অভিশপ্ত শহরের কালো অতীত

5 3 0
                                    

মতিউরের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় এই শহরের প্রতি। গানের ভাষায় যাদুরে শহর, উচ্চবিত্তদের কাছে টাকার শহর আর নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে কষ্টের শহর। এই শহরের আনাচে-কানাচে থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই রয়েছে কাহিনী। হয়তো আমরা শুনি না, বুঝি না, চোখে দেখি না, উপলব্ধি করতে পারি না। কারণ আমরা ও ব্যস্ত থাকি নিজেদের কাহিনীর মধ্য। রাস্তার ধারের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে তিতুমীরের মামার চা, সদরঘাটের কুলি থেকে শুরু করে গলিতে পড়ে থাকা বাচ্চাটা সবার কাহিনী রচনা করে এই ঢাকা শহর। কাউকে বানায় হিরো আবার কাউকে বানায় জিরো। দুয়ারে দুয়ারে ঠকঠক করে রাতের সেই ভয়াবহ সুন্দর।

পৃষ্ঠা - ৫৯

কারো কাছে আতঙ্ক আবার কারো কাছে সুন্দর। মজার কথা হল, আপনি যতই আপন করে নেন না কেন এই শহরকে এই শহর আপনাকে আপন করে নিবে না। সেটা উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সবার জন্যই প্রযোজ্য। আপনার হতাশা হবে এই শহরের কলম, আপনার দুঃখ হবে এই শহরের কাহিনী, বাদ পড়ে যাবে আপনার সুখময় জীবনটুকু। তাই মতিউর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল এই অভিশপ্ত শহরের থেকে বের হতে। কিন্তু সেই সৌভাগ্যটা তার হয় নি। অতীত ভুলতে গেলে হয় আর একটি সমস্যা। যা হয়েছিল মতিউরের ক্ষেত্রেও। মতিউর মনে করেছিল যা হয়েছে সেটা আমার অতীত। এখন এই অতীতটাকে ভুলে সামনের দিকে অগ্রসর হই। কিন্তু মতিউর ভুলেই গিয়েছিল অতীত হলো হারিয়ে যাওয়া রোগের মত যা হারিয়ে গেল ও সঠিক সময় আবার আপনার দরজায় হাজির হবে। তাই আগের জীবনটা সম্পূর্ণটা বাদ হয়ে যায় মতিউরের।

পৃষ্ঠা - ৬০

শুরু হয় একটি নতুন জীবন। নতুন জীবনে যে সম্পূর্ণ নতুন হবে মতিউরের সে কথা ভাবলে আপনারা ভুল করবেন। পুরাতন জীবনের ভিতরেই মতিউর নতুন জীবনকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তাকে পাওয়া কি এতই সহজ? সারা দিনে ক্লাস করে এসে ৬.০০ দিকে টিউশনিতে যাওয়া। আবার সেইখান থেকে এসে ৮.০০ টিউশনিতে যাওয়া। তারপর বাসায় নিজেরা পড়ালেখা করা। সব মিলিয়ে দিন শেষে বাড়ি ফিরে আসে একেটি নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। হাত তার শূন্য, মগজে তার চিন্তা, পায়ে তার ব্যথা, পেটে তার ক্ষুধা। কিন্তু চোখে তার স্বপ্নটা মুছে না, শুধু মুছে চোখের পানি টুকু। তেইশটি বছর কেটে গেল মতিউরের এই অভিশপ্ত ব্যস্ত শহরে নতুন জীবনের আশায়। পুরাতন জীবনকে যেন মতিউর বাদই দিল। শুধু একটা জিনিস পরিবর্তন হলো না মতিউরের জীবন থেকে।

পৃষ্ঠা - ৬১

সেটা এক সুন্দর জিনিস। জিনিসটাকে দেখা যায় শুধু শেষের বেলাটুকুতে শেওড়া রেলগেটেরে প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত দেখা। মতিউরের মনে হয় সূর্যটাও তার মত, দিন শেষে সেও ডুবে যায় নিয়ে যায় কিছু ভালো স্মৃতি আর রেখে যায় কিছু অভিশপ্ত স্মৃতি। যা ঘুমানোর আগে ভাবায় হাজারো মতিউরকে, যারা নিরবে কেঁদে বেড়ায় আগামীকালের ভালো স্মৃতির আশায়। যাই হোক পাঠের এই পর্যায়ে এসে, আপনারা মতিউরের মতামত, তার জীবনের কাহিনী, জীবন গড়ে তোলার কথা ও জীবনে আসা তার মানুষের কথা জানতে পেরেছেন। কিন্তু মডিউরের অতীতে নিয়ে কথা বলতে বলতে হয়তো আপনারা মডিউরের বর্তমানটাই ভুলে গেছেন।

পৃষ্ঠা - ৬২ 

সত্য দিনের অপেক্ষায়Donde viven las historias. Descúbrelo ahora