অধ্যায়-২৫

40 9 0
                                    

একথা শুনে আমি নীলাকে কষিয়ে একখানা চড় বসিয়ে দিই। এর আগে কখনো কোনো মেয়ের মানুষের গায়ে হাত তুলি নি কিন্তু আজ‚ যাকে আঘাত দেওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করি নি তার গায়েই হাত উঠিয়ে ফেললাম। মেয়েটার সামনের দিকের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পুরো মুখমন্ডলকে আবৃত করে ফেলেছে। এতদিনের বুনে রাখা স্বপ্ন কী এক নিমিষেই চুরমার করা যায় নাকি।
"বেয়াদব মেয়ে কোথাকার! সুইসাইড করার খুব শখ হয়েছে তাই না?"
নীলা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। কি করবে? কি বলবে? কিছুই ওর মাথায় ঢুকছিলো না। সে অমনি মূর্তির মতো চুলের আড়ালে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মুখে ফুটে কথা বলার শক্তি আর নেই। কেননা আমি তা বিনষ্ট করে ফেলেছি।
সারারাত ঘুমোতে পারিনি এই ভেবে যে‚ কখন মেয়েটা উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে। সারাটাদিন ক্লান্ত থাকায় অবশ্য ওকে ফোন করে বিরক্ত করতে চাইনি। তবে টেক্সট করে দিয়েছি। সিন করে নি। সকালে ওকে কলেজে দেখতে পেয়ে আশ্বস্ত হলাম। একেবারে মাঝের কোনো একটা বেঞ্চে বসে আছে সিনথিয়ার পাশে। সেই সিনথিয়া যাকে নীলা এক মুহূর্তও সহ্য করতে পারে না। গতকাল যে গালে চড় মেরেছি সেই ফর্সা গালখানা পুরো লালচে-গোলাপি হয়ে গিয়েছে। চোখ-মুখ সব ফ্যাকাসে তথা বিবর্ণ দেখা যাচ্ছে। মনে হয় সারারাত না খেয়ে চুপটি করে বসে ছিলো। পুরো লেকচারে একটাবারও আমার দিকে নজর দেয় নি মেয়েটা। যাহোক‚ ক্লাস শেষে আমার সামনে দিয়ে নিঃশব্দে চলে যেতে লাগলো।
ঠিক সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়ে বড়সড় একখানা চকলেট বার নিয়ে ওর হোস্টেলের গেইটে দাঁড়ালাম। এক সিকিউরিটি গার্ড জিজ্ঞেস করল যেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি না? আমি বললাম তেমন কিছু না। তাছাড়া চকলেটের বারটাও আমার ব্যাগে ঢুকানো ছিলো। সিড়ি বেয়ে উঠে এক পা এক পা করে ওর রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। দুতলার একেবারে দক্ষিণ দিকের রুমটা সেখানেই নীলা আনমনা হয়ে দরজাটা খুলে দিল। ওর চোখে অভিমানের সেই বিষাক্ত ছাপ। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম‚
"আমাকে ক্ষমা করে দাও‚ নীলা। আমি আসলে তোমার উপর হাত উঠাতে চাইনি বিশ্বাস করো। কিন্তু তুমি যেভাবে বাপ্পা রাজের মতো সুইসাইডের কথা বলছিলে তাতে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি।"
আমি নীলাকে জড়িয়ে ধরলেও ওর হাতদুটো আমার শরীরকে স্পর্শ করে নি। এক পর্যায়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেই ফেললাম‚
"ব্যাস‚ অনেক হয়েছে। আর না। তুমি আর আমার সাথে এগোতে না পারলে খেলা এখানেই শেষ করো। আমি জোর করে কাউকে আটকে রাখতে পারবো না।"
ব্যাগ থেকে চকলেটের বারটা বের করে ওর রিডিং টেবিলে রেখে দিলাম।
"এটাই হলো আমার দেওয়া শেষ উপহার। ওপারে ভালো থেকো।"
একঝাঁক যন্ত্রণা আর কষ্ট বুকে আঁকড়ে ধরে চলে যেতে লাগলাম। নীলা আমার হাতের কব্জিটা ধরে আটকালো।
"কী বোঝাতে চাইছো‚ আমায় ছেড়ে দিয়ে তুমিও ভালো থাকবে? সে আমি কিছুতেই হতে দিব না।"
"তাহলে কী করবে শুনি?"
"আমার বাচ্চার বাবা হবে।"

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now