#28

226 19 2
                                    

#Journey

#২৮

একটা সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে জেসমিন যাচ্ছে,আকাশ জুড়ে তেজবিহীন সূর্যের আলোর ঝলকানি।জেসমিন সাবধানে পা ফেলছে ঘাসের বুকে,যেন এলোমেলোভাবে পা ফেললেই ঘাসের খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে,পরনে সাদা রঙের পা পর্যন্ত লম্বা গাউন,খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। দুহাতে গাউন ধরে হাঁটছে,চারপাশটা এত সুন্দর! হঠাৎ করেই আকাশ কালো হয়ে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করে।জেসমিন নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে সামনে এগুতে থাকে,আর তখনই খেয়াল হয়,তার সাদা জামা লাল রক্তে ভরে গেছে।পেছন ঘুরতেই দেখে জাফার দাঁড়িয়ে, ওর সমস্ত শরীর বেয়ে রক্ত পড়ছে,আর সেই রক্তেই জেসমিনের জামা রক্তাক্ত হয়েছে।তার কিছুটা পেছনে রাইফ আর সেলিম দাঁড়িয়ে আছে,চোখে অসহায় দৃষ্টি।

আচমকা জেসমিন দেখতে পায়, পায়ের নিচে বিশাল কালো গহ্বরের মুখ হাঁ হয়ে গেছে আর তাতে সে নিজে ঢুকে পড়ে যাচ্ছে।ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে, "দিয়ে দে...দিয়ে দে..."
পড়ে যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে দেখে রাইফ আর সেলিম গর্তের কিনারায় দাঁড়িয়ে ওকে নিচে পড়ে যেতে দেখছে,দুজনের চোখের দৃষ্টিই নিষ্প্রাণ!

লাফ দিয়ে চিৎকার দিতে দিতে নিজেকে সামলে নেয় জেসমিন,এতক্ষণ একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিল যা গত কয়েকদিন ধরে একটানা দেখে যাচ্ছে।এসি চলছে,ঘর যথেষ্ট ঠান্ডা,তবুও গায়ের জামা ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে শরীরের সাথে সেঁটে আছে,বিশেষত পিঠের দিকটা।বাঁ পাশে তাকিয়ে দেখে রাইফ আর সেলিম দুজন শান্তিমত ঘুমুচ্ছে,ওর হুট করে জেগে ওঠা ওদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়নি।চুপ করে উঠে বসে বিছানা থেকে ধীরস্থিরে নেমে আসে।গায়ের জামা খুলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে ঘাড় পিঠ মুছে নেয়।প্রতিটা রাতে এমন দুঃস্বপ্ন ওকে আবারও তাড়া করতে শুরু করেছে,ঠিক পুরোনো দিনের মত।মাঝখানে জীবনটা অনেক সুন্দর ছিল,গত দেড় মাসে আবার সেটা বিষের মত লাগছে।অবশ্য এখন ঘুমুলে দুঃস্বপ্ন দেখে,আগে ঘুম হত না,জেগে জেগেই সেটা দেখা যেত।

শরীর মুছে পাতলা নাইটি গায়ে চড়ায়।কোন অজানা কারণে শরীর শুধু ঘাম দিচ্ছে,আর সব কিছু অসহ্য লাগছে।এখন ভারী কাপড়ের ঝামেলা করার মানে নেই।তাছাড়া ঘরে আছেই তো স্বামী আর সন্তান ছাড়া কেউ নেই।হুম,সেলিমকে নিজের সন্তানই বলা যায়।এক গ্লাস পানি খেয়ে বেডরুম সংলগ্ন ট্যারিসে চলে আসে জেসমিন।ওরা সিসিলিতে আসার এক মাস আগে কিস্তিতে বাড়িটা রাইফ কিনেছে।ইটালির নাগরিক হয়েছে,বাড়ি না কিনলে কি চলে?শুরুতে এটা ছাড়াও আরো কয়েকটা বাড়ি পছন্দ হয়েছিল,তবে জেসমিন আর জাফার দুজনেই এটা পছন্দ করে।বাড়িটা খুব বেশি বড় না,তবে সামনের ভিউ খুব সুন্দর,একটা বিরাট লেক দেখা যায়। পার্কিং ছাড়াও দোতলা বাড়িটায় নিচতলায় গেস্টরুম,কিচেন ডাইনিং আর লিভিং রুম।উপরে চারটা বেড রুম,একটা বড় ট্যারিস।ট্যারিস দেখেই মূলত ওদের সবার এটা পছন্দ হয়ে যায়।সেখানে রেলিংএর পাশ জুড়ে ছোট ছোট গাছ,একটা দোলনা, একটা টি টেবিল আর বসার জন্য দুটো চেয়ার।প্রায় বিকেলেই এখানে জেসমিনের বসা হয়,একেবারে মন ভাল করে দেয়া পরিবেশ।

Journey (Completed✅)Where stories live. Discover now