অধ্যায়-২১

29 9 0
                                    

ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাড়াতেই নীলাকে উদ্দেশ্য করে আমি কিছুটা হতভম্ব ভঙ্গিতে বলে উঠলাম‚
"দরজাটা তো খোলা!"
"সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি।"
"সর্বনাশ! মন্টুর জুতোজোড়া তো পাশেই পড়ে আছে। মানে সে গ্রামের বাড়ি যাই নি?"
"কিন্তু তুমি না বললে বাসায় কেউ নেই। এখন আবার এসব কি বলছো?"
আমার হুঙ্কার শুনে মন্টু দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। নীলার দিকে পলক পড়তেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেয়েটার দিকে। নীলা হাত নাড়িয়ে মিষ্টি কণ্ঠে বলতে লাগলো‚
"হ্যালো ভাইয়া‚ কেমন আছেন? আমি নীলা।"
মেয়েদের কাছে ভাইয়া ডাক শোনার পর সিঙ্গেল ছেলেরা যে কষ্ট পাবে না সেটা বললে ভুল হবে। সেই একঝাঁক কষ্ট নিয়েই সে উত্তর না দিয়ে ওভাবেই নীলার দিকেই তাকিয়ে রইল। আর তাকাবেই না কেন‚ অমন রূপবতী মেয়ে ও কি আর দুটো দেখেছে নাকি। আমি ওর সেই আন্তরিকতায় ঘি ঢাললাম‚
"ত... ত... তুই বাড়ি গেলি না কেন?"
মন্টু আমার কথায় কর্ণপাত না করে নীলার সাথে হ্যান্ডশেক করল‚
"আমি মন্টু‚ তোমার ধ্রুব স্যারের ফ্ল্যাটমেট।"
আমি চোখ রাঙিয়ে মন্টুকে ইশারা করলাম এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু ব্যাটা কোনো সাড়া দিল না। আমি নীলার হাত ধরে ওকে ড্রইংরুমে বসালাম। মেয়েটা ভিতরে ঢুকতে কেমন যেন ইতস্ততবোধ করছিলো। তারপর মন্টুকে ডেকে নিয়ে বাড়ির পিছনের দরজার দিকে অগ্রসর হলাম।
"আরে তুই কি মানুষ নাকি? আজকে তোর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আর তুই এই সময়... ... ননসেন্স!"
মন্টু আমার কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে উড়িয়ে দিলো। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো‚
"এত রূপ‚ এত বাহার‚ এত সৌন্দর্য‚
কভু ভোলা যায় না‚
সামনের এই খাটারা গাড়িখানা
মেইড ইন চায়না।"
"তবে রে! আমার এই নতুন বাইক তোর কাছে খাটারা মনে হচ্ছে? নিজে তো সেকেন্ডহ্যান্ড চালাস। দশ-পনেরোবার লাথি মারলে তারপরে যদি স্টার্ট হয়‚"
"পারবো না কথাটি বলিও না আর‚
একবার না পারিলে দেখো শতবার"
"মোটিভেশনাল স্পিচ দেওয়া বন্ধ কর এবার।"
"শিয়াল অনেক বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও মানুষ কিন্তু কুকুরই পোষে। কারণ সঙ্গী হিসেবে চতুরতার জন্য বিশ্বস্ততা জরুরী..."
"ভাই‚ কন্ট্রোল ইয়োরসেলফ। এই নে চাবিটা ধর আর বাইকটা নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে আয়। রাত আটটার আগে বাড়ি ফিরবি না‚ ওকে।"
"এভরিথিং ইজ ফেয়ার এন্ড লাভলী।"
"ধুর! দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবি‚ বাইকের যেন কোনো এক্সিডেন্ট না হয়।"
মন্টু এবার প্রসঙ্গে ফিরে এলো‚
"বাইক এক্সিডেন্ট করলে তো সেটা মেরামত করা যাবে। আর তোর বন্ধুটা যদি এক্সিডেন্ট করে বসে‚ তখন কি করবি?"
"নিজ অর্থায়নে তোর হাড্ডি প্লাস্টার করে দেব।"
মন্টু খানিকটা হেসে বাইকে চেপে বসলো। এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে চলে গেল এক অজানা গন্তব্যে। তবে এই মুহূর্তে আমার কাছে বাইকের তুলনায় নীলার গুরুত্বটুকু বেশি। দ্রুত ওর কাছে ফিরে গেলাম। নীলা বাড়িরটা ঘুরে দেখছে।
"তোমরা ব্যাচেলর মানুষ বাড়িটাকে তো ভালোই পরিপাটি করে রেখেছো।"
"হুম‚ তবে এর ক্রেডিট শুধুমাত্র নাজমুলেরই প্রাপ্য।"
"তাহলে তুমি তোমার ফ্ল্যাটমেটকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নাও।"
"ব্যাপারটা সেরকম না‚ নাজমুল একটু আলাভোলা টাইপের মানুষ। তাই একটু..."
"অমনি বেচারাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নাও। তোমরা ছেলেরা সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে একটাবারও দ্বিধাবোধ করো না। বাই দ্য ওয়ে‚ আমরা আইসক্রিম কখন খাবো?"
"আমার জানুটা যখন বলবে ঠিক তখনই।"

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now