সমাজ ব্যবস্থা

6 3 0
                                    

আজকের এই সময়ে এসে মতিউরের বড়ই একা মনে হয়। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও তার ভালো লাগেনা। কই গেল তারে সেই পুরানো জীবনে? সোনালী অতীত? কেনই বা তার শুধু দুঃখ ভারাক্রান্ত দিনগুলোর কথা বারবার মনে পড়ছে? প্রশ্ন আছে উত্তর নেই। হয়তোবা উত্তর খোঁজার দরকার মনে করে না মতিউর। হয়তোবা উত্তর গুলো আরো ভয়ংকর যার সম্মুখীন হতে মতিউর প্রস্তুত নয়।

পৃষ্ঠা - ৫৬

বাস্তবের মাঝে দাঁড়িয়ে আজ মতিউরের অবাস্তব খুজতে ব্যস্ত। বাস্তবতার সম্মুখীন হতে তার ভয় লাগে। মনে হয় নিষ্ঠুর বাস্তবতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বাকি জীবনটুকু। এই বছরে, এই মাসে, এই দিন, এই ঘন্টা, এই মিনিটে, এই সেকেন্ডের সবই তার কাছে কঠিন বাস্তবতার প্রমাণ নিয়ে বেড়াচ্ছে চারপাশে। মতিউরের কাছে মনে হয় বাস্তব পৃথিবীকে অবাস্তব হিসেবে দেখাই শ্রেয়। হয়তো পুরো দুঃখটা না ঘুঁচলেও সেটা সহ্য করার একটা শক্তি পাওয়া যায়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গন্ধ পাওয়া যায় এই মতিউরের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী মানুষদের। যাদের চোখে তাকে বিশ্ব, বুকে থাকে বল, মনে থাকে আত্মবিশ্বাস, পেছনে তাকে চোখলজ্জা আর সামনে থাকে নিচু হওয়ার ভয়। তারাই এই বাস্তব পৃথিবীকে অবাস্তবের মতো বেঁচে থাকতে চায়। আজকে আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

পৃষ্ঠা - ৫৭

যার শিকার লক্ষ - লক্ষ, কোটি - কোটি ছেলে মেয়ে। এই তুমি পাবলিকের চান্স পাওনি কেন? সাত কলেজে পড়ে কি করবে? ন্যাশনালে পড়ে কেউ কিছু করতে পারে শুনেছ? ১৬ ঘন্টা তো দেখানো পড়া? তোর বন্ধু কিভাবে চাকরিটা পেল? সিজিপিএ এত কম কেন? বিসিএস ক্যাডার কি মুখের কথা? একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাস নাই আইসোস বিসিএস ক্যাডার হবি? তোকে নিয়ে কিছু হবে না? এইরকম হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় মতিউরের মতো লাখলাখ ছেলেদের। এই কথাও বলা সহজে হয়ে গিয়েছে যে, ওই ১৮ - ১৯ ঘন্টার পড়া আমরা দেখবো না। তুমি ব্যর্থ হয়েছ এইটাই তোমার ব্যর্থতা। সফলতা পাওয়া যদি এতই সহজ হয়ে যেত। তাহলে হয়তো আজকে বাংলা অভিধানে এই শব্দটার মূল্যায়ন অনেক কমে যেত। কিন্তু এই নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী ছোট লোকেরাই বলেছে অনেক বড় কথা করেছে অনেকে বড় কাজে। যার সাক্ষী আজও ইতিহাসে বয়ে বেড়ায়। যাই হোক দিন শেষে মতিউরের মতো আপনারও মনে হবে নিঃস্ব।

পৃষ্ঠা - ৫৮

সত্য দিনের অপেক্ষায়Where stories live. Discover now