অধ্যায়-১৯

35 9 0
                                    

সিনথিয়া মৃদু হেসে বলল‚
"স্যার‚ আপনি কি তাহলে হরর মুভি দেখলেও ভয় পান?"
"ঠিক সেরকম না‚ তবে... ওই যে বললাম না‚ ঘুম হয় না ভালমতো। ব্যাপারটা সেরকমই প্রায়।"
"আচ্ছা স্যার‚ আপনি নাকি আমাদের কলেজ থেকেই পড়াশোনা করেছেন।"
"হুম‚ ২০০৫-২০০৭ ব্যাচে ছিলাম। কত মজা করেছি‚ দুষ্টুমি করেছি‚ কলেজ বাঙ্ক করে চায়ের স্টলে কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরেছি।"
"তারপরও কিভাবে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেন?"
"আসলে সিনথিয়া‚ তুমি সারাদিন যতই বাদরামি কর না কেন‚ পড়াশোনার আগা-গোড়া ঠিক রাখতে পারলেই সব সমস্যা নিমিষেই খতম। একমাত্র তখনই জীবনের আসল মর্ম বুঝতে পারবে। তুমি যদি মনযোগ সহকারে প্রতিদিন এক ঘণ্টা পড়ো সেটা তোমার জীবনে অনেক কাজে আসবে। আর তুমি যদি অমনোযোগী হয়ে দিনে দশ ঘণ্টা অব্দি পড়া চালিয়ে যাও তবে সে বিদ্যা তোমার কোনো কাজে আসবে না। তুমি হয়তো দেখে থাকবে‚ আনেকে সারাদিন ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকে‚ অথচ পরীক্ষার হলে গিয়ে বাম্পার ফলন নিয়ে আসে।"
আমি কিছুটা থামতেই সিনথিয়া সামান্য ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল‚
"বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না।"
"কিছু কিছু ছেলেমেয়েরা সারাদিন অ্যাকটিভ দেখালেও পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়। কারণ অ্যাকটিভ থাকার মানে তো এই না যে সারাক্ষণ ফেসবুকে উঁকিঝুকি মারতে হবে। তারা মোবাইলে ডেটা অন করে রাখে আর পড়াশোনার ফাঁকে যখন একঘেয়ে লাগে তখন হয়ত সামান্য গুতোগুতি করে।"
"স্যার‚ আপনি প্রত্যেকটা বিষয়কে অত্যন্ত সহজভাবে বুঝিয়ে দেন। বিষয়টা আমার অনেক ভাল লাগে। শত জটিলতার মাঝে‚ এমনকি ব্যস্ততা উপেক্ষা করেও আপনি আমাদের আমাদের সময় দেন। আমরা আপনার মত প্রফেসর পেয়ে সত্যিই গর্ববোধ করি।
"এই প্রথমবার কেউ আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করল। তাই আজ মনটা আজ খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাছাড়া আমার মা কখনোই আমাকে নিয়ে গর্ববোধ তো করতো না উল্টো আরও দু-চারটা গালি দিয়ে বলত তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না।"
সিনথিয়া হাসিতে ফেটে পড়ল। আমি কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মাথায় আসছে কিন্তু মুখে আসছে না ঠিক এমন একটা অবস্থা। অবশেষে সিনথিয়া সামনের দিকে ইশারা করে বলল‚
"আমারা প্রায় এসেই পড়েছি। এটাই সেই কফি শপটা না?"
"হ্যাঁ‚ এটাই। ভোর সকালেই খোলে আর রাত দশটার পর বন্ধ হয়ে যায়।"
আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে কফি শপটায় ঢুকলাম। বেশ ভালভাবেই ডেকোরেশন করেছে মালিকপক্ষ। কাঠের চেয়ার‚ টেবিল‚ ওয়াল-পেইন্টিং‚ কয়েকটা বুকশেলফ আর মিউজিক সিস্টেমও রয়েছে সেখানে। প্রায় সবসময়ই হালকা মিউজিকের গান বাজে এই কফি শপটায়। শুধু কফিই নয় বার্গার‚ চিকেন রোল‚ স্যান্ডউইচ‚ প্যাটিসসহ কোল্ড ড্রিংকসের বিচিত্র সমাহার রয়েছে এখানে। দূর থেকে কয়েকটা রেড বুলের ক্যান চোখে পড়ল। মন্টু যদি ক্যানগুলো দেখত তবে আমার মানিব্যাগটা হয়ত আস্ত রাখত না।
"সিনথিয়া‚ আমরা তাহলে সামনের ওই টেবিলটাতে গিয়ে বসি। জানালাও আছে একটা।"
"ওকে।"
"আচ্ছা তুমি আজ কি খেতে পছন্দ করবে?"
"অর্ডারটা বরং আপনিই দিন। আজ না হয় আপনার পছন্দসই কিছু গ্রহণ করি।"
"আমি ক্লাব স্যান্ডউইচ‚ ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ আর লেমন ড্রিংকস অর্ডার করতে চাচ্ছি। কফি শপে কফিই যে খেতে হবে সেরকম তো আর ধরাবাঁধা নিয়ম নেই!"
"অ্যাবসোল্যুটলি। তাহলে আজ আমিও ক্লাব স্যান্ডউইচটা একটুখানি চেখে দেখতে চাই। তাছাড়া ক্লাব স্যান্ডউইচ আমার অল টাইম ফেভারিট। সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ পেলে মন্দ হয় না। স্যার‚ আপনি কী এর আগে কখনো এই স্যান্ডউইচটা খেয়েছেন?"
"পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন রেঁস্তোরায় খেয়েছিলাম। নীলার সঙ্গে বসে বেশ জমিয়ে গল্প করেছিলাম আর স্যান্ডউইচটা গলায় ঢোকাচ্ছিলাম। আহা‚ কি যে অনুভূতি!" কথাগুলো মনের মাঝেই চেপে রাখলাম। চাইলেও বলতে পারছি না। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে লক্ষ করলাম একজন মধ্যবয়সী লোক এল অর্ডার নিতে। চুল-দাঁড়ি বয়স হয়ে ওঠার আগেই পেকে গিয়েছে লোকটার।
"খেয়েছি তবে এখানে কোনোদিনও খাই নি।"
আমি অর্ডার কনফার্ম করে সিনথিয়ার সাথে আলোচনায় ফিরে এলাম।
"স্যার‚ আপনার বাবা-মা এখানে থাকে না?"
"না‚ উনারা নীলফামারীতে থাকেন। বাবা সেখানকার একজন কৃষি অফিসার। আর আমি এখানে একটা ফ্ল্যাটে তিন বন্ধু মিলে থাকি।"
"ও... আচ্ছা। আপনার সেই বন্ধুরা‚ উনারা কি বিয়ে করেননি?"
"না‚ আপাতত সবাই সিংগেল। আর বিয়ে করলে কী তারা আমার সাথে এই ফ্ল্যাটে পড়ে থাকবে? তখন সবাই নিজ নিজ বউয়ের সাথে দিব্যি আরাম আয়েশ করে দিন কাটাবে।"
"হা হা‚ স্যার মাফ করবেন‚ তবে একটা কথা আর না বলে থাকতে পারলাম না। কলেজের অনেক মেয়েরাই কিন্তু আপনার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।"
"বলো কি! তাই নাকি।"
"হুম‚ তবে ভয়ে কেউ কিছু মুখ ফুটে বলতে পারে না।"

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now