ইশিকার মনটা খুবই খারাপ। অভ্র আজ রাত ১১টার ফ্লাইটে চলে যাচ্ছে। ঘরের বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইশিকা। অন্যমনস্ক হয়ে আছে সে। রাতের ডিনারটাও করেনি ইশিকা। বারান্দার দরজা দিয়ে ঘরের ভিতরের দেয়াল ঘড়িটার দিকে দেখল। দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট। আর মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিট। এরপর অভ্র চলে যাবে এদেশ ছেড়ে অন্য কোনো রাজ্যে। আচ্ছা ইশিকা এতটা ভাবছে কেন? নিজেকে তো ইশিকা সবসময় শাসিয়ে রাখে। নিজেকে না বলে বরং বলা উচিৎ ইশিকার হৃদকোঠাটাকে। তাও কেন যেন মন মানতে চায় না। ইশিকা ভাবতে লাগল,
"আজকের তারিখটা যেন কত? মনেও পড়ছে না। এতোটা ভুলো মন তো আমার না। শেষে কি না আজকের তারিখ ভুলে গেলাম! ও হ্যা, মনে পরেছে আজকে তো ২২/৪। ২২ তারিখ আজকে? হায় আল্লাহ! আমার তো ২৪ তারিখে এক্সাম। আর আমি কি না পড়তে না বসে কিসব ভাবছি? মারো গুল্লি অভ্রর বিদেশ যাওয়ার। আগে পড়াশোনা তারপর সব।"
এই বলে ইশিকা বারান্দা থেকে গিয়ে সোজা পড়ার টেবিলে বসল। প্রথমেই বাংলা ১ম পত্র। অভ্রর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পড়তে বসল। ইশিকা প্রায় রাত তিনটা পর্যন্ত পড়ে ঘুমাতে গেল।
...............
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন পেড়িয়ে গেল। ইশিকার এসএসসি এর রেজাল্ট বেশ ভালো। বি এ এফ শাহীন কলেজে ভর্তি হয়ে গেল।
ইশিকা ভেবেছিল সময়ের সাথে সাথে হয়তো অভ্র ইশিকার মন থেকে মুছে যাবে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়। যতই দিন যাচ্ছে এই ছেলেটা মন থেকে দূর হওয়ার বদলে আরো যেন গেড়ে বসছে। আগে তো সে একটা খুঁটির উপর ঘর বানিয়ে থাকছিল। কিন্তু এখন খুঁটির জায়গায় মনে হচ্ছে একেবারে পাকাপোক্ত পাইলিং দিয়ে এপার্টমেন্ট বানিয়ে থাকার বন্দবস্ত করছে।যাকে ভেঙে ফেলা প্রায় অসম্ভব।
অভ্রকে ছাড়া যে ইশিকা থাকতে পারবে না তা সে এই এক বছরেই বুঝেছে। ভালোবাসাটা যেন গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। তাই ইশিকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অভ্রকে হ্যা বলে দিবে। ওর মন বলছে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। এই এক বছরে এমন একটা দিনও খুঁজে বের করা যাবে না যেদিন ইশিকা অভ্রর কথা ভাবে নি। কিন্তু অভ্রর সাথে ইশিকা যোগাযোগ করবে কিভাবে? কোনো রাস্তাই তো নেই। এই এক বছরে অভ্রও কি ইশিকার মতো প্রতিদিন ইশিকার কথা ভেবেছে? নাকি ইশিকাকে ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে ভালোবাসছে? ভাবতেই যেন ইশিকার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
YOU ARE READING
ভালোবাসার অপরাধী (সম্পুর্ণ)
Romanceছাদের রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশিকা। অগ্রহায়ণের বাতাস অনুভব করছে। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের ছাদের দিকে। মনের অনুভূতিটা যেন নড়াচড়া দিয়ে উঠল। চোখটা বন্ধ করে জোরে নিঃস্বাস নিল। এক দৌড়ে ছুটে এল নিজের ঘরে।