এহ্ রে‚ রাগের মাথায় ওর নামটা বলে ফেলেছি। নাবিলাকে জানাতে চাইনি ব্যাপারটা। যদিও নাবিলা জানত যে আমার জীবনে আরও একজন নারীর ভূমিকা ছিল। মা-বাবাকে বলেছিলাম উনারা যেন নাবিলাকে নীলার সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র কিছু না বলে নইলে আবার ও কষ্ট পাবে। তাছাড়া আমার ভালোবাসাকে আমি কাউকেই প্রকাশ করতে দেব না। কিন্তু আজ নিজেই সেই রহস্য ফাঁস করে ফেলেছি। ফলাফলটাই এখন বোধহয় দেখার বাকি।
নাবিলা আমকে জোর টেনে নিয়ে গিয়ে উত্তর-পূর্ব কোণের সেই রুমটার বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসালো। এবার সেই মুহূর্তের পালা যেই মুহূর্তের জন্য আমি কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না। নাবিলা এবার একটা হুইস্কির বোতল এনে আমার সামনে হাজির হলো। আমি কিছুটা বিস্মিত গলায় বললাম‚
“ছিঃ ছিঃ তুমি আবার এগুলো শুরু করে দিলে কবে থেকে?”
“দেখছো না‚ বোতলটা একেবারে নতুন। কর্কটা সীল দিয়ে আটকানো। আর আমিই বা এসব খেতে যাবো কেন? তুমি খাবে‚ পুরো বোতল শেষ করবে আজ।”
এবার আমার হাতটা ওর মাথার উপর রেখে বলল‚
“এবার শপথ করে বলো‚ আজকে সব কিছু আমায় খুলে বলবে। কিচ্ছুটি গোপন রাখবে না‚ নাহলে আমি আজ এই মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে কোনো এক অজানা গন্তব্যে চলে যাবো। কেউ খুঁজে পাবে না আমায়।”
সেরেছে! হুইস্কি সামনে রেখে আবার শপথ। তাজ্জব করা কান্ড বাধিয়ে রেখেছে সে। আমার মাথায় যেন একটা বাজ এসে আঘাত হানল। কি করে কথাগুলো খুলে বলব ওকে? এটা তো একেবারে অসম্ভব। না বললে মেয়েটা আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। কি একটা ঝামেলা।
“অসম্ভব‚ আমি তা করতে পারব না।”
এবার নাবিলা আমার হাতে হাত রেখে বিনয়ের সাথে বলল‚
“দুঃখ শেয়ার করলে মনটা হালকা হয়। আমি জানি তুমি তা পারবে। পারতে তোমাকে হবেই।”
“উফ্! আমি পারব না। তোমার ন্যাকামো বন্ধ কর।”
“আমার কথাগুলো তোমার কাছে ন্যাকামো ঠেকছে! তো বেশ‚ আমি এবার চললাম। তুমি সুখে থেকো তোমার সেই সুখী স্বপ্ন নিয়ে‚” বলে নাবিলা গায়ে একটা ওড়না জড়িয়ে স্যুটকেস নিয়ে বাড়ির সদর দরজাটার দিকে অগ্রসর হল।
কি এক জ্বালায় পড়েছি আমি! নাবিলাকে না থামালে তো বাবা-মা আমাকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। সেই সঙ্গে লোকজন আমার নামে থুথু ফেলা শুরু করে দিবে। তার উপর মেয়েটা যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। ওর মানসিক অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না। আর কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম। ইতিমধ্যে নাবিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
“হাতটা ছেড়ে দাও বলছি।”
“না‚ ছাড়ব না। তুমি কোত্থাও যাবে না।”
“কেন? এ বাড়িতে মা-বাবার ভালোবাসা ছাড়া আর কি খুঁজে পেয়েছি আমি। আমি সেই প্রথম দিন থেকেই তোমার জীবনে ফেলনা হয়ে পড়ে আছি। কেন ছিলাম? এইজন্য ছিলাম যাতে করে তুমি অতীতের ঘটনাবলী ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবনটা শুরু করবে এবং নতুন করে বাঁচতে শিখবে। আমি তো সফল হইনি। তাই খেলার মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছি। এখন প্লিজ‚ আমার হাতটা ছাড়ো।”
“না।”
“এবার কিন্তু আমি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবো। তখন আশেপাশের লোকজন এসে হাজির হবে‚ তুমি কি সেটা চাও।”
“লোকজন আসলে আসুক‚ আমি আমার বউকে কোত্থাও যেতে দেব না।”
আমার কথা শুনে নাবিলা কিছুটা হোঁচট খেয়ে বসল। এবার ওর হাতটা ধরে টেনে নিয়ে এসে উত্তর-পূর্ব কোণের সেই রুমটার বিছানায় গিয়ে বসালাম।
“শোনো তাহলে‚ অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তজলিলের কাজ। আমিও আজ সেটাই করব।”
শুরুতে একটা চুমুক দিলে মন্দ হয় না। স্বাভাবিক অবস্থায় তো আমার পক্ষ হতে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তাই সাহস করে এক পেগ মেরে দিলাম। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো যেন কাজ করতে শুরু করেছে। আহা! কত্ত সুখী মানুষটাই না আমি। হঠাৎই কার যেন পাতলা কোমল সিলিকনের ন্যায় বেষ্টিত উরুতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কেউ মনে হয় আমার মাথার উপর আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাবিলা কিনা তা ঠিক জানা নেই।
YOU ARE READING
নিস্তব্ধতা
Romanceএক অভিমানী, রোমান্টিক (সমকালীন) উপন্যাস। কিছুটা স্মৃতি কিছুটা বিচ্ছেদের জ্বালা-যন্ত্রণা জীবনে অনেক কিছুই পালটে ফেলতে পারে। তবে জীবন তো আর থেমে থাকে না। একজনকে না একজনকে শেষ পর্যন্ত বেছে নিতেই হয়।