অধ্যায়-২

104 14 1
                                    

নাবিলা দেখতে অনেক ফরসা‚ কিন্তু কোনোদিনও ওর দিকে সেরকমভাবে মুখ তুলে তাকাই নি। শুধু অন্যের মুখেই শুনেছি সে কথা। যে একবার ওর দিকে তাকায় সে নাকি আর নজর ফিরিয়ে নিতে পারে না। তাছাড়া মনের সৌন্দর্য উপভোগ না করে অনুভূতি জন্মাবো কিভাবে। সবার কাছেই তো ওর প্রশংসা শুনি‚ যেমন রূপে তেমন গুণেও নাকি সেরা। তবে কেন আমি ওকে নিজের অংশীদার সাব্যস্ত করতে পারছি না? কেন পারছি না ওকে আপন করে নিতে? আপন করবোই বা কি করে। যে মানুষটা সারাজীবন আপন ছিলো সে-ই তো সারাজীবন আপন থাকবে। অনুভূতিগুলোও কখনো জীবিত বা কখনো মৃত বলে মনে হয়। কিন্তু বেঁচে থাকে অবিকল।
"আরেকটু ভাত দিই।"
"আমি আর খাবো না। তুমিই বরং আরেকটু বেশি করে খাও যাতে সারারাত না খেঁয়ে থাকলেও বেঁচে থাকতে পারো।"
নাবিলা হঠাৎই ছোট্ট একখানা মিটমিটে হাসি দিয়ে সোজা আমার রুমের বারান্দায় চলে গেল। ঘরটা তো এখন শুধু আমার নয়‚ নাবিলারও ভাগ রয়েছে। আধিপত্য তো আরও একজনের ছিলো কিন্তু সে তো কাছে নেই। রয়েছে বহু বহু দূরে। তবে তার অনুভূতির ছোয়া এখনো এই ঘরে প্রতীয়মান। খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে ঘরে আধাশোয়া অবস্থায় একটা সিগারেট ধরালাম। লাল রক্তিম শিখায় চারদিকটা যেন ধোঁয়াসা হয়ে পড়ছে। ইশ! স্মৃতিগুলো যদি সিগারেটের ধোঁয়া কিংবা স্ফুলিঙ্গের মতো উড়ে যেত‚ পেন্সিল দিয়ে আঁকলে রাবার দিয়ে যেমন মুছে ফেলা যায় ঠিক তেমনই যদি মুছে ফেলা যেত। কতই না নিশ্চিন্ত হতাম তাহলে!
কত স্মৃতি আছে যা চাইলেও ভুলতে পারি না। আর ছোটবেলার শালার ছিল এক পড়াশোনা‚ চাইলেও মনে রাখতে পারতাম না। কথায় আছে‚ পরীক্ষায় না দেখানো ছাত্রটা যখন ভুল করে ডাক্তার হয়ে যায়‚ তখন সে নাকি রোগীকে বলে‚ আমি কষ্ট করে ডাক্তারি পড়েছি তো তোমাকে ওষুধের নাম কেন বলব? আমার ছেলেবেলাটা অনেকটা এরকমই কেটেছে। তখন তো প্রচুর বাকপটু ছিলাম। সিগারেটের অগ্নিশিখাটা প্রায় মাঝপর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে এম্বার আইল্যান্ডের 'আমব্রেলা' গানটা শুনতে লাগলাম। কি মধুর সুর গানটার‚ রিলিজ হওয়ার দিন লাইভ দেখেছি। আজ অব্দি এমন কোনও দিন পার হয়নি যে গানটা শুনি নি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সিগারেটটা শেষ হলো টেরই পেলাম না। ছোটবেলায় তো ভালোবাসা বলতে বাবা-মায়ের ভালোবাসাকেই বুঝেছি। চাকরিজীবনে এসে এই সাইকোলজিক্যাল থিওরিকে বুঝতে পারলাম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে‚ যাকে একবার দেখার জন্য মনটা ছটফট করে তার নামই ভালোবাসা। একবার নয় বারবার দেখেছি। তারপরও মনের সাধ মিটে নি। আর কোনো দিন মেটাতে পারবো কিনা জানি না। দেখি‚ বারান্দায় বসে মেয়েটা কি করছে।
বারান্দায় গিয়ে দেখলাম মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। ওর দৃষ্টি শুধু পাশের বাড়ির কতগুলো পায়রার দিকে। পায়রাগুলো কতই না স্বাধীন। ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি যেতে পারে। যখন ইচ্ছা যত খুশি ইচ্ছা সরিষার দানা মুখে তুলতে পারে। নাবিলার কপালে তো আর সেই সুখ লেখা নেই। হয়তোবা সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই মেয়েটা প্রতিদিন বসে থাকে। আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম‚
"নাবিলা‚ আ'ম সো সরি। আমি আসলে তোমার সাথে এমন রিউড বিহেভ করতে চাইনি। কি করবো বলো‚ তুমি তো জানো আমি রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। উল্টোপাল্টা বলে ফেলি। প্লিজ‚ তুমি কিছু মনে করো না‚ আর এভাবে অভিমান করে থেকো না।"
"কে বলেছে আমি অভিমান করে আছি। আমি কি তোমার উপর কখনো রাগ করে থাকতে পারি? আমি জানি রেগে গেলে তুমি হিংস্র জন্তুর মতো হয়ে যাও। নিজের অজান্তেই অনেক কিছুই বলে ফেল। এতে মাইন্ড করার মতো কিছু নেই। আর এটাও জানি তুমি আগে এমন ছিলে না। এমনকি কেন হয়েছো সেটাও ঠিক কলতে পারব না। তবে ওকে ভোলার জন্যই যে প্রতিদিন রাতে বারে গিয়ে গ্লাসের পর গ্লাস গলায় হুইস্কি ঢেলে আসো সেটা আমি নিশ্চিত। আরও কতদিন চলবে এভাবে। তোমার স্বাস্থ্যটাও তো ভেঙে পড়েছে।"
"তার মানে বাবাকে হুইস্কির ব্যাপারে তুমি বলেছো?"
"আমি কেন বলতে যাব। আমি কক্ষনোই তোমাকে বকুনি খেতে দিতে পারি না। তাছাড়া গতকাল রাতে তুমি যা করেছো তাতে বাবার রাগ হওয়াটা তো স্বাভাবিক।"
"কেন‚ কাল রাতে আবার কি করেছি?"
"অবস্থা দেখো তোমার! কাল রাতে বারে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলে। কত গ্লাস যে গলা দিয়ে নামিয়েছো তা জানি না। সেই অনেক রাত পর্যন্ত খাবার টেবিলে তোমার আসার অপেক্ষায় ছিলাম। এক পর্যায়ে চিন্তা হতে লাগলো....."
"তারপর?"
"পরে তোমার নম্বরে ফোন দিলাম‚ এক বারটেন্ডার ফোন ধরে বলল স্যার তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। একটু বেশিই ড্রিংক করে ফেলেছেন বোধহয়। তখন বাজে রাত তিনটা। অনেক কষ্টে একটা রিকশা জোগাড় করে তোমাকে উদ্ধার করে আনলাম। বাবাকে জানাতে চাইনি ব্যপারটা। তবে দরজার শব্দ শুনে উনি উঠে পড়েন।"
"এত রাতে তোমাকে কে বাহিরে যেতে বলেছিলো! সকাল হলেই তো ফিরতাম‚ এ আর এমন কি। যদি ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে তখন কি হতো?"
"বাহ-রে আমি হেল্প করলাম আর তুমি আমার সাথেই.... বেশ হতো যদি ছিনতাইকারীর কবলে পড়তাম। ছুরি দেখিয়ে আমার হাতের রিং, ইয়ার রিং, নেকলেস সবকিছু লুট করে নিয়ে যেত। আমি তো তোমার কাছে মূল্যহীন। আর তুমি‚ পিরোটা সময় শুধু ডিভোর্স নিয়েই মেতে থাকো। কি ভাবছো? ডিভোর্স পেলে তোমার সেই পুরোনো স্মৃতি ফিরে এসে পুনরায় সংসার বাধাবে? লাইফটাকে পুনরায় সাজিয়ে দেবে? সবকিছু কী এতই সোজা! আমিও ছাড়বার পাত্রী নই।"

নিস্তব্ধতাTempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang