অধ্যায়-২২

33 8 2
                                    

বাড়িতে আমি আর নীলা। আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর সেই জ্যোৎস্না রাতের কোমল স্নিগ্ধ মুখমন্ডলের দিকে‚ লিপস্টিকবিহীন ঠোঁটজোড়ার দিকে‚ মাশকারা ছোয়ানো চোখদুটোর দিকে। আইল্যাশ লাগানো নেই। তবুও চোখের পাপড়িগুলো অনেক ঘন এবং তীক্ষ্ণ। প্রতিটা পাপড়িতেই যেন মায়া লুকিয়ে রয়েছে। লুকিয়ে রয়েছে একজন বালিকা থেকে একজন নারী হয়ে ওঠার গল্প। নীলার রোগাপাতলা দেহখানা এখন অনেকটা ম্যাচ্যুউরিটি প্রাপ্ত হয়েছে। কথাবার্তা আর চালচলনেও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। তবে পরিবর্তন হলো প্রকৃতির ধর্ম; অস্বাভাবিক কিছু না। সেই সাথে নীলার কোমল গালগুলো বেশ গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে।
আইস্ক্রিমগুলো আনবক্সিংয়ের সময় হঠাৎই নীলা হুঙ্কার দিয়ে উঠলো‚
"টিভির রিমোট টা কোথায়? জলদি টিভিটা অন করো।"
"কেন?"
আমি ওকে রিমোটটা দিতেই যাচ্ছিলাম তবে তাড়াহুড়ো করে মেয়েটা ছিনিয়ে নিয়েছে।
"আজ উইম্বলডনের ফাইনাল।"
"এহ রে... আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।"
নীলা টিভিটা অন করল। গ্রাস কোর্টে নোভাক জোকোভিচ আর রজার ফেদেরারের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। ৭-৬‚ ৬-৭‚ ৬-৪ গেমে জকোভিচ এগিয়ে। পরের সেটে জোকোভিচ জিতলে কেউ আর তার গ্রান্ড স্ল্যাম আটকাতে পারবে না। তবে রজার ফেদেরারও ছাড়বার পাত্র নয়। ফেদেরার আজ জিতলে সে ইতিহাসের সর্বাধিক আটটা উইম্বলডন জয়ের রেকর্ড গড়বে। তবে নীলার সেই স্বপ্নের খেলোয়াড় হলো রাফায়েল নাদাল। নাদাল তো দ্বিতীয় রাউন্ডেই ডাস্টিন ব্রাউনের কাছে বিদায় নিয়েছে। তাই নীলা কিছুটা উদাসমনে আমার সাথে খেলা দেখছে। তবে যথাযথ উপভোগ করারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও। গতকাল নারী এককে গ্যাব্রিন মুরুগুজাকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে সেরেনা উইলিয়ামস। এ নিয়ে আমি আর মন্টু পাঁচশো টাকা বাজি ধরেছিলাম। মুরুগুজার পক্ষে থাকায় অবশ্য আমাকে হার মেনে নিতে হয়। আমি একজন টেনিস ফ্যান বলে নীলাও ভালো একজন সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে।
"কি ব্যাপার‚ নীলা। আইস্ক্রিমের স্কুপটা হাতেই ধরে রেখেছো। বুঝতে পেরেছি‚ আমি না খাইয়ে দিলে তুমি খাবে না তাহলে।"
"তুমিও না... বেশ দুষ্টু হয়েছো‚ আমি আগে তোমায় খাইয়ে দিবো। 'হা' করো।"
এবার আমার পালা‚ নীলাকে খাইয়ে দিবো বলে খুব উত্তেজনা কাজ করছে মনের ভিতরে।
"দেখে নিও সুইটহার্ট‚ একদিন আমরাও সেখানে খেলা দেখতে যাবো। উইম্বলডনের সেই বিখ্যাত স্ট্রবেরি-ক্রিমটাও চেখে দেখবো।"
তবে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় বলে একটা প্রবাদ আছে। নীলার ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো। আমার আর খাইয়ে দেওয়া হলো না।
"সরি‚ আসলে ফোনটা..."
"সমস্যা নেই‚ ফোনটা রিসিভ করো।"
ফোনটা রিসিভ করতেই নীলার সুস্থ সবল দেহটুকু হঠাৎই যেন পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল। চোখের পলকও ফেলছে না। শুধুমাত্র ওর সেই চিরচেনা কোমল স্নিগ্ধ গাল বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। অনেক আটকাবার চেষ্টা করলাম কিন্তু একটাবারও পিছন ফিরে তাকালো না। বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশায় চেপে সোজা বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। কি এমন হলো যে‚ ওকে এভাবে চলে যেতে হলো? কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না তো আবার? ড্রইং রুমের ডিভানটায় চিত পটান হয়ে শুয়ে থাকলাম। কত স্বপ্নই না বুনেছিলাম আর আজ কি হলো! ঘণ্টাখানেকের মাথায় টিভিতে চোখ পড়লো‚ নোভাক জোকোভিচ শিরোপা হাতে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে।

নিস্তব্ধতাTempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang