আপন মানুষজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যখন কথাই বলছি। তখন আর একজনের কথা না বললেই নয়। সে হলো সুমাইয়া ইসলাম। সুমাইয়া ইসলামের সাথে মতিউরের বন্ধুত্ব প্রায় তিন থেকে চার বছরের মত। সুমাইয়া ইসলামের কথা বললে হয়তো শেষ করা যাবে না। একটু কৌতুক দিয়েই শুরু করা যাক সুমাইয়ার বাড়ি হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিন্তু তার ব্যবহার আচার আচরণ দেখে মনে হয় সে বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজ সরল মানুষ। সত্যি দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোক মনে হয় না। আসলেই অনেক সহজ সরল জোরে কেউ কথা বললে বা কেউ ধমক দিলে হয়তো কেদেই দেয়। মতিউরের সাথে সুমাইয়ার পরিচয় চার পাঁচ বছরের। দেখা হয়েছেনমাত্র পাঁচ বার। মতিউরের সুমাইয়ারের সাথে সময় অতিবাহিত করতে ভালোই লাগতো। মতিউরের সাথে সুমাইয়ার বন্ধুত্ব হওয়ার কাহিনী আরো অদ্ভুত। যেই কলেজে পড়াশোনা করত সেই কলেজের কমার্সের ছাত্র ছিল সুমাইয়া ইসলাম। যেহেতু নৌবাহিনী কলেজে ছিল এবং প্রথম বর্ষে সুমাইয়া ক্যাপ্টেন ছিল। তাই তার হাতে বড় করে ক্লাসে ক্যাপ্টেনের ব্যাচ লাগানো থাকতো। মতিউর ও সুমাইয়া চার তলায় ক্লাস করত।
পৃষ্ঠা - ৪৪
হাতে ক্লাসে ক্যাপ্টেনের বড় ব্যাচটা পরে ঘুরতো ও রবিবার সমাবেশের সময় সামনে দাঁড়াতো। তাই খুব সহজে মতিউরের চোখে পড়তো সুমাইয়াকে। কলেজ জীবনে মতিউরকে শুধু সুমাইয়া কে দেখে পার করতে হয়েছে। কারণ কাছে যাওয়ার মত এবং কথা বলার মত সাহস মতিউরের ছিল না। যেহেতু মতিউর ছিল সহজ সরল ও কিছুটা ভীতু স্বভাবের। কলেজে জীবন শেষ হয়ে গেল আশানুরূপ ফলাফল হয় নাই। করোনার কারণে সব যেন কেমন হয়ে গেল। কিন্তু মতিউরে ভেঙে পড়ে নাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার জন্য দিনরাতো পরিশ্রমে করতে থাকে মতিউর। ঠিক এইরকম একই দিনের কথা মতিউরের পড়ালেখা শেষ হয় রাত ৩.০০ দিকে। হঠাৎ মতিউরের একটু ফেসবুকে দেখার মন চায়। যেহেতু অনেকে দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের বাইরে ছিল মতিউর।
পৃষ্ঠা - ৪৫
তাই তার আকাঙ্ক্ষাটা একটু বেড়েই যায়। ১০ মিনিট ফেসবুকের মধ্যে অতিবাহিত করে এবং হঠাৎ করে দেখতে পায় সুমাইয়া ইসলামের ছবি। মতিউর সাহস ওকারে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ভর্তি পরীক্ষার সমস্ত কার্যক্রমে শেষ করে নিয়মিতই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে মতিউর এবং সুমাইয় ও মতিউরের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে। কাকতালীয়ভাবে মতিউর যে কলেজে ভর্তি হয় সুমাইয়া ও সেই কলেজে ভর্তি হয়। অবশ্য মতিউরের ঢাকা কলেজে পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যাতায়াত, খরচ ও থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি চিন্তা করে তারা ঢাকা কলেজের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়। সুমাইয়া এখনো একটা বড় কোম্পানিতে চাকুরি করে। ভালো টাকা পয়সা উপার্জন করে। সুমাইয়া চাকুরিটা কিন্তু পড়ালেখা শেষ করার আগেই হয়েছে। সুমাইয়া যখন প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করত তখনই সে এই চাকরিটা পায়। ছাত্র জীবনে টুকু টাক হাতে খরচের জন্য কেউ চাকরি করে। কেউ বা আবার টিউশনি করে। মতিউর চাকরি না করলে ও তিনটি টিউশনি করত।
পৃষ্ঠা - ৪৬
যা দিয়ে মতিউরের হাত খরচটা হয়ে যেত। কিন্তু মনের ইচ্ছাটা আর হাত খরচের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব হতো না। মতিউরের অনেক ইচ্ছা ছিল একটা কম্পিউটার বানানো। কিন্তু বর্তমানে সময় দেশের যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মতিউরের পকেটের যা অবস্থা তাতে শুধু কম্পিউটার নামটি শুনি পার করে দিতে হয়। এক কলেজে পডা সত্বেও মতিউরের সাথে সুমাইয়া দেখা হতো না। কারণ চাকুরির কারণে খুব বেশি একটা আসতো না সুমাইয়া কলেজে। সুমাইয়ার পরিবার ভালই সচ্ছল ছিল তারপরও সুমাইয়া চাকরি করত। মাঝে মাঝে মতিউরের মনে প্রশ্ন জাগতো। এত সচ্ছল পরিবার থাকা সত্ত্বেও সুমাইয়া কেন চাকরি করে? মতিউরে যখন এই একই প্রশ্ন সুমাইয়াকে জিজ্ঞেস করত তখনও সুমাইয়া উত্তরে বলতো, এটা ওর একটা শখ। চাকরির মধ্য দিয়ে সুমাইয়া আরো অনেক শত পুরন করেছে। যা হয়তো ওর পরিবারের কাছে চাইতে লজ্জাবোধ বা পরিবার থেকে দিত না।
পৃষ্ঠা - ৪৭
যেমন : বিশ্ব বিখ্যাত iphone। প্রযুক্তি সম্পর্কে মেয়েদের ধারণা থাক আর না থাক অধিকাংশ মেয়েদের এতটা ঝোঁক থেকে আইফোনের উপর। খুব সম্ভবত আইফোনের ক্যামেরা ভাল দেখে বেশিরভাগ মেয়েরা iphone কিনতে চায়। iphone কেনার পাশাপাশি আরো অনেকে ব্যয়বহুল ও শখ ও পূরণ করতে পেরেছিল সুমাইয়া। শখ পূরণ করার পাশাপাশি আবার পরিবারকেও সাহায্য করত সুমাইয়া। সুমাইয়া তার চাকুরি জীবন ভালই আনন্দের সাথে উপভোগ করত। মতিউরের আর্থিক অবস্থা যেহেতু ভালো যেত না। তাই মতিউর নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে ইমরান ভাই এবং সুমাইয়া মতো দুইজনকে পেয়ে। ইমরান ভাইকে আপনারা মতিউরের সব সময়ের ভাই বলতে পারেন। মানুষ বলে উনি আমার দুঃসময়ের ভাই। উনি আমার সু - সময়ের ভাই। কিন্তু মতিউর সব সময় ইমরান ভাইকে কাছে পেয়েছে সেটা দুঃসময় হোক আর সু - সময় হোক। তাই মতিউরের ক্ষেত্রে ইমরান ভাই সব সময়ের ভাই। ইমরান ভাই সব সময় মতিউরকে সাহায্য করেছে। মতিউরকে বলে দিত ইমরান ভাই তোর যখন খুশি তখন টাকা দিস। টাকা দিতে দিতে কখনো তিন থেকে চার মাসে লেগে যেত মতিউরের।
পৃষ্ঠা - ৪৮
কিন্তু ইমরান ভাইয়ের তাতে কোনো আক্ষেপ ছিল না। সুমাইয়া মতিউরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করলেও মানসিকভাবে অনেক সাহায্য করেছে। যেই সময় পাশে থাকা দরকার ছিল ঠিক সেই সময় পাশে ছিল সুমাইয়া।
পৃষ্ঠা - ৪৯
YOU ARE READING
সত্য দিনের অপেক্ষায়
Non-Fictionসোমবার সকাল বেলা ঠিক ছয়টা বাজে। মোবাইলে দেওয়া এলার্ম এর শব্দে চারদিকের মানুষের ঘুম হারাম কিন্তু যার জন্য এলার্ম তার কোন খবর নেই। মা এসে বলল ওই মতিউর উঠবে না নামাজের সময় শেষের দিকে, তোর তো আজ কলেজ ও আছে যাবি না। মতিউর বলল মা আর মাত্র পাঁচটা মিনিট...