অধ্যায়-১৪

37 9 0
                                    

কখন যে ড্রইং রমে ঘুমিয়ে পড়েছি‚ নিজেই ক্ষাণিকটা চমকে উঠলাম। নাবিলা এসে আমাকে ডেকে তুলল‚
"উঠে পড়ো‚ সকাল হয়ে গিয়েছে তো।"
"কি‚ কখন? কিভাবে!" আচমকা হুঙ্কার দিয়ে উঠলাম।
"বেশ ভালো সপ্ন দেখেছো মনে হচ্ছে?"
আমি ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে তোয়ালে নিয়ে সোজা গোসলে ঢুকলাম। মাথায় শ্যাম্পু ঢালার পর মনে পড়ল আজ দাঁত ব্রাশ করা হয় নি। গোসল সেরে টাওয়েল পরিহিত অবস্থায় দাঁত মাজতে লাগলাম। অনলাইন থেকে নতুন একটা ইলেকট্রিক ব্রাশ কিনেছিলাম। একেবারে ফালতু‚ তার চেয়ে বরং আমার অ্যানালগ ব্রাশ দিয়েই ভাল করে দাঁত মাজা যায়। মুখ ধোয়ার পর কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে খেতে বসলাম। খাবারে আছে সবজি খিচুড়ি। আহ্ কি ঘ্রাণ বেরোচ্ছে খিচুরি থেকে। মা তো বাড়িতে নেই‚ তাহলে অবশ্যই নাবিলা খিচুড়িটা বানিয়েছে। কেননা পাশের বাড়িগুলো থেকে খিচুড়ি পাঠালে ঘ্রাণ তো দূর‚ খিচুড়ির বিদঘুটে চেহারা দেখেই খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। নাবিলা রান্নাঘর থেকে এসে আমার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ল। ওর হালকা গোলাপি-ফর্সা গালে ছোট্ট একটা পিম্পল দেখা যাচ্ছে।
"খিচুড়িটা কেমন হয়েছে বললে না তো?"
"ভালো।"
শুধু ভাল বলায় মেয়েটার মন ভরে নি। ওকে দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।
"অসাধারণ হয়েছে‚ মায়ের সাথে রান্নাঘরে থেকে থেকে রান্নার হাতটাও পাকাপোক্ত হয়েছে দেখছি।"
মেয়েটার মনে এবার খুশির একটা ঝলক দেখতে পেলাম। সেই সাথে আমার খাওয়া শেষে মুচকি হেসে বলল‚
"আরেকটু খিচুড়ি এনে দিচ্ছি। দেখে বোঝাই যাচ্ছে তোমার পেট ঠিকমতো ভরে নি। পেট ভরে না খেলে স্টুডেন্টদের আবার উল্টোপাল্টা পড়ানো শুরু করে দিবে।"
খিচুড়ির স্বাদ দেখে আমি আর না করতে পারলাম না। একেবারে বেশি করে খেয়ে ফেলেছি। তবে পেট খারাপ হলে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও ভাল হবে না। খেয়েদেয়ে বের হলাম সেই স্মৃতিবিজড়িত কলেজের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে নাবিলা একা। সারাদিন বসে থেকে মেয়েটা কি করে জানি না। হয়ত আমার অজান্তে আরও কয়েকটা ক্যানভাসে আমারই ছবি আঁকে। তবে গল্প হলেও সত্য যে‚ নাবিলা অন্যের ছবি মন দিয়ে আঁকে ঠিকই তবে নিজের পোর্ট্রেটটা একেবারে ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চাদের মত আঁকে। তবে কলেজ শেষ করে আজ কিছুটা নয় বলতে গেলে অনেকটা ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম।
রাস্তায় মোবাইলে এক অভিভাবকের সাথে কথা বলছিলাম। উনার মেয়ের বেতন সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল। কথা শেষ করে। বাসায় গিয়ে কলিং বেলটা চেপে ধরলাম। বরাবরের মতো নাবিলা দরজাটা খুলে দিল। ওকে দেখার পর আমার সেন্সটাই উড়ে যেতে বসেছে! বাড়ির বউয়ের এ কী অবস্থা? স্কিন ফিট করা জিন্স আর টপস পড়ে দাড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে। টপসটা খানিকটা শর্ট হওয়ার কারণে নাভি ও পেটের কিছু অংশ বেরিয়ে আছে। ওর গোলাপি পেটের কোমল নাভিটুকু দেখে‚ আমি আর চোখ সরাতে পারলাম না। এমনভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি যে আমার মুখ থেকে আর কোন কথাই বেরোতে পারছে না। নাবিলা এবার মোবাইলটা রেখে বলল‚
"কি খবর সুইটহার্ট‚ কলেজ থেকে আজ অমন জলদি ফিরে এলে যে?"
আমি দাঁড়িয়ে থেকে মাথা চুলকাতে লাগলাম।
"দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে এসো এবার।"
আমি আমার কথা বলার সক্ষমতা রীতিমতো হারিয়ে ফেলেছি। মনে মনে শুধুই ভাবছি‚ কি করছে মেয়েটা! মা-বাবা এসব দেখলে কি ভাববেন? মেয়েটা কি তাহলে এবার সত্যিই আমার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে। আমি তা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। এসময় দুর্বল হলে চলবে না। একটু ভিতরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। এরপর নিজেকে শক্ত রেখে মনে যত ক্ষোভ ছিল সবগুলোরই বহিঃপ্রকাশ করে ফেললাম‚
"তোমার মাথাটা কি সত্যিই এবার গেল নাকি! আর এসব কি জামাকাপড় পড়েছ?"
"কেন? তুমি তো এসব জামাকাপড় পড়ে থাকাকেই পছন্দ কর। অ্যানালগ যুগকে তো তুমি ফেলনা মনে কর। তাই নাহয় এখন থেকে পাশ্চাত্য যুগেই প্রবেশ করলাম।"
আমি রেগেমেগে হিংস্র জন্তুর মতো চেঁচিয়ে উঠলাম‚
"পেয়েছ টা কি! মশকরা করছ আমার সাথে সাথে। একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো‚ শত চেষ্টা করেও তুমি নীলার মত হতে পারবে না। You haven't any rights to compete with her. এই আমি বলে রাখলাম।"
"ওহ! তাহলে তোমার জীবনে প্রবেশ করা প্রথম নারীই হচ্ছে নীলা ম্যাডাম।"

নিস্তব্ধতাDonde viven las historias. Descúbrelo ahora