অধ্যায়-৫

64 11 4
                                    

রুমটায় প্রবেশ করতেই দেখলাম নীল শাড়ি পরিহিত নাবিলা ড্রেসিং টেবিলে বসে চুল আচড়াচ্ছে। চুলগুলো কতই না লম্বা। একেবারে কোমর ছাড়িয়ে হাঁটুর কাছে গিয়ে থেমেছে। চুল আচড়ানো শেষে ঠোঁটে আলতো করে লরিয়াল ব্রান্ডের গাঢ় খয়েরি ম্যাট লিপস্টিক ঠুঁকে দিলো। শপিং করার সময় লিপস্টিকটা বোধহয় মা ওকে জোর করে কিনে দিয়েছে। আমি কি কখনো ওর সাথে শপিংমলে গিয়েছি নাকি!
"একি‚ তুমি দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন। ভিতরে এসো।"
"না‚ ইয়ে... মানে..."
"মানে মানে করছো কেনো। আমায় দেখে সংকোচবোধ হচ্ছে বুঝি। আচ্ছা‚ কোনোকিছু নিতে এসেছো?"
"ওই আর কি‚ একটা চাবি ছিলো ড্রয়ারে।"
"কোন ড্রয়ারে? আমি বের করে দিচ্ছি।"
"থাক‚ আমি পরে বের করে নেব।"
"কোনো কাজ পরের জন্য ফেলে রাখতে নেই‚ কালকের কাজ আজকে আর আজকের কাজ এখন।"
একে একে দ্বিতীয় ড্রয়ারটা খুঁজে চাবিটা বের করে দিলো। এই বুঝি আমায় জিজ্ঞেস করবে‚ চাবি দিয়ে কী করবে? অবশ্য মেয়েটা আর জিজ্ঞেস করল না। প্রাইভেসি ব্যাপারে বেশ সচেতন। আমি ঘরে চলে এসে চাবিটা কলমদানির মধ্যে রেখে দিলাম। এখন ড্রয়ার খুললে কেউ দেখে ফেলবে। কেস খেয়ে যাবো তখন।
দুপুরটায় বেশ মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেল। আবহাওয়াটা বেশ ঠান্ডা। আজকে এসিটা বন্ধ করে রাখলাম। সাধারণত এসকল দিনেও আমি এসি বন্ধ রাখি না। প্রায়ই মায়ের কাছে বকা খেতে হয় অকারণে এসি চালানোর জন্য। বিকেলে নাবিলা চা বানিয়েছে আমার আর বাবার জন্য। মা ঘুমোচ্ছিলেন বলে ওর হাতের চা-খানা মিস করলো। বাবা বললেন‚
"মামণি তুমি চা নিবে না? শুধু দু কাপ চা বানিয়েছো যে।"
"না বাবা। চিনি খেলে মোটা হয়ে যাবো। তখন তো আপনার ছেলে আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না।"
"ও তোমায় অনেক অনেক কষ্ট দেয় তাই না‚ মা?"
"বাবা কি যে বলেন‚ ও কেন কষ্ট দিবে। আমি যে ওকে কত ভালোবাসি তা বলে বোঝাতে পারবো না।"
বাবার সামনে ভালোবাসা শব্দটা নাবিলার মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। সত্যিই মেয়েটা এবার লজ্জা পেয়ে বসলো।
"দেখো মামণি‚ আমি আমার ছেলেকে বেশ ভালোভাবেই চিনি। ইদানিং সে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। অকারণে তোমার উপর রাগ করে। ও তোমাকে এত্তটুকুও পরোয়া করে না‚ উল্টো তোমাকে সর্বক্ষণই কষ্ট দিতে থাকে। আমি আগে জানলে কখনোই ওর সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে তোমার এই সুন্দর জীবনটা নষ্ট করতাম না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত মামণি।"
বাবার চোখটা কেমন যেন ভিজে ভিজে হয়ে গেছে।
"ছিঃ ছিঃ বাবা‚ এভাবে বলবেন না। আপনাদের মতো বাবা-মা পেলে আমার কি আর কোনো দুঃখ থাকতে পারে? আমার মা তো সেই ছোটবেলায় মারা গেছেন। সৎমার কাছে মানুষ হয়েছি। ভাইবোনও নেই। বাবা অফিসে শত ব্যস্ততার মধ্যে থাকতেন; কখনো সময় দিতেন বা কখনো সময় দিতে পারতেন না। এখানে সর্বক্ষণ আপনাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আপনাদের খুশিতেই তো আমার খুশি।"
"ছেলেটা এত কষ্ট দেয় তোমাকে‚ তারপরও তুমি সেগুলোকে নিজের মনের মধ্যে শক্ত করে চেপে রাখো। সত্যিই‚ আমি অনেক ভাগ্যবান যে তোমার মতো বউমা ঘরে এনেছি। প্রতিটা ঘরে ঘরে এমন একজন সোনার টুকরা বউমা থাকলে আর কি লাগে বলো।"
"ধন্যবাদ বাবা‚ আর কিছু নেবেন? টোস্ট কিংবা বিস্কুট এনে দিই?"
"না মামণি‚ তুমি বরং কিছু খেয়ে নিও। ডায়েট কন্ট্রোলের চক্করে আবার অসুস্থ হয়ে পরবে।"
বাবাকে চা দেওয়ার পর নাবিলা আমার ভাগের কাপটা ওর হাতে রাখা ট্রে তেই রেখে দিয়েছে। বাবার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গেছে আমার কথা। বাবা তার হাতে রাখা পত্রিকাটা খুলে বিনোদনের পৃষ্ঠা বের করলেন। ইয়া বড় বড় পপ নায়িকাদের ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে। নাবিলা সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল‚
"আচ্ছা বাবা‚ আপনার আর মায়ের মধ্যে কোনোদিন রাগারাগি কিংবা কথা কাটাকাটি হয়নি?"
"হয়নি বললে ভুল হবে। তবে মামণি‚ বিয়ের পর কোনোদিন ঝগড়া বিবাদ হয়নি এমন কোনো সুখী পরিবার এই দুনিয়াতে আছে বলে আমার মনে হয়না। রাগারাগি অথবা কথা কাটাকাটির ফলে দুজনের মধ্যকার দূরত্ব বাড়ে না‚ বরং ভালোবাসাটুকু বৃদ্ধি পায়। এতে তারা দুজন দুজনকে ক্ষমা করতে শেখে। তাদের প্রতি যত্নশীল হতে শেখে। সর্বোপরি তাদের আত্মিক বন্ধন মজবুত হয়। তোমার শাশুড়ি মায়ের সাথেও আমার বহু বার ঝগড়া বেধেছে। দুজনে একই ছাদের নিচে থেকেও আলাদা রান্না করে খেয়েছি।"
"তাও ভালো‚ আপনার ছেলে নিজে রান্না করে খেতে পারে না। নাহলে আমার সাথেও মনে হয় এমনই করতো।"
"করতো মানে! এখনো তো করেই। দেখো না‚ সারারাত ধরে বারে গিয়ে কিসব উল্টোপাল্টা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। সবই করে আমার মামণিটাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।"
"বাবা ওকে আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। জাস্ট আরেকটু সময় লাগবে। তারপর বাবা আপনার সাথে মায়ের সাথে সমঝোতা হতো কিভাবে?"

নিস্তব্ধতাOnde histórias criam vida. Descubra agora