অয়ন সবে মাত্র বাথরুম থেকে গোসল সেড়ে বেড়িয়েছে। গতকালই ওর ছুটি শেষ হয়েছে। আজ থেকে জয়েন। ইশিকা একটা চেয়ারের উপর বসে আছে। মুখের সামনে বই ধরা। হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস মেঘ বলেছে যাব যাব। ইশিকা অনেক বার পড়েছে। ওর খুব প্রিয় বই এটা। কিন্তু ইশিকা বইটা পড়ছে না। অয়ন যাতে কথা বলতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা। খাটের এক পাশে অয়নের মিনি সুটকেস রাখা। অয়ন ফিরবে এক সপ্তাহ পর। এই ভেবে ইশিকা স্বস্তি পেলো অয়ন এই সাত দিন ওর কাছে আসবে না। কিন্তু এসব ভেবেই বা কি লাভ অয়ন তো এমনিতেও কখনো ইশিকার কাছাকাছি আসে না। কখনই স্বামীর অধিকার ফলাতে আসে না ইশিকার উপর। দরকার টুকটাক কথা বলে তাছাড়া আর কিছু না। ঐ টুকটাক কথাতেও যেনো ইশিকার অস্বস্তি হয়।
বইয়ের আড়াল থেকেই ইশিকার চোখ পড়লো অয়নের দিকে। মাথার ভরতি অয়নের মোটা মোটা ঝাঁকড়া চুল। অভ্রর চুলগুলো অবশ্য মোটা ছিল না। খুব নরম ছিল ধরতেই ভালো লাগতো। অয়ন সবসময় ক্লিন শেভ করে থাকে। কিন্তু অভ্র তো করতো না। অভ্রর মুখে সবসময়ই খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকতো। অয়নের গায়ে হলদেটে ভাব। কিন্তু অভ্রর মধ্য থেকে গোলাপী আভা বেড়িয়ে আসতো সবসময়।
অয়ন খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। খাটের উপর রাখা নেভি ব্লু শার্টটা নেওয়ার সময় অয়ন দেখলো ইশিকা আর চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন ইশিকার দিকে তাকিয়েছে সেটা দেখতেই ইশিকা আবার চোখ সরিয়ে নিল। অয়ন সেটা দেখে মুচকি হাসলো। অয়ন আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে দেখে ইশিকা আবার তাকালো অয়নের দিকে। অয়নের বুক ভরতি লোম। অভ্রর কি ছিল? ইশিকা তো জানে না। কখনো দেখে নি ইশিকা আর জিজ্ঞেসও করা হয় নি কখনো। অভ্রকে তো ইশিকার সব রঙেই সুন্দর লাগতো। অয়নকে ইশিকার যেন কোনো কিছুতেই সুন্দর লাগে না।
"বিউটি লাইস ইন দ্যা আইস অফ দ্যা বিহল্ডার" কথাটা বোধয় সত্যি। যাকে ভালো লাগে তাকে তাকে সুন্দর লাগে আর যাকে ভালো লাগে না তার কোনো কিছুই আপনার ভালো লাগবে না। ইশিকার বেলাতেও ঠিক তাই। অভ্রকে ভালো লাগতো, তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালো লাগতো তাই অভ্রর সব কিছুই ইশিকার সুন্দর লাগতো। অবশ্য অভ্র মানুষটাও ছিল তেমনই, ভালো লাগার মতো। অন্যদিকে অয়নকে ইশিকার ভালো লাগে না তাই অয়নের কোনো কিছুই ইশিকার সুন্দর লাগে না।
YOU ARE READING
ভালোবাসার অপরাধী (সম্পুর্ণ)
Romanceছাদের রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশিকা। অগ্রহায়ণের বাতাস অনুভব করছে। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের ছাদের দিকে। মনের অনুভূতিটা যেন নড়াচড়া দিয়ে উঠল। চোখটা বন্ধ করে জোরে নিঃস্বাস নিল। এক দৌড়ে ছুটে এল নিজের ঘরে।