মতিউর তার জীবনে অনেক মহৎ লোকের সঙ্গ পেয়েছে। হয়তো তাদের সাথে দেখা না হলে, মতিউরের কোন সময় জীবনে সম্পর্কে জানা হতো না। অপূর্ণ থেকে যেত তার জীবনের একটি অংশ। ভালো সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়টাও থাকে। হয়তো আসতে দেরি করে। কারো জীবনে ভালো সময় আগে আসে। আবার কারো জীবনে খারাপ সময় আগে আসে। মতিউরের জীবনে ছিল তো অনেকেই কিন্তু সঙ্গে আছে কতজন বর্তমান সময়ে আমার মনে হয় তা পাঠকদের তা জানা উচিত। মতিউরের খুব কাছের এক বন্ধু ছিল লাবিব একটি স্কুলে পড়তো এবং একই পাড়ায় থাকতো। তাই ছোটবেলা থেকেই লাবিবের সাথে একটা ভাব থাকতো। মতিউরের বন্ধুত্বের ভাব অসম্পূর্ণ ছিল। যতদিন না পর্যন্ত মতিউরের পরিবার বাসা পরিবর্তন করে ওদের ভবনের তিনতলায় ভাড়া নেয়।
পৃষ্ঠা - ৫০
লাবিব কলেজে আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করতো। লাবিব এবং মতিউর একই শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। যেহেতু মতিউর ও আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করত তাই লাবিবের বাসায় মতিউর এবং মতিউরের বাসায় লাবিবের যাওয়া আসা লেগেই থাকতো। বেশিদিন না যেতেই খুব ভালো একটা বন্ধুত্বে পরিণত হলো লাবিবের সাথে মতিউরের। দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। যেহেতু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার শখ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকে। লাবিব এবং মতিউরের ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শখ ছিল। মতিউর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং এ ভর্তি হয়। লাবিব ভর্তি হবে বলে বলে আর ভর্তি হলো না। মতিউরের কাছ থেকে বিভিন্ন বই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচিং এর শীট ধার করে নিয়ে পড়তো। একইভাবে মতিউর ও পড়তো। লাবিবের চেয়ে মতিউর প্রায় ৫-৬ ঘন্টা বেশি পড়তো। যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ফরম ফিলাপ ও মতিউর এবং লাবিব একই সাথে করল।
পৃষ্ঠা - ৫১
দিন ভালোই যাচ্ছিল। শুরু হলো ভর্তি পরীক্ষা। প্রথমে শুরু হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' বিভাগের পরীক্ষা। যেখানে মতিউরের চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ০%। কারণ মতিউরের বুঝে উঠতেই সময় লেগেছিল। সে কি করবে? কি করবে না? আস্তে আস্তে সব ভর্তি পরীক্ষা গুলো অংশগ্রহণ করতে থাকে মতিউর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' বিভাগের ফলাফল প্রকাশ হয়। মতিউরের না আসলেও লাবিবের ঠিকই আসে। স্বাভাবিকভাবে মতিউরের মন খারাপ থাকে। গুচ্ছ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিউরের শেষের দিকের বিষয় মনোনীত হয়। মনে দুঃখ হতাশা নিয়ে মতিউর ভাবে কি করবে? এইদিকে সাত কলেজে বাংলা অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শেষের বিষয়গুলো। পরিবার থেকেও দূরে গিয়ে পড়ার অনুমতি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটে হাফ মার্কের জন্য আসলো না। সব মিলিয়ে মতিউর একটা হতাশার ভিতরে ছিল। এমন না যে লাবিবের অনেক ভালো বিষয় এসেছিল। লাবিবের সিরিয়াল ছিল শেষের দিকে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উদগ্রীব ছিল।
পৃষ্ঠা - ৫২
যে বিষয়ই হোক না কেন? যাই হোক মতিউরের এইটা নিও মাথা ব্যাথা ছিল না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাওয়ার পর লাবিবের ইগো বেড়ে যায়। মতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না পড়ার একটা শোক ছিল। এটাই স্বাভাবিক যে, দুই বন্ধু একসাথে প্রস্তুতি নিল এক বন্ধু চান্স পেল অপর বন্ধু পেল না। তাহলে মন খারাপ থাকবেই যে বন্ধু চান্স পাবে না। এক মাস হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু হয়ে গেছে লাবিব ঘরে বসা। ক্লাস করতে যায় না। এরকম তিন মাসের মাথায় সিট ফাকা থাকার সুবাধে লাবিবকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাক দেয়। লাবিব কোন বিষয় পেয়েছে সেটা বলবো না। কারণ প্রত্যেক বিষয়ের প্রতি সম্মান রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মতিউরের সাথে কথা হলেই লাবিব বারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ তুলত। সাত কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মতিউরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা জন্মে।
পৃষ্ঠা - ৫৩
বইয়ের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মতিউরের নেতিবাচক মনভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। তাই এখন আর সেই বিষয়ে নিয়ে কথা বলবো না। যাই হোক, লাবিবের সাথে আর মতিউরের কথা হয়না। এটা নিয়ে মতিউরের ভিতরে একটা শোক কাজ করে। কিন্তু মতিউর জানে লাবিবের মধ্য এটা নিয়ে কোন শোক নেই। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিন্ন হওয়া খুবই কষ্টের। জীবনের কোন না কোন একদিন আপনার তার কথা মনে পড়বে। হোক সেটা আপনার আনন্দের মুহূর্ত হোক সেটা আপনার দুঃখের মুহূর্ত। শূন্যস্থান জীবন কখনো পছন্দ করে না। লাবিবের জায়গায় হয়তো নতুন কোন বন্ধু আসবে মতিউরের জীবনে। কিন্তু স্মৃতিগুলো তো আর নতুন করে আসবে না। খোটা দিবে অতীত, খোটা দিবে পুরনো দিনের কথা, খোটা দিবে আপনার বিচার কে? দোষটা কি আসলেই লাবিবের ছিল না মতিউরের? সারা জীবন মতিউর এর দায় মাথায় নিয়ে বেড়াবে। যেটা হয়তো একটা সুন্দর মুহূর্তকে ছিন্নবিছিন্ন করে দিবে অনায়াসে, দুঃখের সময় যন্ত্রণাকে হয়তো আরো বেদনাদায়ক করে তুলবে। আর এই অনুভূতিটাকেই আমরা নাম দিয়েছি অতীত।
পৃষ্ঠা - ৫৪
ESTÁS LEYENDO
সত্য দিনের অপেক্ষায়
No Ficciónসোমবার সকাল বেলা ঠিক ছয়টা বাজে। মোবাইলে দেওয়া এলার্ম এর শব্দে চারদিকের মানুষের ঘুম হারাম কিন্তু যার জন্য এলার্ম তার কোন খবর নেই। মা এসে বলল ওই মতিউর উঠবে না নামাজের সময় শেষের দিকে, তোর তো আজ কলেজ ও আছে যাবি না। মতিউর বলল মা আর মাত্র পাঁচটা মিনিট...