পর্ব -১

800 21 1
                                    

প্রতিচ্ছবি ২

লেখা: নীলা মনি গোস্বামী

পর্ব :১

অবশেষে আমি পেরেছি। বের হতে পেরেছি সেই নারকীয় বন্দিশালা থেকে। সকাল থেকেই সেদিন মনটা খারাপ ছিলো অনেক।রাফিকে মিস করছিলাম ভীষন। মনে পরছিলো ইরা - নীরার কথা। মায়ের কথা মনে পড়ছিলো বার বার। চোখ ফেটে কান্না চলে আসছিলো। মাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদতে পারলে ভালো হতো। রাগ লাগছিলো অনেক। তারপর হঠাৎ করেই কি যেনো হলো। কপালের সেই চিনচিনে ব্যাথাটা আবার ফিরে এলো। কোথা থেকে যেনো অমানুষিক শক্তি এসে ভর করলো আমার গায়ের ভেতর। হিংস্রতার সাথে হাতে পায়ে বাঁধা লোহার শেকলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম সেদিন। তারপর দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলেছিলাম বিশাল দরজাটা।

সেদিন লম্পট ডাক্তারটা ছাড়া আর কেউ ছিলো না হাসপাতালে। তাই অনায়াসে কোন বাঁধা ছাড়া বের হয়ে আসতে পেরেছিলাম। অবশ্য হসপিটাল ভর্তি লোক থাকলেও আমার কিছু আসে যায় না। কেননা আমাকে বাধা দেয়ার সাধ্য কারো নেই। আমি ওদের মত সাধারন মানুষ না। অন্য ভুবনের ভয়ানক শক্তির অধিকারিনী এক মানবী আমি।...... আমি ত্রপা। সপ্তর্ষি মেহজাবিন ত্রপা। এবং এটা আমার গল্প।

হসপিটাল থেকে পালিয়ে সোজা চলে এসেছিলাম একটি জনবহুল শপিংমলের ভেতর। কিছু শপিং করা দরকার। এসব ফকিরের মত কাপড় চোপড় পড়ে হাটা যাবে না রাস্তায়। পালিয়ে আসার সময় ডাক্তার ব্যাটার কাছ থেকে বেশ ক'টা টাকা বাগাতে পেরেছিলাম। অনেকগুলো টাকা ছিলো ব্যাটার পকেটে আর টেবিলের ড্রয়ারে। সব নিয়ে নিয়েছি। ভয়ের চোটে একটু টু শব্দটিও করেনি ব্যাটা। বেশ ক'দিন আরামসে চলে যাবে সেই টাকা দিয়ে।

আশেপাশের মানুষগুলো কেমন কেমন করে যেনো তাকচ্ছিলো আমার দিকে। পাত্তা দিলাম না। দ্রুত ক'টা সস্তা জামা কিনে নিলাম।ওয়াশরুমে গিয়ে বদলে নিলাম পরনের জামাটা।

মুহুর্তের মধ্যেই মনটা কেমন যেনো ফুরফুরে হয়ে গেলো আমার। আহ!!!! আজ কত দিন পর মুক্ত আমি!!!! চারদেয়ালের মাঝে বন্দি থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম একদম। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলাম।টের পেলাম পেট ভর্তি ক্ষুধা আমার। খেতে হবে কিছু। নাহলে শান্তি হবে না আমার। পাশেই বিশাল একটা ফাস্ট ফুড শপ ছিলো। গিয়ে বসলাম সেখানে। একগাদা কতগুলো খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম।অনেক খাবো আজ। মনের সাধ মিটিয়ে খাবো....তারপর পরবর্তী পরিকল্পনার ছক আঁটবো।

রেস্টুরেন্ট ভর্তি গিজগিজ করছে অসংখ্য মানুষ। তাদের কথাবার্তা, হাসি -গান ঠাট্টায় পুরো রেস্টুরেন্ট সরগরম। ভালোই লাগছে দেখতে। গালে হাত দিয়ে দেখছি..... আর হাসছি। কতদিন পর এসব দেখার ভাগ্য হলো আমার। যা দেখছি.... তা-ই দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।

বিশাল স্ক্রিনের টিভিটার দিকে নজর গেলো আমার। সস্তা দরের একটা সিরিয়াল চলছে। মুখভর্তি মেকআপ আর ভারি ভারি গহনা পরে দুটো মহিলা অনবরত ঝগড়া করে চলেছে। হাসি পেয়ে গেলো আমার। গালে হাত দিয়ে দেখছিলাম ওদের ঝগড়া।
তারপর হঠাৎ কি যেনো হলো...!! সিরিয়ালটা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেলো । বদলে গেলো দৃশ্যপট। টিভির পর্দায় ভেসে উঠলো হাসিখুশি তরুন এক যুবকের মুখ। সুদর্শন এক প্রানবন্ত তরুন। দেখলেই কেমন যেনো মায়া মায়া লাগে।

কথা বলে উঠলো ছেলেটা - " দুঃখিত, মাঝপথে সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার জন্য। আসলে আমাদের সবার সামনে আজ বিশাল একটি বিপদ এসে দাড়িয়েছে। সমগ্র মানবজাতি আজ হুমকির সম্মুখীন। আমরা বিপদটা মোকাবেলার চেষ্টা করছি । আপনাদের নিরাপত্তার জন্য বলছি... দয়া করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঘর থেকে বের হবেন না কেউ। আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকুন। খেয়াল রাখুন আপনজনদের। "

থমকে গেলাম আমি। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, ব্যাপারটা কি হলো। আশেপাশের পরিবেশটাও কেমন যেনো নিরব হয়ে গেছে হঠাৎ। সবাই মনে হয় আমার মতোই স্তব্ধ হয়ে গেছে।

চাপা একটা অস্বস্তি নিয়ে তাকালাম পাশের টেবিলের দিকে। কেউ নেই সেখানে।।। চমকে গেলাম আমি।।

এবং........ ভয়ে কেঁপে উঠলো আমার বুকের ভেতরটা।আবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম পুরো রেষ্টুরেন্ট জুড়ে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।।। হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে সবাই।

তড়িৎ গতিতে উঠে পড়লাম আমি।এখনি বের হয়ে যেতে হবে এখান থেকে। এবং....... ঠিক তখনি ঘটলো ঘটনাটা। গোটা রেষ্টুরেন্ট ডুবে গেলো অন্ধকারে। নিকষ কালো অন্ধকার। কারেন্ট চলে গেছে।।।

জনমানবহীন এই বিশাল জায়গাটাতে এখন আমি একা। কেঁপে উঠলো বুকের ভেতরটা।

চলবে......।।

প্রতিচ্ছবি  ২ Tahanan ng mga kuwento. Tumuklas ngayon