দিকে তাকালাম।.......এবং কেঁপে উঠলাম।লিসার প্রানহীন দেহটা নিচে পড়ে আছে।রক্তাত্ব ক্ষতবিক্ষত।চোখ দুটো ফেটে বের হয়ে যেতে চাইছে।তার রক্তাক্ত দেহের ওপর হামলে পড়ে আছে বিশাল বাঘিনীটা।হাড়জিড়জিড়ে দেহ। খুটে খুটে খাচ্ছে লিসার দেহটা।বহুদিনপর মনে হয় মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়েছে সে।

রাগে - দুঃখে দপদপ করে উঠলো মাথার ভেতরটা।কপালের কাটা দাগটাও চিনচিন করছে আবার।

গলা ফুড়ে তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার বের হয়ে এলো।নিজের চিৎকার শুনে নিজেই চমকে উঠলাম।ক্ষীপ্রবেগে লাফিয়ে উঠে বসলাম বাঘিনীটার গায়ের উপর।টেনে ধরলাম ওটার মাথা।ঘড়ঘড়ে শ্লেষ্মা জড়ানো গলায় গর্জন করে প্রতিবাদ জানালো বাঘিনীটা।ওটার গর্জন শুনে রাগ আরও দ্বিগুনভাবে বেড়ে গেছে। দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো মাথার ভেতরটায়।প্রচন্ড আক্রোশে মুচড়ে দিলাম ওটার ছোট্ট মাথাটা।হাড় ভাঙ্গার শব্দ কানে এলো।ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে ওটার মাথাটা।মারা গেছে খুনী হিংস্র শয়তানটা।ওটার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো একটা তৃপ্তি পাচ্ছিলাম।গায়ের সমস্ত শক্তি এক করে ওটার মাথাটা ধরে একটা টান দিলাম।একটানে ছিড়ে হাতে চলে এলো ওটার মাথাটা।গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো।

গোঙানির শব্দ কানে আসছে আবার।চমকে তাকালাম সামনের দিকে।হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে গোঙাচ্ছে একটা  মেয়ে। কাঁপছে একটু পরপর।তারপাশেই বিশাল আয়নাটা শোভা পাচ্ছে।ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকালো মেয়েটা।তার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আমি।
ইরা - রাফিও চমকে গেছে একদম।

নীরা ওটা।সেই চোখ,সেই নাক,কান,মুখ,পাতলা ঠোঁট!!! সব আগের মতই আছে।

ধ্বক করে উঠলো বুকের ভেতরটা!!  কিন্তু একি করে সম্ভব?  ওতো মারা গিয়েছিলো।। তাহলে এখানে আসলো কি করে?? 

আমাদের দিকে তাকিয়ে একটু যেনো হাসলো নীরা।

চলবে.......

প্রতিচ্ছবি  ২ Where stories live. Discover now