মতিউরের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে এখন এসব কার্যকলাপ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম ক্লাস। মতিউর নিজেও জানেনা আজকে কি ক্লাস হবে না হবে না ? ৭.৪০ বাজে মতিউর এখনও বাস স্টেশন এ দাঁড়িয়ে। দুটি লোকাল বাস চলে গেছে কিন্তু মতিউর উঠে নাই। কারণ মতিউর জানে ৮.০০ মধ্য তার কলেজ বাস আসবে। মতিউর যেখানে থাকতো ওইখান দিয়ে দুটি কলেজ বাস যেত। একটি বড় BRTC এবং অন্য একটি ছোট। যেহেতু মতিউর বড় BRTC বেশিরভাগ সময় ভ্রমণ করত তাই ছোট বাসের দিকে ওতটা নজর যেত না। কিন্তু সোমবার সকালে বড় বাস না এসে ছোট বাস আসলো ৮:১৫ মিনিটে। তৎক্ষণাৎ হাতে দেখিয়ে থামার নির্দেশ দিল মতিউর। বাসে উঠে কোন সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে যেতে হয় মতিউরকে। বড় বাসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। যেহেতু বাসগুলো অনেক দূর থেকে আসে তাই সিট থাকে না। ভাগ্য অতিশয় ভালো থাকলে পিছনের দিকের সিট পাওয়া যায়। বাস কলেজে প্রবেশ করার পর মতিউর জানতে পারে আজকে বড় BRTC বাসটি নষ্ট ছিল। অবশ্য তিনদিন পর কলেজে খুলেছে চাইলে কলেজে কর্তৃপক্ষ বাসের কর্মচারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে বাসটি ঠিক করতে পারতো। বড় বাস না থাকায় ছোট বাসের অনেক চাপ সহ্য করতে হয়।
পৃষ্ঠা - ৯
কিছু সময়ের জন্য মতিউরের মনে হয়েছিল বাসের ছাদেও মনে হয় এখন ছাত্র-ছাত্রী উঠাবে। কলেজের টয়লেটের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। সাইন্স বিল্ডিং এর টয়লেট গুলো একটু ভালো অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থী ও কলেজে কর্মচারীদের অবহেলার কারণে সেগুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে। মতিউর প্রথমেই বাস থেকে নেমে সায়েন্স বিল্ডিং এর টয়লেটে গিয়ে তার কাজ সেরে নেয়। তারপর মতিউর তার ডিপার্টমেন্টের দিকে যায়। মতিউর "বাংলা" বিভাগের ছাত্র। মতিউরে যখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী তখন তার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ছিল "বাংলা" এবং পছন্দের বিষয় ছিল "অর্থনীতি"। বাংলা ব্যাকরণের দিকগুলো মতিউরের অনেক কঠিন লাগতো। কিন্তু অনার্সে বাংলা নেওয়ার পর এখন তার কাছে ব্যাকরণ সহজ লাগে কিন্তু কঠিন হয়ে পড়েছে মঙ্গলকাব্য চর্যাপদ ইত্যাদি। কারণ এগুলো অনেক আগের বাংলা ভাষা দিয়ে লেখা হয়েছে। যা বর্তমান বাংলা ভাষার সাথে মিল থাকলেও উচ্চারণ এবং অর্থ বুঝতে শিক্ষার্থীদের ভালোই বেগ পেতে হয়। তাই যারা প্রতিদিন ক্লাস করে এবং এই মঙ্গলকাব্য ও চর্যাপদ নিয়ে বিভিন্ন বই ও ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাটি করে এবং শিক্ষকদের কথাগুলো নোট করে রাখে। তারাই অনার্সে ভালো করতে পারে।
পৃষ্ঠা - ১০
ডিপার্টমেন্টের দিকে যাওয়ার সময় কলেজের মাঠটি চোখে যায়। যেহেতু বছরের দ্বিতীয় মাস এটি অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস সেহেতু দেশের বেশিরভাগ স্কুল - কলেজে ও ইউনিভার্সিটিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম ক্লাস। স্যার এর নোটিশ পাওয়া মাত্রই পরের দিনে ছুটে আসা। ক্লাস হবে কি? হবে না কিছুই জানা ছিল না মতিউরের। মতিউর খেলাধুলায় দুর্বল। মাঝে মাঝে এলাকার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলত কিন্তু সময়ের কারণে ভাগ্যে এখন ক্রিকেট খেলাও জোটে না। সবকিছু মিলিয়ে মতিউরের মনে হয় ডিপার্টমেন্টে না গিয়ে কিছুক্ষণ খেলা দেখে যাই। কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো যদি ক্লাস হয় আজকে। যদি নাম ডাকে আজকে। সেই ভয়ে তাড়াহুড়া করে ডিপার্টমেন্টের দিকে ছুটে যায়। বাংলা ডিপার্টমেন্টের দুটি ক্লাসরুম রয়েছে। ডিপার্টমেন্ট দুই তালায়। মতিউর দুই তালায় গিয়ে প্রথম ক্লাসে রুমে উঁকি দেয়। মতিউর দেখতে পায় অনেকে ছেলে মেয়ে বসা কিন্তু কারো চেহারা পরিচিত না দেখে দ্বিতীয় ক্লাস রুমের দিকে অগ্রসর হয়। দ্বিতীয় ক্লাসরুমে কেউ নেই পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা। ফাঁকা ক্লাসরুমে মতিউর গিয়ে বসে এবং প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে। কাউকে না দেখে মতিউর ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে যায়। এখানে বলে রাখা ভালো মতিউর কিছুটা ভীতু স্বভাবের। অন্য সব ছেলেমেয়ে যেখানে নির্ভয়ে স্যারদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে আসতো। মতিউরের সেখানে ভয়ে হাত-পা ঘামাতে শুরু করতো।
পৃষ্ঠা - ১১
( চলবে )
VOCÊ ESTÁ LENDO
সত্য দিনের অপেক্ষায়
Não Ficçãoসোমবার সকাল বেলা ঠিক ছয়টা বাজে। মোবাইলে দেওয়া এলার্ম এর শব্দে চারদিকের মানুষের ঘুম হারাম কিন্তু যার জন্য এলার্ম তার কোন খবর নেই। মা এসে বলল ওই মতিউর উঠবে না নামাজের সময় শেষের দিকে, তোর তো আজ কলেজ ও আছে যাবি না। মতিউর বলল মা আর মাত্র পাঁচটা মিনিট...