২৮

522 25 3
                                    

ওদের সবার চোখ যখন ঢুলুঢুলু হওয়ার কথা, তখনও সবাই হৈহৈ করে গল্প করছে। গল্পের বিষয় এই মহাদেশ থেকে ঐ মহাদেশে লাফ দিচ্ছে। জিসান চোখ কচলে বলল,
"আমি আর পারছি না। তোরা এত কথা কিভাবে বলিস? বলি, এজন্য মেয়ে মানুষের উন্নতি হয় না। এরা গল্প করেই জীবনের তিন ভাগের দুই ভাগ পার করে দেয়! তোদের গল্প তোরা কর, আমি যাই"

কেউ জিসানের কথাকে তেমন পাত্তা না দিলেও তরী আড়চোখে জিসানের চলে যাওয়া দেখলো। জিসান অবশ্য তরীকে ওর সাথে আসার জন্য ইশারা করার উদ্দেশ্যে পেছনে ফিরেছিল, কিন্তু তরী অন্যদিকে চেয়ে আছে বলে আর কিছু বলল না। জিসান চলে যাওয়ার আধাঘন্টা পর ওরাও এক এক করে নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে। ফজরের আজানের আরও দুই ঘন্টা বাকি আছে, নাহলে তরী আরও জেগে থাকত। নিঃশব্দে দরজা খুলে ঘরে এসে বিছানায় পা টিপে টিপে উঠল। জিসান অবশ্য দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে, তবুও সতর্কতার মার নেই। ইশতি বিছানার অন্যপাশে হাত পা চারপাশে ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে, আর মাঝখানে তন্দ্রা। তরীর জিসান আর ওর মেয়ের মাঝে শুতে হবে। খুব সাবধানতার সাথে জিসানের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ল। জিসান চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল। তরী শোয়ার সাথে সাথে ওকে পেছন থেকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরল। তরী চমকে উঠল, জিসান কি উঠে গেছে। আতঙ্কে নিঃশ্বাস বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। যখন ও ভাবছে, জিসানের ঘুম ভাঙেনি, তখনই জিসান বলল,
"এতক্ষণে আসলে? আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি!"

তরী জবাব না দিয়ে এক ভাবে পড়ে থাকলো। জিসান ওর আরও কাছে আসলো।
"কি হলো? ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?"
তরী তবুও জবাব দিল না, ওকে এখন ঘুমের অভিনয় করতেই হবে! জিসান আবার বলল,
"মনে হয় ঘুমিয়ে গেছ। আমি আরও তোমার নড়াচড়ায় উঠে গেলাম"

তরীকে নিজের দিকে চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে খুব আস্তে আস্তে করে বলল,
"কত বছর পর আজ মন ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, তোমাকে বোঝাতে পারব না! একজন পুরুষের অনেক স্বপ্ন থাকে তার জীবনসঙ্গী নিয়ে, আমারও ছিল। তোমাকে দেখে মনে হয়েছে, তুমিই পারবে আমার স্বপ্ন সত্যি করতে। জানি না আমাকে কতটুকু পছন্দ করো, আমাকে আদৌ ভালোবাসো কিনা। তবে তোমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার জার্নিটা আমি খুব এঞ্জয় করছি। একদিন তুমি আমার ভালোবাসার সবটুকু উপভোগ করবে। আমি সেদিনের জন্য অপেক্ষায় আছি। কবে যে তোমাকে পুরোপুরিভাবে নিজের করে পাবো!"

আমি আবার, আর একটা বারWhere stories live. Discover now