অধ্যায়-১৭

35 9 0
                                    

"তুই বোধ হয় প্রসঙ্গ পালটানোর চেষ্টা করছিস। চাইলে আমার সাথে সবই শেয়ার করতে পারিস। কথা দিচ্ছি কাউকেই বলব না। এমনকি বেকুব নাজমুলকেও না। তুই জাস্ট বল নামটা কি?"
"শোন তাহলে‚ ওর নাম নীলা। আমারই কলেজের স্টুডেন্ট। প্রথম বর্ষে পড়ে। আর ছয় মাস পড়েই দ্বিতীয় বর্ষে উঠবে।"
"ওহ মাই গড! প্রেমটা তাহলে শিক্ষক-ছাত্রীর পর্যায়ে চলে গিয়েছে।"
"ধুর! এসব কি প্রেমের কথা বলছিস। আমার শুধু ভাল লেগেছে তাই তোকে বললাম।"
"হুম‚ বুঝে গিয়েছি দোস্ত‚ তুই রাত জেগে লেপের তলায় ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকিস কেন। সারারাত হোয়াটসঅ্যাপে ওর সাথে চ্যাটিং করিস তাই না?"
"আরে না... তুইও না মাত্রাতিরিক্ত কথা বলিস।"
"ব্যবসায়ীয় ছেলে আমি‚ চোখে দেখেই ক্রেতার মনোভাব বুঝতে পারি।"
"ওভারস্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করিস না"
"চাকরি করে‚ এখন আবার প্রেমিকা জুটিয়ে তুই পুরোই পাল্টে গিয়েছিস।"
"তবে রে...‚" বলতেই মন্টু চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চটজলদি রান্নাঘরে ছুটে গেল।
নীলার সাথে সম্পর্কটা দিন দিন ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করল। আমিও ছিলাম কলেজের সবচেয়ে তরুণ প্রফেসর। নজর তো আমার দিকে থাকবেই। তবে মুখ ফুটে বলার সাহস কারও ছিল না। কলেজ শেষে নীলার সাথে গল্প করতাম‚ ক্ষেত্রবিশেষ ওকে রেঁস্তোরায় খেতে নিয়ে যেতাম। কতই না মিষ্টি কণ্ঠে আমার সাথে কথা বলত মেয়েটা। ও অবশ্য কলেজের হোস্টেলেই থাকত। মাসে দু-একবার করে মা-বাবা ওকে দেখতে আসত।
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফলাফল বের হল। এদিন আমার আর ক্লাস ছিল না বিধায় কলেজে শুধু হাজিরা দিয়েই চলে এলাম। বিকেল বেলা চা পান করতে করতে নীলাকে একটা টেক্সট করলাম। টেক্সটে ওর ফলাফল সম্বন্ধে জানতে চাইলাম। মেয়েটা বলে কিনা সারপ্রাইজ আছে। এরপর ওকে সবুজের মোড়ের সেই ক্যাফেটাতে আসতে বলি। সেখানে ওর রেজাল্ট কার্ড দেখে নিজের চোখকে আর বিশ্বাস করতে পারলাম না। মেয়েটার সাথে রাতভর চ্যাটিং করি‚ দিনে দুপুরে ফোন করে গল্প করি তারপরও পড়াশোনাটা ধরে রেখেছে। রেখেছে আর বলতে‚ ক্লাসের মধ্যে সবথেকে বেশি নম্বর পেয়েছে। বিষয়খানা বড্ড বিষ্ময়কর। আমারই তো গার্লফ্রেন্ড! উফ্‚ ছাত্রীকে গার্লফ্রেন্ড বলে ফেললাম। তথাপি‚ প্রেমিক প্রেমিকা হতে কোনো বয়স লাগে না। সে হিসেবে আমার আর নীলার বয়সের ফারাগ মাত্র আট বছর। সে আর এমন কি!
দিনকে দিন কলেজে আমার নাম‚ সুনাম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। আমি নাকি অনেক যত্নসহকারে পড়াই‚ ভাল ভাল লেকচার দিই আর এভাবে আরও অনেকেরই মন জয় করে ফেলেছি। অবশেষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কলেজের বেস্ট প্রফেসর হিসেবে আমি স্বীকৃতি পেলাম। বিষয়টা কম আনন্দের নয়। একটা ছোটখাটো ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমাদের কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের ভোটে আমি বেস্ট প্রফেসর হিসেবে নির্বাচিত হই। কলেজ মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তা ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে আমি ভেঙে দিয়েছি টানা পাঁচ বছর বেস্ট প্রফেসরের স্থানে থাকা অঞ্জনা ম্যাডামের রেকর্ড। অঞ্জনা ম্যাডামের চাকরিজীবন প্রায় শেষ। আমাদের ব্যাচেও তিনি ক্লাস নিয়েছেন। বেশ মাধুর্যতার সাথে ইংরেজি ক্লাস নিতেন। আর আমি সেই ম্যাডামের পাকা ধানে মই ঢুকিয়েছি।
ঘোষণা দেওয়ার সময় সকলেই হাততালি দিতে লাগল। নীলাকে দূর থেকেই দেখতে পেলাম। ড্যাবড্যাবে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মুখে সেই মিষ্টি হাসি। আসলে আমাদের সম্পর্কটা সেভাবে কেউই জানে না। কারণ ক্লাস চলাকালীন আমাদের মাঝে স্বাভাবিক কথাবার্তাই হয়। আর এসব কথা যদি উপরমহলে চলে যায়‚ তবে যে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। যদিও হোস্টেলে ঢোকার অনুমতি আমাদের সব প্রফেসরদের ছিল। তবে প্রতিদিন মেয়েদের হোস্টেলে ঢুকলে লোকে কি ভাববে? বলবে যে‚ লুচ্চামি করার আর জায়গা পাস না! গণধোলাই খাওয়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে সেখানে।
বাইরে থেকে এসে জামাকাপড় পাল্টে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লাম। হাফপ্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে নিউজফিড ঘুরতে লাগলাম।
"নাজমুল‚ এই নাজমুল!"
"হুম বল। বাড়ি ফিরেই এত চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলি কেন?"
"টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচটা দে তো।"
"কিসের ম্যাচ? কোন দেশের খেলা চলছে?"
"আরে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ চলছে। আজকে পঞ্চম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা।"
"আমি এসব ক্রিকেট খেলা দেখি না।"
"ধুর শালা! তুই জীবনে মানুষ হইলি না। যা ভাগ এখান থেকে।"
"চাকরি পেয়েছিস দেখে ভাব বেড়ে গিয়েছে অনেক। দিন আমারও আসবে সেদিন সব্বাইকে মনে করিয়ে দেব এই নাজমুল জিনিসটা আসলে কি?" বলে নাজমুল খানিকটা মুখ গোমড়া করে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ল।
এমন সময় নীলার ফোন এলো। আমি কলব্যাক করেই জিজ্ঞেসা করলাম‚
"হ্যালো সুইটহার্ট‚ কি করছো এখন?"
"এইতো পড়াশোনার ফাঁকে তোমায় একটু মিস করেছি। তাই ফোন করলাম। আমি কি কোন ভুল করে ফেলেছি?"

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now