ভোর পেরিয়ে সকাল। সূর্য তার আধিপত্য এখনো পরিবেশে সম্পূর্ণভাবে বিরাজ করতে ব্যর্থ। ঘাসের কঁচি ডগায় এখনো হীরার মতো জ্বলজ্বল করছে শিশির বিন্দু। প্রকৃতি ঈষৎ ধোয়ার ন্যায় কুয়াশার চাদর নিজ শরীরে জড়িয়ে আছে। সেই চাদরে সূর্যের ঈষৎ সোনালি বর্ণ ঘোলাটে হয়ে অদ্বিতীয় ও নামহীন এক অপরূপ রঙের সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতি কতো রঙিন!
প্রভাতের নৈয়মিক কাজগুলো সেরে মায়ের সাথে গল্প করতে করতে নাস্তা বানানোর কাজে সাহায্য করছিলাম। সেদিন লোকটাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর মায়ের অনুশোচনার সাক্ষী হবার এক আভাস মনে ছিল। আশান্বিত ছিলেম যে মা হয়তো কান্না করবেন। কিন্তু তার কোনটি-ই ঘটেনি৷ তিনি অনুতপ্ত নন‚ অপরাধবোধও নেই। লোকটার প্রতি তার টান কতটুকু ছিল বা আছে তা বুঝতে আলাদাভাবে কোন জবাবের প্রয়োজন হয়নি। তিনি যেন প্রাণ খুলে বাঁচতে আরম্ভ করেছেন।
খানিক পরপর মায়ের মুখপানে চেয়ে তার সলজ্জহাস্যে অভিব্যক্তি দেখার মাঝে এক অদ্ভুত তৃপ্তি ও আনন্দ অনুভব করছি। এখন কেমন বাচ্চা হয়ে গিয়েছি। মায়ের সাথে ঘুমানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষাটা দামাচাপা দিতে পারি না। আমার বাচ্চাসুলভ মন তার দেহের আসল বয়স ভুলে যায় মায়ের আদর পাওয়ার লোভে।
মৃদু পদধ্বনিতে সামনে তাকালে একমাত্র বড় ভাই স্যান্ড্রুকে দেখতে পেলাম। সবেমাত্র ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নিজ রুম ছেড়ে ডাইনিং টেবিলটার একটা চেয়ার টেনে বসেছে। রাজ্যের সকল ঘুম এখনো তার মাঝে রাজত্ব করে চলেছে।
আমি খানিকটা দুষ্টুমি করে স্যান্ড্রুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম‚ “শুভ সকাল‚ বাচ্চা কোয়ালা।” কারণ তার মুখমণ্ডলটা ঠিক বাচ্চা কোয়ালার মতোই দেখাচ্ছে৷
“উম…” জবাবে শুধুমাত্র এতটুকু অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করল ভাই। আমি তাকে কি বলে সম্বোধন করেছি তা যে সে উপলব্ধি করতে পারেনি তা বেশ বুঝা যাচ্ছে।
সারারাত কম্পিউটারে কিসব কোড টাইপ করে চলে‚ কিসব ভিডিও যেন দেখে কাকে পাঠায় ও। আমি ওসব বুঝি না। বুঝতেও চাই না। ওর কাজ ও সামলে সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলেই হলো। কখনো ওর কাজ নিয়ে আমি অথবা মা কেউ কোন প্রশ্ন করিনি। ওর উপর আমাদের উভয়ের বিশ্বাস আছে। এবং ও আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে তার কাজ তার জন্য হুমকিস্বরূপ নয়। বরং সে যেই কাজের সাথে জড়িত তার মাধ্যে অন্যেরা উপকৃত হয়।
“রেন‚ টেবিল সাজাও। যাও।” শশা কাটতে কাটতে মা আদেশ করলেন। আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম। টোস্টের প্লেট ও জুসের জগটা হাতে উঠানোর সময় মায়ের মিষ্টি ও আরামদায়ক কণ্ঠস্বর আবারও শুনতে পেলাম। “বাকিটুকু আমি শেষ করে আসছি।”
কথা অমান্য করলাম না। টেবিলের উপর এক এক করে প্লেটগুলো সাজাতে লাগলাম। ভাই টেবিলের উপর নিজ হাতের মাঝে মাথা রেখে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তার কুঁকড়ে থাকা চুলগুলোকে ধরে আলতোভাবে উপরের দিকে টানলে সাথে তার মাথাটাও উঠে এলো। ঘুমন্ত বিড়ালছানা যেমন করে নিজ শরীরের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয় ঠিক তেমন।
খাবারের মাঝে ওর ক্লান্ত শরীর ও মস্তিষ্কে খাবারের রস চলাচল শুরু করলে ঘুমটা কেটে যেতে আরম্ভ করে। হাসাহাসি ও খোশগল্পের মধ্যে দিয়ে আমরা সকালের নাস্তাটা শেষ করি।
হঠাৎ ভাই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আমায় বলে উঠল‚ “রেন‚ গাড়িটা আজ আমার লাগবে।” আমি ইতিবাচক মাথা নাড়লাম।
কোন জবাব দেওয়ার আগে বিপরীত দিক থেকে মা বলে উঠলেন‚ “বেশ তো। লাগবে‚ নিবে। ও কি নিষেধ করেছে কখনো। দু'জনেই প্রস্তুত হয়ে নাও। স্যান্ড্রু‚ রেনকে ওর ক্যাম্পাসে ছেড়ে দিয়ে তারপর যেখানে যাওয়ার চলে যেও।”
মাথা নাড়ল স্যান্ড্রু। আমায় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার আগে ও আমার বিনুনি ধরে বেশ জোরে টান দিল। “উঁহ!” পেছন দিকে মাথাটা ঝুঁকে গেলে একটি অস্পষ্ট শব্দ আমার কণ্ঠ থেকে পালিয়ে গেল। সরু হয়ে এল আমার চোখজোড়া। ও হেসে উঠল। তখন আমি ওর চুল টেনেছিলাম বলে এখন তার প্রতিশোধ নিল।
“জলদি রেডি হয়ে নে।” নিজের রুম নামক ওই দানবটার পেটে ঢোকবার আগে ও বলল।
ক্লাসের জন্য রেডি হয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়েছি ঠিক সেসময় হঠাৎ আমার ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল এবং সাথে ম্যাসেজের শব্দ। বেশ কৌতূহল জন্মালো। সকালবেলা কার স্মৃতিতে উপস্থিত হয়েছি যে ম্যাসেজ আসবে। নোটিফিকেশন টেনে ম্যাসেজটি পড়তেই আমার চোখজোড়া বিস্ফোরিত হলো। অলিভার ও ডোভের হত্যার মামলার দায়িত্ব যেই অফিসারের উপর আরোপিত করা হয়েছিল এটি তার থেকে আগত।
YOU ARE READING
শ্বাপদসংকুল
Mystery / Thrillerঅপরিচিত নাম্বার থেকে একের পর এক ম্যাসেজ পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সেরেন। ম্যাসেজে অজ্ঞাত ব্যক্তি অদ্ভুত তাকে সম্বোধন করতে একটি নাম ব্যবহার করে। এরপর পরিচিতদের সাথে একের পর এক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনা ঘটলে সেরেন দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়ে উঠে। কিন্তু ভয়ার্ত নয়।...