প্রতিচ্ছবি ২
পর্ব :১৪
লেখা : নীলা মনি গোস্বামী
পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে।যেনো আকাশের সাথে মিশে যেতে চাইছে পানি।সূর্য তখন লালচে আলো ছড়াচ্ছে।আর আমরা তিনজন হাত ধরাধরি করে উড়ে যাচ্ছি সামনের দিকে।নিরাপদ বসতির সন্ধানে। কোলের বাচ্চাদুটো ছটফট করছে। ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছে। খাওয়ার ব্যাবস্হা করতে হবে।
অনেক কাজ বাকি আমাদের। যেতে হবে বহুদূর।হয়তো পৃথিবীর কোন এক কোনে বেঁচে আছে কিছু মানুষ।তাদের বাঁচাতে হবে। নিয়ে যেতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ে।
নীরব রাত।আকাশের কুচকুচে কালো গায়ের উপর পরোটার মতো ঝুলে আছে একফালি চাঁদ।কোমল একটা আলো ছড়াচ্ছে।নীচে সবুজাভ পানি গর্জাচ্ছে নিষ্ফল আক্রোশে। দূরে দ্বীপের মতো কি যেনো একটা দেখা যাচ্ছে।কুয়াশা জমাট বেঁধে আছে ভূখন্ডটার ওপর।সেদিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষলো ইরা।
" চলো আপাতত এখানে নেমে পড়ি।বাচ্চাদের খাবারের ব্যাবস্হা করতে হবে।আমাদের নিজেদেরও কিছু খেতে হবে। অনেক ক্লান্ত আমি।কতক্ষন ধরে উরে চলেছি।আর সামনে যেতে পারবো না। " - ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো ইরা।
নেমে পড়লাম তিনজন নিচে।নির্জন একটা দ্বিপ।পাশেই একটা বিশাল হ্রদ।হ্রদ ভর্তি টলটলে পানি।ছুটে যাচ্ছিলাম পানির ধারে।হাত মুখ ধুতে হবে।অনেক ক্রান্ত আমি।মাঝপথে ইরা হাত ধরে থামিয়ে দিলো আমাকে। সামনের বিশাল সাইনবোর্ডটার দিকে হাত ইশারা করে দেখালো আমাকে।
ময়লা একটা সাইনবোর্ড।সামনের লেকটার ব্যাপারে হাবিজাবি কিসব যেনো লেখা আছে।কিছু সতর্কবানীও দেয়া আছে।একজায়গায় চোখ আটকে গেলো।বড় বড় অক্ষরে লেকের নাম দেয়া আছে।নায়ং ইয়াং!!
আঁতকে উঠলাম আমি।বড় বড় চোখ করে তাকালাম রাফির দিকে।ফিসফিস করে বলে উঠলো রাফি, " লেক অব নো রিটার্ন "!
উড়ে উড়ে কখন যে বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে চলে এসেছি, টের পাইনি একদম।কাটা দিয়ে উঠলো শরীরের ভেতরটা।১.৪ কি.মি দৈর্ঘ্য আর ০.৮ কিমি প্রস্থের এই লেকটিকে নিয়ে প্রচলিত আছে নানান ভূতুরে কাহিনী। ১৯৮২ সালে সীমান্ত শহর পানসাউ এলাকায় চাইনিজ আর্মির রসদ আনা নেয়ার জন্য বানানো হয়েছিলো সড়কটি।স্থানীয়রা বিশ্বাস করে এই লেকে নাকি বিশাল এক রাক্ষুসে সাপ বাস করে।গিলে খায় সবাইকে।মাঝে মাঝেই পঁচা গলা লাশ পাওয়া যায়। বিশাল চোরাবালির ফাঁদ আছে এখানে।মারা গেছে কয়েক শতাধিক লোক।কেউ ফিরে যেতে পারে না এখান থেকে।ভারতীয় উপমহাদেশের বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল নামে পরিচিত এই হ্রদ।না ফেরার এই হ্রদকে নিয়ে প্রচলিত আছে নানান ভয়াল উপকথা।
ইরা মুখ পানসে করে বললো, " চল কেটে পড়ি এখান থেকে। ভালো লাগছে না আমার।"
আমারও কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো বিশাল কোন বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।চলে যাচ্ছিলাম আমরা, ঠিক তখনি ঘটলো ঘটনাটা।কোথা থেকে যেনো ভয়াল কন্ঠে একটা নেকড়ে ডেকে উঠলো।জমে গেলাম ভয়ে একদম।গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে এলো মোটাতাজা নেকড়েটা। অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে তার চোখদুটো।
চলবে....
ESTÁS LEYENDO
প্রতিচ্ছবি ২
Paranormalএ গল্প ত্রপা, রাফি, লিসা আর ইরার।কিংবা দুটো নবজাতক বাচ্চার।এ গল্প জাদুর দুনিয়ার।সেই সঙ্গে পুরো পৃথিবীবাসীরও। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় ভরপুর গল্প। ।। 🙊