বাম বাহুতে একটি তীক্ষ্ণ ব্যথার অনুভূতিতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে নিজেকে শুভ্র দেয়ালের একটি রুমে শায়িত অবস্থায় পেলাম। উঠে বসলাম এবং নিজ চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলাম। অজানা এক হাসপাতালের কোন একটি রুম। হাতের চামড়া ভেদ করে গেঁথে রাখা সরু ও সুঁই তুল্য নলের ভেতর দিয়ে ধীরগতিতে এক স্বচ্ছ তরল পদার্থ আমার দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। বাম হাতের বাহুতে বেশ শক্তপোক্ত ভাবে একটি সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা। রক্ত মাংসের শরীর থেকে বিষাক্ত গুলিটি তবে বের করা হয়েছে।
বেশ!
দেহাভ্যন্তর হতে একটি দীর্ঘশ্বাস মুক্ত হলো। শেষবার কি ঘটেছিল তা স্মরণ করতে কয়েক সেকেন্ড সময় অতিবাহিত করতে হলো। আমার ভুরু যুগল কপালের মাঝে কুঁচিত হলো যখন আমি হাতে গেঁথে রাখা সরু নলগুলো টেনে খুলে ফেললাম। পাশের চেয়ারে যত্নে রাখা শার্টটি উঠিয়ে তা শরীরে জড়ানোর সময় জানালা ভেদ করে বাহিরের চোখ গেল।
সূর্য ইতোমধ্যে ডুবে গেলেও তার লাল আভা আকাশের একটি ক্ষুদ্র অংশ এখনো দখল করে রেখেছে। কৃষ্ণপক্ষের সঙ্গে লড়াই চলছে ওর। কিন্তু ওর তো পরাজয় নিশ্চিত।
কিছু লড়াই হলো সময়ের অপচয়; বৃথা। প্রকৃতি নিজ নিয়মানুযায়ী সর্বদাই জয়-পরাজয়‚ সময়-অসময় নির্ধারণ করে রাখে।দরজা খুলতেই শনের আশ্চর্যান্বিত মুখটি দৃষ্টির সম্মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠল। শন তার চোখজোড়া আমার মাথা থেকে পা অবধি সফর করিয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করল‚ “কোথায় যাচ্ছ‚ জ্যাক্সিথ? তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন।”
ওর প্রশ্নের গুরুত্ব দিলাম না। পাশ কাটিয়ে বাহিরে পদার্পণ করে পালটা প্রশ্ন করলাম‚ “আন্দ্রেস কোথায়?”
“ও আছে—বাহিরে কোথাও।”
অলক্ষিতভাবে মাথা নাড়লাম। “ তাকে কল করে বলো আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।” প্রস্থানের উদ্দেশ্যে এককদম এগোলে আমি পুনরায় শনের দিকে তাকালাম। “আমার ডিসচার্জের—।”
“হয়ে যাবে।” মাঝ থেকে কথা কেটে শন আমার অসম্পূর্ণ বাক্যের জবাব দিল।
আমার ঠোঁটের দুই কোণা কিঞ্চিত প্রসারিত হলো মাত্র। বাম বাহুর মৃদু ব্যথাকে সহজে উপেক্ষা করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলাম।সুউচ্চ অট্টালিকা পেছনে ফেলে‚ অদৃশ্য বাতাসের ধাক্কাকে উপেক্ষা করে গাড়িটি ছুটে চলেছে। অনন্যমনা হয়ে বাহিরে তাকিয়ে ঠিক কি দেখছি তা আমি নিজেও জানি না। মস্তিষ্কে কেবল একটি প্রশ্ন ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরছে।
সেরেনের ছবি গোডাউনে কেন ছিল?
তার কোন বন্ধুবান্ধব ছেলে মেয়েদের দলে ছিল ‚ নাকি অন্য কোন কারণ? জবাব অজানা। কিন্তু জানা আবশ্যক। অন্তত আমার জন্য। রাগ‚ কৌতূহল‚ দুশ্চিন্তা…এক মিশ্র অনুভূতি অনুভব করতে পারছি।
“মিস সেরেন তার শহরের একটি নাইট ক্লাবে আছে।” আন্দ্রেসের আকষ্মিক সংবাদে আমার মনোযোগ অস্থায়ীভাবে তার দিকে পরিবর্তিত হলো। স্টিয়ারিং হুইলের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে সে আমার দিকে একটিবার তাকাল। আমার জবাবের অপেক্ষা না করে সে পুনরায় বলল‚ “এজেন্ট এলভেনকে জিজ্ঞাসা করলে সে এই তথ্য জানায়। সেরেনের বন্ধু নিওনি এবং আলেক্সও উপস্থিত।”
বাহিরের দিকে চোখ ফিরিয়ে রাশভারি কণ্ঠস্বরে আমি ব্যক্ত করলাম‚ “তবে আমাদের গন্তব্য সুস্পষ্ট।”
“কিন্তু আপনার শরীর—” আন্দ্রেস নিজ মনের ভাবকে সম্পূর্ণ রূপে বাক্যে পরিণত করবার আগে আমি তার দিকে খানিকটা কঠোর দৃষ্টিতে তাকালাম। সে স্তব্ধ হয়ে গেল। দৃষ্টি সরিয়ে স্থির করল পিচঢালা চওড়া পথটায়। অতঃপর পথের মোড় পরিবর্তন।
YOU ARE READING
শ্বাপদসংকুল
Mystery / Thrillerঅপরিচিত নাম্বার থেকে একের পর এক ম্যাসেজ পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সেরেন। ম্যাসেজে অজ্ঞাত ব্যক্তি অদ্ভুত তাকে সম্বোধন করতে একটি নাম ব্যবহার করে। এরপর পরিচিতদের সাথে একের পর এক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনা ঘটলে সেরেন দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়ে উঠে। কিন্তু ভয়ার্ত নয়।...