প্রেসার কুকারের আওয়াজ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো। সেই সঙ্গে সুগন্ধিও। মা আর তার আদরের বউমা নাবিলা দুজনে মিলে রাতের খাবার প্রস্তুত করে ডাইনিং টেবিলে বসতে বললো। খাবারে ছিলো শুধুমাত্র খাসির মাংসের ভুনাখিচুরি। মা প্রায়শই খাইয়ে দিতে চাইতেন‚ কিন্তু আজ সেরকম কিছুই বললেন না। আমি বললাম‚
"মা‚ সকালের মতো এখন রাতের বেলাতেও ভুনাখিচুড়ি খেতে হবে?"
"রাগ করিস না। লক্ষ্মী ছেলেদের মতন খেয়ে নে‚ বাবা।"
এরপর সকলেই কমবেশি খিচুড়ি বেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। অন্যান্য বাড়িতে সাধারণত নারীরা খাবার পরিবেশন করে যতক্ষণ না ওই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের খাওয়া শেষ হয়। তারপর ওরা খাওয়া শুরু করে। যদিও আমাদের বাড়িতে অমন বৈষম্যমূলক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস নেই‚ তাই সকলেই একসাথে খেতে বসেছি। মা তার বোনের বাড়ির গল্প শুরু করে দিলেন। খেয়াল করলাম নাবিলা আড়চোখে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে যেন সোডিয়ামের সেই হলুদ অগ্নিশিখা জ্বলছে।
সম্ভবত আজ রাতে ঘুম হবে না। লাইটটাও বন্ধ। খাটের দুপাশে দুজন। মাঝখানে কোলবালিশ। কোলবালিশটা এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করছে। বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করলাম। দেখি রাত একটা বেজে গেছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে 'কারাভানা' গানটা শুনতে লাগলাম। সাহারা মরুভূমির স্মৃতি নিয়ে গানটা রচিত। এক ঝলক তাকালাম নাবিলার সাদা-কালো মুখের দিকে। ওর পাশে থাকা জানালা দিয়ে চাঁদের আলোর প্রবেশ করায় এমন ঘটছে। আসলে চাঁদের আলোর তেমন একটা বর্ণালী চিহ্নিত করা যায় না। চুপ করে সেই নিঃস্ব-নিঃসঙ্গ চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ও। সেই কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে এই চাঁদই পৃথিবীকে প্রদিক্ষণ করে যাচ্ছে। সাংসারিক জীবন এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। কেননা একজন স্ত্রী বা ক্ষেত্রবিশেষ গার্লফ্রেন্ড সারাজীবনই তার জীবনসঙ্গীর ছায়াতলে থেকে তাকে প্রদিক্ষণ করতে থাকে। সামান্য সহানুভূতি পেলেই এদের মন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তবে এরা বড্ড স্পর্শকাতর প্রকৃতির হয়ে থাকে। সামান্য কারণেই অভিমান করে বসে। ইতিমধ্যে গানটা শেষ হয়ে গিয়েছে। পুনরায় গানটা চালিয়ে দিলাম। এবার ফেসবুকে নিউজফিডটা নাড়তে শুরু করলাম। এত রাতে কিছু অবিবাহিত ছেলেমেয়েরা ছাড়া আর কেউই অ্যাকটিভ থাকে না। প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলে আছে। অধিকাংশই আমার কলেজের স্টুডেন্টরা পাঠিয়েছে। নামকরা কলেজে চান্স পেয়ে এখন সারাদিন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে একেবারে অসামাজিক করে ফেলছে! এসব ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। নাবিলারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলে রয়েছে। আমি অ্যাকসেপ্ট কিংবা রিজেক্ট কিছুই করি নি। শালার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বউ-বাচ্চা‚ শিক্ষক-ছাত্র‚ চাচা-মামা সকলকেই ফ্রেন্ড হওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে! এই অবাধ মেলামেশার জন্যই আজকালকার ছেলেমেয়েদের এই নাজেহাল অবস্থা। কলেজ বাঙ্ক করে বন্ধুদের সাথে রেঁস্তোরায় গিয়ে মাতামাতি করে। সেগুলো আবার ফেসবুক-ইনস্টাতে পোস্ট করে সকলকে জানিয়ে দেয়। কি যেন ভাবতে লাগলাম...... আর মনে পরছে না। ডিপ্রেশন বোধহয় এবার সত্যিই আমার মাথাটাকে খেয়ে ফেলবে।
YOU ARE READING
নিস্তব্ধতা
Romanceএক অভিমানী, রোমান্টিক (সমকালীন) উপন্যাস। কিছুটা স্মৃতি কিছুটা বিচ্ছেদের জ্বালা-যন্ত্রণা জীবনে অনেক কিছুই পালটে ফেলতে পারে। তবে জীবন তো আর থেমে থাকে না। একজনকে না একজনকে শেষ পর্যন্ত বেছে নিতেই হয়।