১৪ ডিসেম্বর।
আজ ইশিকার গায়ে হলুদ। ইশিকাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ভরতি। সবাই ইশিকাকে নিয়েই ব্যস্ত। এতো মানুষের ভীরে একা থাকার মতো কোনো সুযোগ নেই ইশিকার। ওর ঘরে ভাই বোনেরা থাকবেই কেউ না কেউ। অন্তত একজন হলেও থাকে। ইশিকা কিছু বলতেও পারছে না। সকাল থেকেই বাড়ির বড়রা নানা কাজে ব্যস্ত। আর বোনের ওকে নিয়ে ব্যস্ত। বিকেলবেলায় ওকে সাজানোর জন্য বসলো সবাই। ইশিকা অবশ্য প্রথমে বলল ও নিজে নিজে একাই সেজে নিতে পারবে। কিন্তু কেউ শুনলো না কথা। বিয়ের কনে একা একা নিজে সাজবে কেনো? অনেক মানুষ বসে তাকে সাজাবে। আর সে রাণীর মতো বসে থাকবে।
সবাই মিলে ইশিকাকে সাজাতে ব্যস্ত। ইশিকার অসহ্যকর লাগছে সবকিছু। এক পাশে হলুদ জামদানি আর ফুলের গয়না রাখা। সম্পুর্ণ গোলাপ ফুলের তৈরি। সবাই খুব যত্ন নিয়ে সাজাচ্ছে ইশিকাকে। আর ইশিকার মা কিছুক্ষণ পর পর এসে মেয়েকে দেখে যাচ্ছেন। অন্য সময় হলে হয়তো এতো বার বার আসতেন না। কিন্তু এখন কোনো এক ভয় থেকেই বার বার মেয়েকে দেখতে আসছেন। কে জানে কখন কাকে কি বলে বসে।
ইশিকার সাজ কমপ্লিট। এখন শাড়ি আর গয়না পড়ানো হচ্ছে। ইশিকার এই মুহুর্তে ইচ্ছা করছে গা থেকে গয়নাগুলো ছুড়ে ফেলে দিতে। কিন্তু সেটা করতে পারছে না। সাজ শেষে ইশিকা সবাইকে ঘর থেকে বের হতে বলল। কিন্তু কেউই যেতে চাইছে না। ইশিকা বলল,
"তোমরা সবাই যাও এখন। আমি একটু রেস্ট নিতে চাই প্লিজ।"
ইশিকার খালাতো বোন রিমা বলল,
"এই তোরা সবাই যা আমি আছি। সবাইকেই তো রেডি হতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে সবাই।"
সবাই চলে যাওয়ার পর রিমা ইশিকাকে বলল,
"আজকের দিনে অন্তত মনমরা হয়ে থাকিস না। একটু খুশি খুশি থাক। জানি তোর মনের অবস্থা। কিন্তু অনেকদিনই তো হলো এখন একটু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আয় প্লিজ।"
"আমাকে একটু একা থাকতে দিবে প্লিজ।"
"আচ্ছা রেস্ট নে আমি একটু পর আবার আসছি।"
রিমা চলে গেলো। রিমা চলে যাওয়ার পর ইশিকা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে খুব সুক্ষ্মভাবে। বিয়ের কোনো কিছু অভ্রর পছন্দের না হলেও গায়ে হলুদের পুরো সাজটা অভ্রর মনের মতো। হলুদ জামদানিতে লাল গোলাপের গয়না। ইশিকাকে খুব মানিয়েছে। অভ্রর সাজ ভেবেই ইশিকার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু পরক্ষণেই মুখের সেই হাসি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। অভ্রর সাজ? কিন্তু অভ্রর জন্য তো ওকে সাজানো হয় নি। তাহলে এই সাজ রেখে কি লাভ। এই গয়না এই হলুদ জামদানি পড়ে কি লাভ। ইশিকার গয়না গুলো অসহ্যকর লাগতে শুরু করলো। গলার মালাটা ছিঁড়ে খুলতে যাবে এমন সময় মা ঘরে এলেন। ইশিকার মা দেখলেন ইশিকার মুখে বিরক্তির ছাপ। গলার মালাটা হাত দিয়ে শক্ত করে মুঠ করে ধরে রেখেছে। তিনি যা বুঝার বুঝে গেলেন। ইশিকা মাকে দেখার পর হাতটা নামিয়ে ফেলল। ইশিকার মা বললেন,
BINABASA MO ANG
ভালোবাসার অপরাধী (সম্পুর্ণ)
Romanceছাদের রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশিকা। অগ্রহায়ণের বাতাস অনুভব করছে। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের ছাদের দিকে। মনের অনুভূতিটা যেন নড়াচড়া দিয়ে উঠল। চোখটা বন্ধ করে জোরে নিঃস্বাস নিল। এক দৌড়ে ছুটে এল নিজের ঘরে।