১৭

438 26 2
                                    

তরী বিগত কিছুদিন যাবৎ পুতুলের মত নিস্ক্রিয়ভাবে বসে বসে সবার কান্ড দেখছে কেবল। এখন পর্যন্ত ওর কাছে জিসানের ফোনকল আসেনি। দুই বাসাতে খুব চেঁচামেচি হয়েছে, তরীর শ্বশুর শাশুড়ি খুব ক্ষেপেছে। তরীকে যখন বারবার জিজ্ঞাসা করছিল, তরী বলেছে,
"আমি তেমন কিছু জানি না। উনি বিয়ের কথা তোলায় আমি বাচ্চাদের কথা ভেবে আর আপত্তি করিনি"
ইমরানের বাবা আজমল বললেন,
"এইসব যখন করবা, তখন আগেই করলা না কেন? আরেক বাড়ির মাইয়া জড়ায়া এরপর এদিকে গেলা কেন?"
"আব্বা, আসলে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু উনাকে তো বিয়ে ভাঙতে আমি বলি নি! আমি তো রাজী হয়েছি শুধু"
নাজনীন মুখ কালো করে বললেন,
"বিয়ে ভাঙতে বলো নাই, কিন্তু বিয়ের ভাঙার দোষ তো তোমার ঘাড়েই আসতেছে। মানুষ তো বলতেছে, তোমার কারণে বিয়ে ভাঙছে"
"আম্মা, মানুষ তো সত্য জানে না। না জেনে তারা তো অনেক কথাই বলে"
আজমল সাহেব বললেন,
"তার মানে তুমি বলতে চাও, তুমি এসবের কিছু জানো না?"
"না আব্বা"

মিথ্যা বলতে তরীর বাঁধলেও সে ঠিক বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত, কি বলা উচিত। সবাইকে যা-ই বলুক, ও তো জানে যে সেদিন জিসানকে ডেকে কথার বলার ফলাফল এটা। ওদিকে জিসানকে দুবার কল করেছিল, একবারও রেসপন্স করেনি সে। যদি রেসপন্স না-ই করবে, তবে ও কিভাবে বুঝবে জিসানদের বাড়ির সবাই কি ভাবছে? তরীর বাবার বাড়ির মানুষরাও বিরক্ত। সবার ধারণা, তরী বিয়ের কথা বলেছে বলে জিসান তরীর জন্য বিয়ে ভেঙেছে। জলই যখন খাবে, তখন এত তা ঘোলা করে খাওয়ার কি দরকার ছিল?

যেহেতু আত্মীয়দের সবাইকে বিয়ের কথা বলা শেষ, তাই ঠিক হলো এই শুক্রবারেই ওদের বিয়ে হবে। একটা চাইনিজে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল, এবারও তাই-ই হবে, কেবল পাত্রী বদলে যাবে। তরী বেশ কবার চেষ্টা করেও জিসানের সাথে যোগাযোগ করতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত বিয়ের এক দিন আগে মেসেজ করল-
আজ রাতে যদি সম্ভব হয়, এই বাসার ছাদে আসবেন?কিছু জরুরি কথা ছিল যে!

যথারীতি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জিসানের কোনো উত্তর নেই।

তরীর যেহেতু দ্বিতীয় বিয়ে, তাই আগের রাতে হলুদ দেয়ার জন্য তেমন কেউ চাপাচাপি করলো না। তরীও এই নিয়ে শান্ত আছে। ওর বাবা মা এই বাসায় এসেছে গতকাল। প্রথম প্রথম সবাই বিরক্ত হলেও মনে মনে সবাই সন্তুষ্ট। তাদের যত বিরক্তি, সব তরীকে ঘিরে। তরী অবশ্য সেসব ভাবছে না, ওর ভাবনা জুড়ে অতীতের স্মৃতিরা ছুটোছুটি করছে।

আমি আবার, আর একটা বারWhere stories live. Discover now