অধ্যায়-৯

39 10 0
                                    

রুমে ফিরে এসে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে শুরু করলাম। বাবা শুনলে তো আমাকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। মা তো বটি দিয়ে কুপিয়ে যখম করবে আমায়। অমন রূপবতী বউকে রুম থেকে বের করে দিয়েছি। মেয়েটা কষ্ট পেয়ে এত রাতে কোথায় গেল সেটাও জানি না। বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ওকে খুঁজলাম। অবশেষে ড্রইং রুমে দেখা পেলাম। বোধহয় ক্ষাণিকটা সময়ের জন্য বাড়ির পিছনের বাগানে গিয়েছিলো। যদিও বাগানটায় দেখে আশার কথা আমার মাথায় ছিলো না। বেচারা লম্বা সোফাটার উপর কোঁকড়া লেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। এলইডি ক্লকের আবছা আলোয় ওর মুখটা ভেসে উঠেছে। সন্ধায় বেশ মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ওর ঠান্ডা লাগছে হয়তো। আমি রুমে গিয়ে একটা কাঁথা এনে ওর শরীরের উপর ঢেকে দিলাম। একেবারে নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে পাগলীটা। কিন্তু সকাল হলে কেউ যদি দেখে ফেলে যে বাড়ির বউমা সারারাত সোফায় ঘুমিয়েছে তাহলে তো আমার আর রক্ষে নেই। একটা বুদ্ধি আঁটলাম। আমার মোবাইলে ভোর ছয়টার অ্যালার্ম দিয়ে ছোফার পাশে রেখে দিলাম। বাবা সাধারণত সকাল সাতটায় উঠে। এক ঘণ্টা আগে উঠলে কেউ আর কিচ্ছুটি বুঝবে না। তারপর রুমে গিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। সেই উঠলাম সকাল নয়টায়। একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি। বাহ‚ কতই না ভালো মানুষ আমি! কি ট্যালেন্ট আমার!
ভোর সকালে নাবিলা উঠে নাস্তা রেডি করেছে। আজকে এমনিতেই দেরিতে উঠেছি। দশটায় আবার কলেজে যেতে হবে। এ মাসের স্যালারিটা কি কারণে যেন আটকে রয়েছে। সবারই একই অবস্থা। সামনেই তো পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী ভাতার সাথে স্যালারিটা তুললে মন্দ হয় না। তোয়ালে নিয়ে এবার সোজা গোসলে ঢুকে পরলাম। গোসল সেরে রুমে গিয়ে ভ্যাসলিন লাগাতে লাগলাম। ওনেক পুরোনো অভ্যাস। নাবিলা আমার রুমে হঠাৎ নাস্তা নিয়ে এসে হাজির। নাস্তা রেখে বলল‚
"কাল রাতে অনেক কিছুই বলে ফেলেছি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি‚ মুখে যা এসেছিলো তাই বলেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর হ্যাঁ‚ আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে রাজি। বাবা-মাকে আমিই নাহয় বলে দেব যে‚ আমি তোমার সাথে থাকতে পারছি না। তুমি বললে তাঁরা ব্যাপারটা ভালোভাবে নিবেন না।"
"কিন্তু... আমিই তো..."
নাবিলা আমার কথা না শুনে চোখদুটো ভিজে ভিজে অবস্থায় রুম থেকে বেরিয়ে গেল। জানি না এরপর কি করবে মেয়েটা। খাওয়ার শেষ পর্যায়ে মা ঘরে প্রবেশ করলো। এই সেরেছে! মা আবার কিছু জেনে গেল নাকি?
"কিরে‚ বউমাকে কিছু বলেছিস নাকি? সকাল থেকেই কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। মন খারাও করে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছে না।"
"আমি আবার কি বলতে যাবো।"
"আমি নিশ্চিত যে তুই কিছু বলেছিস। নইলে মেয়েটা সকাল থেকে এমন করে থাকতো না।"
"সেরকম কিছুই হয়নি মা। তুমি বুঝতে পারছো না কেন?"
"আমায় বোঝাতে এসেছিস! আমি তোর জন্মদাতা মা। তুই কখনোই শোধরাবি না‚" বলে মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। বাহিরে যে কি মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে‚ সে আর বলতে। ছাতা নিয়ে গেলেও ভিজে যাবো। খাওয়া শেষে নাবিলা আলমারি থেকে একটা রেইন কোর্ট বের করে দিয়ে বলল‚
"আজকে বরং এটা পড়ে যাও। এ বৃষ্টিতে শুধু ছাতা নিয়ে গেলে ভিজে যাবে। তখন আবার দুই-তিনটা দিন জ্বর নিয়ে পড়ে থাকতে হবে।"
"পড়ে থাকবো কেন? ওষুধ খাবো। তাহলেই জ্বর ঠিক হয়ে যাবে।"
"প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। আর ওষুধ খেলেও অত সহজে জ্বর নেমে যায় না।"
"তো কিভাবে জ্বর সারবে?"
"স্যুপ কিংবা লিক্যুইড জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। মা তো স্যুপ বানাতে জানেন না। আবার আমার হাতের স্যুপও তো তুমি খেতে চাইবে না তাইনা।"
"এটাই বোধহয় সায়েন্স‚" আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম।
"কিছু বললে নাকি?"
"না‚ না। আমার আবার কলেজে লেট হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিই।"
"প্রতিদিন তো লেট করেই যাও‚ আজকেও নাহয় একটু.... "
"একটু কি?"
"আমি না মা বলছিল। আরেকটু পরে বৃষ্টি থেমে গেলে তারপর যেতে।"
"তারপর যখন চাকরিটা চলে যাবে তখন মা বসে থেকে খাইয়ে দেবে তাইতো।"
"এমনভাবে কেন বলছো। উনি তো তোমার মা-ই হন। আমি নাহয় পরের মেয়ে। অন্তত ওনার কথা তো শোনো।"
সারাজীবন তো অনেককেই কথা শুনিয়েছি। এবার না হয় নিজে একটু শুনলাম। বৃষ্টি কিছুটা থেমেছে। মিনিট দশেক দেরিতে গেলাম কলেজে। রাস্তাতে পানি জমেছে। কলেজের মাঠটাও পানিতে ভরে গিয়েছে। জুতার বদলে বাধ্য হয়ে স্লিপার পড়ে বের হয়েছি। হাঁটু পর্যন্ত ভিজে গিয়েছে। কলেজের সামনের রাস্তাটা একটু সংস্কার করা দরকার। বলা বাহুল্য একটু নয় অনেকখানিই সংস্কার করা প্রয়োজন। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। ক্লাসরুমে ঢুকে দেখলাম দশ-বারো জন উপস্থিত। কি ফাঁকিবাজ এরা! বৃষ্টির নাম নিলেই আর আসে না। আর যারা এসেছে তারা আড্ডাবাজি করার জন্য এসেছে। ফেসবুক‚ ইন্সটা‚ হোয়াটসঅ্যাপ‚ স্ন্যাপচ্যাট সবই এদের পড়াশোনা শেষ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে কি করে খাবে কে জানে? আজকে খামখো লেকচার দিয়ে কাজ নেই। ফ্রেন্ডলি হয়ে গল্প বাঁধালাম ওদের সাথে। কতই না সুখী ওরা‚ ওদের গল্প শুনলে তা ঠিকই বোঝা যায়। একেকজনকে দেখলে মনে হয় রাজদরবারে বসবাস করে। কলেজে আসে না অথচ প্রাইভেট-কোচিং এ গিয়ে ঠিকই আড্ডা মারে।

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now