"পাগলী মেয়ে একটা! আমায় ফোন না করলেই বরং ভুল হতো। ইউ নো হোয়াট‚ আমি যখনই তোমার কথা ভাবি তখনই ফোনের রিংটোনটা বেজে ওঠে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে মোবাইলে তোমার মায়াবী নামখানা ভেসে উঠে। যদি এমন হতো রিংটোনটা বেজেই যেত যতক্ষণ না ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়‚ তাহলে জীবনটা আরও বেশি সুখময় হয়ে উঠত।"
"দুষ্টু কোথাকার‚ তোমার জীবনে কি সুখের অভাব ধরেছে নাকি।"
"সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।"
"তোমার শখের সংসার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ফেলব।"
"তার আগেই আমি পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে দেব। যা-ই হোক‚ বিকেলে নাস্তা-পানি কিছু করেছ?"
"কফি খেলাম একটু আগে তাই খিদেটা আপাতত মরে গেছে। এনিওয়ে‚ তুমি কি করছ এখন?"
"টিভি দেখতে দেখতে তোমার সাথে কথা বলছি।"
"ওকে‚ বাই। টেক কেয়ার।"
"আরে‚ হঠাৎই বাই বলে দিলে। অ্যানি প্রবলেম?। নাকি আমার সাথে কথা বলতে আর ভাল লাগে না তোমার।"
"আরে না‚ না। তেমন কিছু না..."
নীলা ফোনটা কেটে দিল। দিল তো দিল টেক্সট ও সিন করছে না। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমার ফোনের নোটিফিকেশন চেক করলাম। দেখি নীলা একটা নীল রঙের লাভ ইমোটিকন পাঠিয়েছে। যদিও এতদিন লাল রঙেরটা পাঠাত। আমি দিব্যি চেয়ে রইলাম ইমোজিটার দিকে। একটাবার ভাবলাম‚ আকাশ কেন নীল হয়। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির যুগ থেকেই এর অঘোষিত ব্যখ্যা চলে আসছে। কারও মতে নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, তাই আকাশে এই আলোর বিক্ষেপণ বেশি হয় এবং আকাশ নীল দেখায়। কেননা আলোর বিক্ষেপণ এর তরঙ্গদৈর্ঘের চতুর্ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক। আবার কারও কারও মতে ওজন স্তরে বিদ্যমান ওজন গ্যাসের বর্ণ গাঢ় নীল হওয়ায় আকাশ নীল দেখায়। অথচ মঙ্গল গ্রহের আকাশ কিন্তু গোলাপি ক্ষেত্রবিশেষে কমলা। সব কিছুর সমষ্টিগত বৈশিষ্ট্যের জেরেই আকাশ তার নিজের বর্ণ ধারণ করে। জীবনটাও ঠিক তেমনই। সুখ-শান্তি‚ দুঃখ-বেদনা সবকিছু মিলিয়েই জীবন। একটা ছাড়া আরেকটা সম্পূর্ণ অর্থহীন। জীবনে দুঃখ না আসলে সুখের কোনো মর্মই আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম না। তখন রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতেও যেন অন্ধকার নেমে আসত। উল্টোদিকে সুখকে পর্যালোচনা না করে কষ্টকে ধারণ করা যায় না। অঝোরে কেঁদে মনটাকে হালকা করা যায় না।১২ জুলাই‚ ২০১৫। অলস প্রকৃতির মানুষ যখন বেজায় নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে‚ ঠিক সেই মুহূর্তে আমি মর্নিং ওয়াকে বের হই। হাতঘড়িতে দেখলাম ভোর ছয়টা বাজে। মোবাইলে 'লায়ার' শিরোনামের গান ছেড়ে দিয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। গানটার সুর একেবারে বাংলা কোনো এক গানের মত‚ কিন্তু লিরিকটা ইংরেজিতে। তবে গানটির গায়িকা একজন রোমানিয়ান। রোমানিয়ান আর্টিস্টদের গান শোনার পর থেকেই গানের প্রতি আমার এক অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ছোটবেলায় তেমন গান শুনতাম না। এরই মাঝে আমার আরেক স্টুডেন্ট সিনথিয়ার দেখা পেলাম। দূর থেকে আমায় ইশারা করছে। প্রায়ই মর্নিং ওয়াকে কোনো না কোনো স্টুডেন্টদের সাথে দেখা হয়। বেশ ভাল লাগে যখন তারাও আমার সাথে হাঁটা শুরু করে দেয়। আমিও একজন কথা বলার ভাল মানুষ পেয়ে যাই।
"গুড মর্নিং স্যার।"
"গুড মর্নিং‚ সিনথিয়া। কেমন আছো?"
"জ্বি স্যার ভালো আছি। আশা করি আপনিও ভাল আছেন।"
"হুম‚ সৃষ্টিকর্তা ভালই রেখেছেন বটে। চল আজ না হয় একসঙ্গে হাঁটাহাঁটি করি?"
"চলুন‚ কোথায় যাবেন আজ?"
"উম.... পার্কে গেলে কেমন হয়।"
"অবশ্যই‚ কেন নয়। আজ তাহলে বেশ ভালই লাগবে।"
"দুদিন আগে দেখলাম পার্কে একটা কফিশপ খুলেছে। কফিশপের ভিতরে ছোটখাটো একটা লাইব্রেরিও রয়েছে। সেখানে কফি খেতে খেতে ফ্রি-তে বই পড়া যায়। চাইলে বই ডোনেট ও করা যায়।"
"তাহলে তো আমাদের সেখানে যেতেই হবে‚ স্যার। আর সত্যিই যদি এমন হয় তবে আমিও সেখানে বই ডোনেট করব। কারণ আমি একবার পড়ার পর তো বইগুলো অযথাই বাড়িতে ফেলে রাখি। সেগুলো পড়ে যদি অন্যকেউ আনন্দ পায় তাতে সমস্যা কি।"
"ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তোমার কোন জনরার বই পড়তে বেশি ভাল লাগে?"
"আমি বিশেষ করে থ্রিলার আর সমকালীন উপন্যাস পড়তে বেশি পছন্দ করি। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে রোমান্টিক উপন্যাস ও মাইথোলজি পড়তেও স্বাচ্ছন্দবোধ করি। স্যার‚ আপনি কী ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?"
"আমি নন-ফিকশন এবং সমকলীন উপন্যাসকেই প্রেফার করি বেশি। তবে থ্রিলার আর আগের মতো তেমন একটা পড়া হয়ে ওঠে না। তাছাড়া এসব খুন-খারাবি নিয়ে আলোচনা পড়লে আমার রাতে ঘুম হয় না।"
YOU ARE READING
নিস্তব্ধতা
Romanceএক অভিমানী, রোমান্টিক (সমকালীন) উপন্যাস। কিছুটা স্মৃতি কিছুটা বিচ্ছেদের জ্বালা-যন্ত্রণা জীবনে অনেক কিছুই পালটে ফেলতে পারে। তবে জীবন তো আর থেমে থাকে না। একজনকে না একজনকে শেষ পর্যন্ত বেছে নিতেই হয়।