#প্রতিচ্ছবি ২
#পর্ব:১৮
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
"দ্রুত বের হতে হবে,নাহলে পঁচে গলে মারা যাব। এখানেই। " হতাশ ভঙ্গিতে বললো রাফি।
আমি কিছু বললাম না।আসলে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে ভীষন।শক্তি পাচ্ছি না শরীরে।আজ সারাদিন ঘুমিয়েছি আমরা।তবুও ঘুম ফুরোতে চায় না।চোখ খুলতে পারি না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নানান হাবিজাবি স্বপ্ন দেখি।মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যায়।চমকে তাকাই চারিদিকে।তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
দুদিন পর হঠাৎ পানির শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার।টপ টপ শব্দে পানি পড়ছে কোথাও।টের পেলাম।ঘরের একেবারে শেষ কোন থেকে শব্দটা আসছে।গল গল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।জোড় করে চোখ খুলে উঠে বসলাম।পানি খেতে হবে আমার। ওদেরকেও খাওয়াতে হবে।
শরীরের সব শক্তি সন্ঞ্চয় করে দৌড়ে গেলাম ঘরের শেষ কোনায়।প্রানভরে পানি খেলাম।তারপর অন্ঞ্জলি ভরে পানি নিয়ে নিলাম।ওদের জন্য।দৌড়ে যেতে চাইলাম ওদের কাছে।কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো ঘরের মাঝপথে যাওয়ার পর।মাঝপথে আসতেই নির্জিব হয়ে গেলো সমস্ত শরীর।কে যেনো শুষে নিয়েছে আমার সমস্ত শক্তি।হাত থেকে ঝড়ে পড়লো সব পানি।হাটু ভেঙ্গে বসে পড়লাম মাটিতে।রাফির দিকে নাজর গেলো।কাতরাচ্ছে ছেলেটা পানির অভাবে।
হামাগুরি দিয়ে চলে গেলাম আবার পানির উৎসের দিকে।আবার পানি নিয়ে নিলাম।শক্তি ফিরে এসেছে আবার।এরপর নিষ্ঠুর এক খেলা চলতে লাগলো।প্রতিবার ঘরের মাঝখানে এলেই শক্তিহীন হয়ে পড়ি আমি।কে যেনো কেড়ে নেয় আমার সমস্ত শক্তি।পানির কাছাকাছি চলে আসলেই আবার শক্তি ফিরে পাই।হতাশায় কেঁদে ফেললাম আমি।চোখ ফেটে পানি বের হয়ে এলো।টেনে হিঁচড়ে নিজের নির্জীব শরীরটাকে নিয়ে গেলাম রাফির কাছে।চোখ বন্ধ করে কাতরাচ্ছে ছেলেটা পানির জন্য।উপুর হয়ে ঝুঁকে পড়লাম ওর ওপর।আমার চোখের কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো রাফির ঠোঁটে।তৃষ্ণার্তের মতো চেটেপুটে খেয়ে ফেললো লবনাক্ত চোখের পানি।বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো আমার।চোখের পানি পান করে একটু যেনো সুস্হ হলো রাফি।দু'জন মিলে টেনে হিঁচড়ে ইরা আর বাচ্চাদুটোকে নিয়ে এলাম পানির কাছে।কষ্টে সিষ্টে তাদের পানি খাইয়ে দিলাম।
এভাবেই কেটে গেলো দুদিন।তিন দিনের মাথায় বাবু মারা গেলো।যাকে নিজ হাতে পৃথিবীতে এনেছিলাম আমি।বহু চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি। দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছিলো বুকের ভেতরটা।বাবুর দেহটাকে কোলে নিয়ে বিলাপ করে উঠলাম আমি।ঠিকমতো কাঁদতেও পারছি না।কাঁদার শক্তিটাও হারিয়ে ফেলেছি।মনো হচ্ছিলো নিজের বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে।শরীর নির্জীব। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম।কিছুক্ষনের জন্য ঘুম ভাঙ্গে।েএকটুখানি চোখ খুলে কাঁদি।আবার ঘুমাই।এভাবেই চলছিলো।বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম।মৃত্যু কামনা করছিলাম নিজের।
আমরা এখন হাঁটতে পারি না।হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়।কোনমতে হা করে পানি গিলি আর ঘুমাই।বিভৎস লাশ পঁচা গন্ধ,গরম, ঘুম,দুর্বলতা- সব মিলিয়ে নরক সমান অবস্হা আমাদের।পাশেই বাবুর লাশ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সাদা ফেনা আর অসংখ্য কিট দিয়ে ছেয়ে আছে বাবুর দেহ।কী যে বিভৎস অবস্থা।।
দুদিন পর.........
আধো ঘুম, আধো জাগরনে দিন পার হচ্ছিলো আমাদের।সকালের দিকে হঠাৎ ডানা ঝাপটানোর শব্দে ঘুম ভাঙলো।কি যেনো একটা এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সামনে।চোখ খুলে তাকাতে পারছিলাম না।তবুও বহু কষ্টে চোখ খুললাম।
......এবং চমকে উঠলাম চরমভাবে।
চলবে........!
YOU ARE READING
প্রতিচ্ছবি ২
Paranormalএ গল্প ত্রপা, রাফি, লিসা আর ইরার।কিংবা দুটো নবজাতক বাচ্চার।এ গল্প জাদুর দুনিয়ার।সেই সঙ্গে পুরো পৃথিবীবাসীরও। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় ভরপুর গল্প। ।। 🙊