অধ্যায়-১১

47 10 1
                                    

তকতকে ঝকঝকে চেহারার একজন ওয়েট্রেস এসে অর্ডার করা তিন কাপ ব্ল্যাক কফি দিয়ে গেল। মেশিন রায়হান কিছুক্ষণ ধরে চুপ আছে। মন্টু আমার উদ্দেশ্যে বলল‚
"দোস্ত‚ কিছু মনে করলি না তো? জানি‚ তুইও আগে এসকল মুহূর্ত উপভোগ করেছিস। দেখ ভাই‚ আমি কিন্তু তোকে পুরোনো কথা মনে করিয়ে কষ্ট দিতে চাইনি।"
"ব্যাপার না। কিরে রায়হান‚ সেই তখন থেকে দেখছি তুই চুপ করে আছিস।"
"আমি আর কি বলবো‚ তোরা তো বউ নিয়ে মাতামাতি করছিস আর আমাকে দেখ‚ এখনো বিয়েই করি নি।"
"তুই তো এখনো পড়াশোনা নিয়েই মেতে আছিস। কে জানত যে পরীক্ষার হলে পরের খাতা দেখে লেখা ছাত্রটা আজ পিএইচডি করতে বিদেশে যাবে।"
"কি বোঝাতে চাস‚ আমি দেখে লিখতাম! তোরাই তো উল্টো আমার খাতা টেনে-হিচড়ে নিয়ে দেখে লিখতিস।"
"আচ্ছা বাবা হয়েছে। এভাবে চটে গেলে চলবে না। কলেজে উঠে পড়াশোনায় যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলি তা দেখে আমি শিহরিত।"
"হুম তুই আর মন্টুও তো কম পড়াশোনা করিস নি। তাই তো আজ সবাই একসাথে কফি খাচ্ছি।"
"কফি খায় না রে পাগল‚ কফি পান করতে হয়। কিরে‚ তুই কি সত্যিই পিএইচডি করতে যাবি‚ নাকি আমার স্টুডেন্টরা ওটার পূর্ণরূপ যেটা বলে পিৎজা হোম ডেলিভারি সেটা করতে যাবি।"
বেশ জোরেশোরেই হেসে দিল রায়হান। মন্টু বলল‚
"বয়স তো অনেক এগিয়েছে। বিয়েটা তো অন্তত করে ফেল। এত টাকা কামাই করে কাকে খাওয়াবি? তার চেয়ে রিল্যাক্স মুডে বিয়ে করে ফেল। বিয়ে করলেই তো জীবনের আসল মজা বুঝবি। জীবনের মর্ম উপলব্ধি করতে পারবি।"
আমি মনে মনে বলতে লাগলাম‚
"এই বিয়েই তো আমার জীবনে যত দুর্দশা বয়ে এনেছে। না পাড়ছি ওর স্মৃতি ভুলতে‚ না পারছি ওর জায়গায় নাবিলাকে স্থলাভিষিক্ত করতে।"
"পিএইচডি টা কমপ্লিট করলেই দোস্ত আমার প্রমোশন হয়ে যাবে। তারপর না হয় ভালো একখানা ভাবি যোগাড় করে দিস‚" রায়হান বলল।
আরও কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর সবাই কফি হাউস ত্যাগ করে রাস্তায় একসাথে এগোতে লাগলাম। মন্টু আমায় ও রায়হানকে ওদের বাড়িতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ দিল। ব্যাচেলর রায়হান আর দাওয়াত দেওয়ার সাহস করল না। বাড়িতে বউ না থাকলে এসব রান্নাবান্না করার ঝামেলা কে-ই বা নিতে চাইবে। আমিও ওদেরকে আমাদের বাসায় আসার নিমন্ত্রণ জানালাম। মন্টু বলল‚
"দোস্ত‚ ভাবিকে সেই বিয়ের সময় দেখেছি। পরে একটাদিনও দেখা হয় নি এমনকি ভাবির হাতের রান্নাও চেখে দেখিনি।"
রায়হানও একই সুরে বলে উঠল‚
"হুম‚ শালা প্রতিদিন বউয়ের হাতের ভালো ভালো রান্না খেয়ে আমাদের কথা ভুলে যাস। আন্টিকে কিন্তু সব বলে দিবো।"
"কি যে বলিস না‚ মা বাড়িতে নেই। তাছাড়া তোরা যেকোনো সময়ই আসতে পারিস। চাইলে এখনই।"
"না‚ থাক। অন্য একদিন আসব। ভালো থাকিস তোরা‚" বলে মন্টু প্রস্থান ঘটালো। রায়হান আমার সাথে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে নিজ গন্তব্যে ফিরে গেল। অবশেষে সন্ধ্যা সাতটায় বাড়ি ফিরলাম আমি।

নিস্তব্ধতাWhere stories live. Discover now