#প্রতিচ্ছবি ২
পর্ব :১১
লেখা : নীলা মনি গোস্বামীআমাদের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো, " তোরা এসেছিস?? দেখ না....আমার কি অবস্থা হয়েছে।"
নীরা দিকে তাকিয়ে বেশ কষ্ট লাগছিলো।শুকিয়ে গেছে মেয়েটা একদম। মলিন হয়ে গেছে গায়ের রঙ।দাঁতগুলো কালো বর্ন ধারন করেছে । হয়তো অনেকদিন ব্রাশ করে না,এজন্য।
ইরাকে দেখলাম একবুক ভালোবাসা নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে ওর বোনের দিকে। রাফি বাঁধা দিলো , শুনলো না মেয়েটা।
মাঝপথে গিয়ে হঠাত থমকে গেলো মেয়েটা।হা হয়ে গেছে ওর মুখ একেবারে।ভয়ে মুখটা ফ্যাকাশে বর্ন ধারন করেছে।নীরার মুখটা হঠাৎ করেই বদলে গেছে। চোখের মনি দুটো সাদা বর্ন ধারন করেছে।সমস্ত মুখে অসংখ্য ক্ষতের চিহ্ন।চুলগুলো কেমন ধূসর বর্ন ধারন করেছে।ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালো নীরা।পেটটা বাজেভাবে ফুলে আছে।টিঙটিঙে শরীরের সাথে বিশাল পেটটা বড্ড বেমানান লাগছে।
মাতালের মত হেলেদুলে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।কাছে চলে এসেছে অনেক।অবাক হয়ে খেয়াল করলাম,মেয়েটা আসলে নীরা না।ওটা আমার মা।আতঙ্কে শিউরে উঠলাম আমি।।।একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি মায়ের দিকে।চোখ সরাতে পারছি না।ফুলে উঠা পেটটা নিয়ে হাটতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে মায়ের।খুড়িয়ে খুড়িয়ে বিলাপ করতে করতে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।হঠাৎ হোচট খেয়ে নিচে পড়ে গেলো মা।ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।আর ধরে রাখতে পারলাম না নিজেকে।দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেলাম।আমার হাত ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো মা।স্ফীত একটা হাসি দিলো মা।কি কোমল, কি পবিত্র সেই হাসি।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।কপালে একটা চুমো এঁকে দিলো মা।তারপর হাতটা ধরে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।টের পেলাম মা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে।হাতের বাঁধন ক্রমশ কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে।মায়ের লম্বা নখগুলো ডেবে যাচ্ছে চামড়ার ভেতর।" ছাড়ো মা, ব্যাথা পাচ্ছি " - চেঁচিয়ে উঠলাম আমি।
মায়ের সেদিকে একদমই ভ্রুক্ষেপ নেই।পৈশাচিক একটা হাসি দিলো মা আমার দিকে তাকিয়ে।হাসির সাথে তার লকলকে কালো জিহ্বাটা বের হয়ে এলো। চামড়া ভেদ করে মাংসের ভেতর ঢুকে গেছে মায়ের সূচালো নখগুলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম মায়ের চেহারাটা বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখদুটো হঠাৎ করেই কেমন যেনো হলদেটে বর্ন ধারন করেছে। শূন্য দৃষ্টি। ঠোঁট ভেদ করে দুটো সূচালো শ্বদন্ত বের হয়ে এসেছে।মুখটা একদম কাগজের মত ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মাকে দেখতে একদম ভ্যাম্পায়ারের মত লাগছে।নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে তার।
হঠাৎ আমার হাত থেকে খামচি দিয়ে একখাবলা মাংস তুলে নিলো মা।তারপর বদ্ধউন্মাদীনির মত হাসতে হাসতে কাঁচা মাংসটা মুখে পুরে দিলো। এবং ... কচ্কচ্ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেললো।
আতঙ্কে ছিটকে পেছনে সরে গেলাম।দৌড়ে পালাতে চাইলাম।মা লাফ দিয়ে ধরে ফেললো আমাকে।অবাক হয়ে খেয়াল করলাম,যাকে মা ভেবে ভুল করেছিলাম,সে আসলে মা না।অন্য কেউ।মায়ের চেহারার সাথে কোন মিল নেই এই মানুষটার।হঠাৎ করেই বুঝে গেলাম এসব শয়তানের ছলাকলা।আমাদের নিয়ে খেলছে সে।মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে একদম।কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম ওটা আমার ঘাড়ে বিশাল একটা কামড় বসিয়ে দিয়েছে। কামড়িয়ে ছিড়ে ফেললো আমার ঘাড়ের একদলা মাংস।গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো ঘাড় থেকে।মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে একদম।
চকিতে খেয়াল করলাম রাফি পা টিপে টিপে ওটার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। হ্যাঁচকাটান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো আমাকে।রাগে ফুসফুস করছে ওটা।আমাকে ছেড়ে রাফির দিকে তেড়ে গেলো। তারপর এক কামড়ে তুলে নিলো ওর গালের মাংস।তীব্র ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো রাফি। দূরে একটা ধারালো ছুরিমত দেখা যাচ্ছিলো।ইরা সেটা দৌড়ে তুলে নিলো।তারপর বসিয়ে দিলো ওটার গলায়।একটানে দু'ফাক হয়ে গেলো পিশাচীটার গলা।ছেড়ে দিলো রাফিকে।তারপর হাতপা ঝাপটাতে ঝাপটাতে নিচে পড়ে গেলো।একসময় নিস্তেজ হয়ে গেলো পিশাচীটা।বুঝলাম মারা গেছে।তবুও রিস্ক নিতে চাইলাম না। পাশে রাখা ভারি টেবিলটা তুলে নিলাম।তারপর ছুড়ে ফেলে দিলাম ওটার মাথার ওপর।মূহুর্তের মধ্যেই থেঁতলে মাটির সাথে মিশে গেলো ওটার মাথাটা।আয়নাটা হাতে তুলে নিয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম।বের হয়ে যাচ্ছিলাম ঘড় থেকে, হঠাৎ মাঝপথে থমকে গেলাম আমরা।ছোট্ট একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ কানে এলো।চমকে পিছনে তাকালাম।বিষ্ফোরিত হয়ে খেয়াল করলাম মৃত মেয়েটা এই মাত্র ফুটফুটে একটা বাচ্চা প্রসব করেছে।
রাফি তেড়ে গেলো বাচ্চাটাকে মারার জন্য।বাঁধা দিলাম ওকে।বাচ্চাটাকে মারার জন্য কেনো যেনো মন সায় দিচ্ছে না। রক্তাত্ব বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলাম।কি সুন্দর মায়াময় চেহারা।ছোট্ট শরীর। গুটুগুটু হাত- পা।সবুজ পান্নার মত চোখ দুটো মেলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
"লুসিফারের বাচ্চা এটা।এটাকে এই মূহুর্তেই মেরে ফেলতে হবে। " - ক্ষীপ্র গতিতে বলল ইরা।রাফিও যথেষ্ট অসন্তুষ্ট আমার এহেন কাজের জন্য। রাগে গজগজ করছে ছেলেটা।
শুনলাম না ওদের কথা।বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে এলাম ঘর থেকে।চলবে........!!
ŞİMDİ OKUDUĞUN
প্রতিচ্ছবি ২
Paranormalএ গল্প ত্রপা, রাফি, লিসা আর ইরার।কিংবা দুটো নবজাতক বাচ্চার।এ গল্প জাদুর দুনিয়ার।সেই সঙ্গে পুরো পৃথিবীবাসীরও। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় ভরপুর গল্প। ।। 🙊