অভ্রর বাড়িতে পা রেখেই আশেপাশে দেখতে লাগলো ইশিকা। মাথা ঘুরিয়ে বাড়িতে যা যা আছে সব দেখছে। বাড়ির কিছু জিনিস আগের মতো থাকলেও অনেক কিছুই বদলে গেছে। বাড়িতে ঢুকতেই মাথার উপর একটা সাদা রঙের বড় ঝাড়বাতি ছিল। এখন সেখানে সবুজ ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। অভ্রর মাকে ইশিকা জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন ওটা নাকি অভ্রর ইচ্ছাতেই পালটানো হয়েছে। আসলেই আগেরটার থেকে এটা অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
ইশিকার তো এই বাড়িতে ঢুকার কথা ছিল অভ্রর হাত ধরে কনের সাজে। পাশে বর বেশে অভ্র থাকতো। অভ্র ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে যেত। পুরো বাড়ি ফুল আর আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকতো। পুরো বাড়িটাই আলোতে ঝিলিক মারতো। এখনো আলো আছে যথেষ্ট। কিন্তু সেই আলোতে কোনো প্রাণ নেই। আলোর আড়ালে অন্ধকার লুকিয়ে আছে যেটা ইশিকা দেখতে পাচ্ছে। অভ্রই ঐ অন্ধকারটা রেখে গেছে। অভ্রর দেওয়া সব কিছুই ইশিকার প্রিয়। তাহলে অভ্রর রেখে যাওয়া অন্ধকারটা কেন অসহ্যকর লাগে ইশিকার? বাড়িতে কেমন যেনো গুমোট গুমোট ভাব। কোলাহল মুক্ত একদম। কেউই এখন দরকার ছাড়া তেমন কোনো কথাই বলে না। অর্কও আর কারো সাথে কোনো কথা বলে না। বিশেষ করে বাবা আর চাচীর সাথে। সে যে শুধু তার ভাই নয় তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছে।
অভ্রর চাচী কঠিন দৃষ্টি নিয়ে ইশিকার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না। এখন একা কিছু বলেই পারবেন না। স্বামী যেহেতু এখানে নেই বিদেশে আছেন আর যখন সব কিছু ঠিকই হয়ে গেছে তখন ইশিকাকে কিছু বলা মানে বোকামি করা। তাই তিনি কিছু বললেন না চুপ করে রইলেন।
ইশিকা অভ্রর ঘরে ঢুকলো। অভ্রর ঘরটা ভালো করে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে। ইশিকা। এর আগেও অবশ্য ভিডিও কলে দেখেছে। কিন্তু সামনাসামনি দেখা আর ভিডিও কলে দেখা আকাশ পাতাল তফাৎ। ঘরের বেশিরভাগ জিনিসই সাদা। ইশিকার মতো অভ্ররও প্রিয় রঙ ছিল সাদা। বারান্দায় আর জানালার কিনারায় ছোট ছোট টব ঝুলিয়ে রাখা। ঘরের প্রতিটা জিনিসের মধ্যেই যেন ইশিকা অভ্রকে অনুভব করতে পারছে। সব কিছুতেই অভ্রর ছোঁয়া। এই ঘরটাই তো ওর হওয়ার কথা ছিল। সব ঠিক থাকলে এতোদিনে বিয়েটাও হয়ে যেতো। খুব বেশি দেরি হলে এখন বিয়ের তোড়জোড় চলতো। কিন্তু এখন সবকিছুই শান্ত। তোড়জোড় তো দূরে থাক তেমন কথাবার্তাও নেই।
YOU ARE READING
ভালোবাসার অপরাধী (সম্পুর্ণ)
Romanceছাদের রেলিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশিকা। অগ্রহায়ণের বাতাস অনুভব করছে। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের ছাদের দিকে। মনের অনুভূতিটা যেন নড়াচড়া দিয়ে উঠল। চোখটা বন্ধ করে জোরে নিঃস্বাস নিল। এক দৌড়ে ছুটে এল নিজের ঘরে।